dr_kamal

ড. কামালের আহবানে ২২ সেপ্টেম্বর এক মঞ্চে উঠবেন নেতারা

সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকারবিরোধী জোটগুলোর অভিন্ন কর্মসূচি আসছে শিগগিরই। জোটগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরিতে নিজেদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে যে তৎপরতা চালিয়ে আসছে, তা ইতোমধ্যে বহুদূর এগিয়েছে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পুরো প্রক্রিয়া প্রকাশ্য রূপ নিতে পারে। জানা গেছে, আদর্শগত অমিল এবং দাবির ভিন্নতা থাকায় জোটগুলো যদি শেষ পর্যন্ত এক মঞ্চে নাও আসে, নির্বাচন ইস্যূতে সবাই অভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। যা একটি পর্যায়ে গিয়ে ‘বৃহত্তর নির্বাচনী মোর্চা’য় রূপ নিতে পারে।

জানা গেছে, ’৯০ এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ধারণা থেকেই তিন বা এর অধিক জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ অথবা অক্টোবরের শুরুতে অভিন্ন কর্মসূচিতে এই জোটগুলো আন্দোলন শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দীর্ঘদিন ধরেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সিপিবি, বাসদসহ বেশ কয়েকটি দল নিয়ে রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা। ক’দিন আগে যুক্তফ্রন্ট এবং গণফোরাম মিলে গঠন করছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। একাধিক সূত্র বলছে, নানা রকম শর্ত এবং প্রশ্ন এড়াতে তিনটি জোট আলাদা অবস্থান থেকে অভিন্ন কর্মসূচিতে যুগপৎ আন্দোলন পরিকল্পনার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত : এরশাদের পতনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দল, বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দল এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, জাসদ সমন্বয়ে ৫ দলীয় বাম জোট গঠিত হয়েছিল। ওই সময় জামায়াতে ইসলামী তিন জোটের কোনটিতে না থাকলেও তিন জোটের কর্মসূচি হুবহু অনুসরণ করেছিল। ’৯০ এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শেষ ভাগে তিন জোট ১৯ দফার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল।

এবারও একই ভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জোটগুলো ঐক্যবদ্ধ হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

যুক্তফ্রন্টের সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান মান্না নয়া দিগন্তকে বলেছেন, ঐক্য গড়ার পথে অনেক দূর এগিয়েছি আমরা। ঐক্য গড়ার সময় প্রস্তাব নিয়ে, দাবি নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়, আমাদের তেমন হয়নি। কারণ স্বৈরতন্ত্রের থাবা এতো তীব্র যে মানুষের মুক্তির আকাঙ্খা এখান থেকেই জোরালো হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের দাবিতে আমরা যুগপৎভাবে আন্দোলন করবে। এটি এক পর্যায়ে গিয়ে নির্বাচনী ঐক্য গড়াতে পারে।

গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, আমাদের প্রথম লক্ষ্য হলো, একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে আমরা এক সঙ্গে আন্দোলন করতে চাই। এক মঞ্চ হলে ভালো হয়, তা না হলে যে যার অবস্থান থেকে আমরা অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলন করতে পারি।

বাম গণতান্ত্রিক মোর্চার এক নেতা বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আমরা ইতোমধ্যেই আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছি। এই ইস্যুতে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করতে পারি। এ নিয়ে কথা বার্তা হচ্ছে।

জানা গেছে, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে খুব শিগগিরই বাম ফ্রন্টের একটি বৈঠক হবার কথা আছে। বিএনপির সঙ্গেও ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জোটের বৈঠক হবেছ। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা স্পষ্ট হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। আমরা আশা করছি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ঐক্য হবে। সবাই মিলে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের সামনে শিগগরিই যেতে পারবো বলে আশা করছি।

এদিকে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এবং এ দাবির পক্ষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার অংশ হিসেবে আগামী ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ আহ্বান করেছেন ড. কামাল হোসেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে এ সমাবেশের মাধ্যমে বিশাল শোডাউন করতে চান প্রবীণ এই আইনজীবী। সমাবেশ থেকে সরকারকে সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হবে।

জানা গেছে, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আসম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এ সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। কয়েকটি বাম দলের শীর্ষ নেতারাও এতে উপস্থিত থাকতে পারেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাথে জড়িত নয় সুশীল সমাজের এমন একটি অংশও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নড়েচড়ে বসেছে। তারাও নিজ নিজ পরিমন্ডলে একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের গ্রাউন্ড তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখছেন।

সুশীল সমাজের এ অংশটির দেশে-বিদেশে নিরপেক্ষ একটি ভাবমূর্তি রয়েছে। যারা সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন সময়ে বিরাগভাজনও হয়েছেন। এরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকেও ‘বিতর্কিত’ হিসেবে দেখেছেন। সেই পটভূমি থেকে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এরা ভূমিকা রাখছেন বলে জানা গেছে।

উৎসঃ   dailynayadiganta

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin