ক্ষমতাসীন দলের অন্তত দুই ডজন প্রভাবশালী নেতা-নেত্রীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন নরসিংদী যুব মহিলা লীগের আ’লোচিত ও বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ।
রি’মান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার পাপিয়া নিজেই এ তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ত’দন্তসংশ্লিষ্টরা।
পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে তারা জানান, ওইসব নেতা-নেত্রীকে নিয়মিত ‘মোটা অঙ্কের’ অর্থও দিতেন তিনি। যার বিনিময়ে নরসিংদী মহিলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদও ভাগিয়ে নেন।
ওই নেতাদের মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপি রয়েছেন। কয়েকজন সাবেক এমপিও তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। এসব নেতার ব্যাপারে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিত করেছে ত’দন্তকারী সংস্থা।
ত’দন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়ার অ’প’রাধ জগতের শুরু থেকে শেষ সব উঠে আসছে। ধানমন্ডিতেও পাপিয়ার আরেকটি আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে।
আবাহনী ক্লাবসংলগ্ন একটি ভবনের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানেও সুন্দরীদের পাঠাতেন পাপিয়া। খদ্দের ছিলেন নেতারা। তাছাড়া নেতাদের জন্য ঢাকার একটি সরকারি মহিলা কলেজের কতিপয় ছাত্রী পাপিয়ার মাধ্যমে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন।
জানতে চাইলে র্যা’ব-১-এর পরিচালক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল একটি দৈনিককে বলেন, ‘পাপিয়ার কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো ব্যাপক অনুসন্ধান চালাচ্ছি। পাপিয়ার বেশকিছু সহযোগী আছে, তারা এখনো ধ’রাছোঁয়ার বাইরে আছে। তাদের আইনের আওতায় আনতে আম’রা কাজ করছি।’
ত’দন্তসংশ্লিষ্টরা আরও জানান, পাপিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি গ্রে’প্তার হওয়ার পরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার অন্ধকার জগতের নানা তথ্য। অল্প সময়ের মধ্যে জানাজানি হয় তার আসল চরিত্র। পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী অ’প’রাধ কর্মকা-ের তথ্য বেরিয়ে আসায় তোলপাড় চলছে দেশ-বিদেশে।
বিশেষ করে পাপিয়ার মোবাইল ফোনে থাকা ভি`ডিওগুলো দেখে হতবাক হয়েছেন পু’লিশ ও র্যা’ব কর্মক’র্তারা। ওইসব ভি`ডিওতে প্রভাবশালী নেতা, ব্যবসায়ী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় কর্মক’র্তা ও অন্যান্য সংস্থার কর্মক’র্তাদের ‘অ’নৈতিক দৃশ্য’ আছে। ওইসব ভি`ডিওর মধ্যে কিছু ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
র্যা’ব ও পু’লিশের দুই কর্মক’র্তা বলেন, ভি`ডিওগুলো দিয়ে লোকজনকে ব্ল্যাকমেইল করে ‘মোটা অঙ্কের’ অর্থ কামিয়েছেন পাপিয়া। পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আবার মাঝেমধ্যে পাপিয়াকে একটানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া তার শেল্টারদাতাদের নাম বলেছেন। তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেত্রী। তাদের আশকারা পেয়েই পাপিয়া বেপারোয়া জীবনযাপন করা শুরু করেন। তিনি কাউকেই পরোয়া করতেন না।
তারা বলেন, নরসিংদীতে পাপিয়ার চেয়ে আরও বলিষ্ঠ ও স্বচ্ছ নেত্রী আছেন। কিন্তু তারা কারোর সহায়তা পায়নি বলে কমিটিতে আসতে পারেননি। পাপিয়া প্রভাবশালীদের ‘ম্যানেজ’ করে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি ভাগিয়ে নেন। তারপর তিনি আরও ভংকর হয়ে ওঠেন। তার স্বামী সুমন চৌধুরীও অ’প’রাধ কর্মকা-ে পিছিয়ে নেই। আশ্রয়দাতা নেতাদের মধ্যে নরসিংদীর বেশ কয়েকজনও রয়েছেন।
বিমানবন্দর থানা পু’লিশের এক কর্মক’র্তা বলেন, ‘পাপিয়ার মোবাইল ফোন অ`শ্লীল ভি`ডিওতে ঠাসা। পাপিয়া আমাদের জানিয়েছেন, ত`রুণীদের সঙ্গে অ’নৈতিক কাজ করার সময় ভি`ডিও করা হতো। অ’নৈতিক কাজ শেষ হওয়ার পর পাপিয়া রুমে প্রবেশ করে ভিআইপি খদ্দেরদের ভি`ডিও দেখিয়ে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ দাবি করতেন। লজ্জায় কেউ মুখ খুলত না। এসব ভি`ডিওতে থাকা সাতজন উঠতি বয়সী ত`রুণী র্যা’বকে বিস্তারিত জানিয়েছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে পু’লিশের ওই কর্মক’র্তা বলেন, ‘যেসব শেল্টারদাতার নাম এসেছে তারা খুবই প্রভাবশালী। তারা সরকারদলীয় নেতা-নেত্রী। আমা’র জানামতে, যাদের নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিত করা হয়েছে।’