chatrolig

টিএসসি থেকে মাসিক যত টাকা চাঁদা আদায় করে ছাত্রলীগ!

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জনসন রোডসংলগ্ন সমবায় ব্যাংকের জায়গা দখল করে প্রতিমাসে ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা চাঁদা করছে জবি শাখা ছাত্রলীগ। অভিযোগ আছে এই চাঁদার টাকা আদায় করেন জবি ছাত্রলীগের বর্তমান নেতা ও তাদের অনুসারী কর্মীরা।

অভিযোগ আছে, টিএসসিতে দোকান বসিয়ে প্রতি দোকান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা তুলেন বর্তমান জবি ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেলের কর্মীরা। এছাড়া দোকান বসানোর সময় প্রতি দোকান থেকে ১০ হাজার টাকা করে অগ্রিম নেয়া হয়েছিল দোকানদারদের কাছ থেকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে জবি টিএসসি তে ১৫ টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে চা-সিগারেটের দোকান ১০ টি, বিরিয়ানী-খিচুরীর দোকান ৩ টি এবং বাকি ২ টি ফাস্টফুডের দোকান।

একাধিক দোকানদার না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব দোকানের মধ্যে চা-দোকান থেকে প্রতিদিন ২০০, বিরানী-খিচারীর দোকান থেকে ৪০০ এবং ফাস্টফুডের দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা নিয়ে থাকনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুজন কর্র্মী। তবে তারা কেউই কর্মীর নাম বলতে রাজি হননি। সেই হিসাবে প্রতিদিন জবি ছাত্রলীগ ৪ হাজার ২ শত টাকা এবং প্রতিমাসে ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা চাঁদা তুলে থাকেন।

পূর্বপশ্চিম বিডি’র অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, যেসব দোকানদার এখানে বসেছে তাদের সবার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। উল্লেখ্য, সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিনের রাসেলের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ অক্টোবর জবি টিএসসিতে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে জবি ছাত্রলীগের কর্মীরা।

পরে এই ঘটনায় ছত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ জবি ছাত্রলীর তিন নেতা-কর্মীকে বহিস্কার করে। বহিস্কৃতরা হলেন, ছাত্রলীগ জবি শাখা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হোসনে মোবারক রিশাদ, সুজন দাশ অর্ক ও রাজিব বিশ্বাস। এদিকে এসব হোটেলে খাবারের দাম আশপাশের হোটেলের চেয়ে বেশি।

এখানকার খাবারের দাম নিয়ে সমাজ বিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অরন্য হাবিব বলেন, ‘অন্যান্য জায়গায় চা পাঁচ টাকা হলেও এখানে ছয় টাকা, কেক সাত টাকা হলেও এখানে ৯ টাকা দিয়ে খেতে হয়।’ দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের চাঁদা দিতে হয়।

তার ওপর ছাত্রলীগ নেতাদের আছে ফাও খাওয়া।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চা-বিস্কুট বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা যদি চাঁদা না দিতাম আর ফাও না খাওয়াতাম তাহলে অন্যান্য হোটেলের চেয়ে অনেক কম দামে খাওয়াতে পারতাম।

জবি টিএসসি নিয়ে রসায়ন বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছে এটা অবসর কাটানোর জায়গা ছিল, যদিও এখনো পূর্ণাঙ্গ টিএসসি হিসেবে জায়গাটি রূপ পায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজস্ব অর্থায়নে মুক্তমঞ্চ ও গাছ লাগিয়েছে এবং ছাত্রলীগ বসার বেঞ্চ দিয়েছে। সন্ধ্যার পর অনেকেই এখানে চা খেতে আসেন, আড্ডা দেন, আবার ক্যাম্পাস সময়েও অনেকে টিএসসিতে আসেন। তবে এখানকার দোকান গুলোর দাম যদি আমাদের ক্যান্টিনের মতো হতো তাহলে ভালো হতো।

জানা যায়, ২০১৪ সালের হল আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীত পাশে জনসন রোডে সমবায় ব্যাংকের দখলে থাকা প্রায় ছয় কাঠা জমি দখল নিয়ে টিএসসি ঘোষণা দেয়। এর পরই শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের টিএসসিতে ২০১৪ সালের ১৬ জুন রাতে প্রথমবারের মতো ব্যবসার পথ খুলে বসেন তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে আট দিনের মাথায় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু ব্যবসা থেমে থাকেনি।

এর পর থেকে বিভিন্নভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। সর্বশেষ গত বছর ২ ফেব্রুয়ারি জবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুরনো কাপড়ের ব্যবসা থেকে উদ্ধার করে টিএসসির এ জায়গা। জায়গাটিকে জবি ছাত্র ইউনিয়ন শাখার শওকত-ওসমান উন্মুক্ত মঞ্চ ঘোষণা করে এখানে বাউল উৎসবের আয়োজন করে তাঁরা।

তাদের নেতৃত্বে এখানে রোপণ করা হয় কয়েকটি গাছ। এখন গাছগুলো বেশ বড় হয়েছে। তবে দোকানের বিভিন্ন উচ্ছিষ্টের কারণে জায়গাটি দিন দিন হয়ে উঠছে অপরিষ্কার আর ব্যবহার অনুপযোগী। এরই প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯ নভেম্বর টিএসসি পরিস্কার ও এতে ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করে শাখা ছাত্রলীগ।

টিএসসি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার কামাল হোসেন সরকার বলেন, ‘জমিটি এখনো সমবায় ব্যাংকেরই আছে। তবে আমাদের ছেলেরা সেটা দখল করে রেখেছে। আমরা তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একটি হলের জায়গার মাধ্যমে বিনিময় করার কথা ভাবছি।’ তবে এখন কারা জমিটিতে ব্যবসা করছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।

জায়গাটির বিষয়ে জানতে চাইলে সমবায় ব্যাংকের প্রশাসন ও সম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক শামীম রেজা বলেন, ‘ছয় কাঠার এ জায়গা আমরা এখনো ছাড়িনি। আমরা একটি ডেভেলপার কম্পানিকে দিয়েছিলাম বেজমেন্টে দুই তলা আর ওপরে ৯ তলা নির্মাণের জন্য। কিন্তু তারা বিভিন্ন কারণে করেনি। জায়গাটি এখনো আমাদের আয়ত্তে আছে, তবে ওখানকার কিছু প্রভাবশালী নেতা সেখানে মাঝেমধ্যে দোকান বসিয়ে থাকে। আমরা খুব দ্রুত আবারও কোনো ডেভেলপার কম্পানিকে দিয়ে সেখানে ভবন নির্মাণ করব।’

টিএসসি নিয়ে জানতে চাইলে জবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন,‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের স্বপ্নের টিএসসির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। এখানে আমরা গাছ লাগিয়েছি। তবে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে। এ জন্য তাদের সমবায় ব্যাংকের কাছ থেকে জায়গাটি বিনিময় বা অধিগ্রহণ করতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বলেন, আমার কোনো কর্মী এর সাথে জড়িত না। এর আগে এটি দখল ছিল আমরা তা দখল মুক্ত করেছি এবং ছাত্রদের বসার ব্যবস্থা করছি। তাছাড়া আপনাদের কাছে তো অভিযোগ দেয়ার কিছু নাই। ঘটনা সত্য হলেও তো আপনারা তার বিচার করতে পারবেন না। অভিযোগ দিতে হবে আমাদের কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। এ বিষয়ে জানতে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin