bnp_somabesh

ঝিমিয়ে পড়া ছাত্রদল জেগে উঠেছে!

বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আন্দোলনে ছাত্রদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন করে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেটাতে সরকারের ভীত নড়ে উঠেছিল।

এরপর ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করার পর থেকেই ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে বসে ছাত্রদলকে। প্রশাসন নিজেদের হাতে থাকায় তখন অটোমেটিকভাবেই দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

এসময় ধীরে ধীরে হলের সিট বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, টেন্ডার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সরকারের ছায়ায় থাকার কারণে সভা-সমাবেশগুলোতে উপস্থিতি বেশি হলেও সংগঠনের অভ্যন্তরে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব, কোন্দল ও বিশৃঙ্খলা। আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে সাংগঠনিক ভিত্তি।

তারপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই ক্রমান্বয়ে পর্দার আড়ালে যেতে শুরু করে ছাত্রদল। ২০১৩ সাল পর্যন্ত হাতে গনা কয়েকটি বড় সমাবেশে তাদের উপস্থিতি দেখা গেলেও হরতাল-অবরোধ বা কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচিতে মাঠে নামতে দেখা যায়নি।

২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বরের মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে খালেদা জিয়াকে বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে রাখা হলেও ছাত্রদল নেতাকর্মীদেরকে রাস্তায় নেমে একটি প্রতিবাদ মিছিলও করতে দেখা যায়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে ও পরবর্তী আন্দোলনেও মাঠে ছিল না ছাত্রদল। এসব নিয়ে খালেদা জিয়া ছাত্রদলের উপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।

দেখা গেছে, বিগত ২ বছর যাবত ছাত্র সমাজের কোনো দাবি নিয়ে মাঠে নামতে পারেনি ছাত্রদল। বিএনপির ডাকা কর্মসূচিগুলোতেও তাদের তৎপরতা ছিল নগণ্য। দলীয় পদ পদবী নিয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তারা নিজেদের মধ্যে কিছু দিন পর পরই মারামারি করেন।

কিন্তু, সাহস করে আর মাঠে নামতে পারেন না। ছাত্রদলের এমন নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে সারা বছর ধরেই চলে আলোচনা-সমালোচনা। খোদ খালেদা জিয়াও মাঝে মধ্যে তাদেরকে ডেকে নিয়ে ধমকিয়ে দেন।

তবে, ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঝিমিয়ে পড়া ছাত্রদল আবারো জাগ্রত হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশের অনুমতির দাবিতে ছাত্রদল আজ যে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সেটাই আজ রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্ব মহলে আলোচনা হচ্ছে।

সংগঠনটির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আজ তাদের পূর্বঘোষিত আলোচনা সভা ছিল। দুপুর ২ টায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসন বিভিন্ন অজুহাতে ছাত্রদল নেতাকর্মীদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। দেখা গেছে, ছাত্রদল নেতাকর্মীরাও আজ তাদের সিদ্ধান্তে অনঢ় ছিল।

কয়েক হাজার নেতাকর্মী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে প্রশাসনের লোকজন ইনস্টিটিউটের গেট খুলে দিতে বাধ্য হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও সমাবেশে উপস্থিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন।

এদিকে, বেশ কিছু দিন ধরেই খালেদা জিয়া আদালত থেকে ফেরার পথে হাইকোর্টের সামনে বিক্ষোভ করে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। কিছু দিন সচিবালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। অন্য সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা পিছু হটলেও এবার তারা প্রতিবারই ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদলের সাম্প্রতিক তৎপরায় খালেদা জিয়াও তাদের প্রতি আস্বস্থ হয়ে উঠছেন। যার কারণে বাধা দেয়ার পরই তিনি আজ ছাত্রদলের সমাবেশে ছুটে এসেছেন।

ছাত্রদলের আজকের এই তৎপরতা নিয়ে রাজনীতিতেও হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলো যদি এভাবে মাঠে নেমে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করে তাহলে সরকার দুর্বল হয়ে যাবে। পুলিশ প্রশাসন এখন আর আগের মতো নেই।

সরকারের মেয়াদ যত ফুরিয়ে আসছে পুলিশ প্রশাসনও ধীরে ধীরে নিউটাল হওয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপি জোট একটু শক্ত করে দাঁড়াতে পারলেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।

অ্যানালাইসিস বিডি

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin