‘জোট ভাঙ্গতেই মেয়র নির্বাচনের নাটক’

বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন, ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গতেই সরকার মেয়র নির্বাচনের নাটক করেছে। বিএনপির ওই নেতারা মনে করছেন, বিএনপি সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছে। তাদের মতে, শেষ পর্যন্ত মেয়র নির্বাচন হবে না, শুধু ২০ দলে অবিশ্বাস্য আর অশান্তির জীবানু ছড়িয়ে পড়বে।

বিএনপির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান এবং মির্জা আব্বাস দলের কর্মীদের কাছে এরকম মন্তব্য করেছেন। বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ঢাকার সাবেক মেয়র ছিলেন। ঢাকার রাজনীতিতে তিনি এক বড় ফ্যাক্টর। সাদেক হোসেন খোকার মতো জনপ্রিয় না হলেও তাঁর নিজস্ব কর্মী বাহিনী আছে। কর্মীদের তিনি নির্বাচনের মাঠে আগেই না নামতে নির্দেশ দিয়েছেন। মির্জা আব্বাস বলেছেন ‘শেষ পর্যন্ত মেয়র নির্বাচন হবে না। সরকার মেয়র নির্বাচনের হুজুগ উঠিয়ে ২০ দল ভাঙ্গতে চাইছে।’ কর্মীদের তিনি বলেছেন, ‘সরকারের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া জামাতের সেলিম প্রার্থী হতে পারে না। এখন শুনছি তারা অনঢ়।’

মির্জা আব্বাসের মতোই ঢাকা উত্তরের মেয়র নির্বাচনকে জোট ভাঙ্গনের খেলা বলছেন, ‘গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গয়েশ্বর অবশ্য মনে করেন, বেগম জিয়ার রায় আর মেয়র নির্বাচনের নাটকের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে।’ কর্মীদের কাছে বিরক্তি প্রকাশ করে গয়েশ্বর বলেছেন, মেয়র নির্বাচনে যাওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত। তাঁর মতে, শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে নির্বাচন হবে না, কিন্তু ২০ দলের জোট আর থাকবে না।

গয়েশ্বর রায় মনে করেন, এমনিতেই ২০ দলে অনেক অসন্তোষ রয়েছে। দলগুলো প্রায়ই মনে করে তাদের মূল্যায়ন করা হয় না। গয়েশ্বর রায় দাবি করেছেন, অনেকদিন ধরেই সরকার জামাতকে বশীকরণের চেষ্টা করছে। জামাতের নেতাদের গ্রেপ্তার করে তাদের জোট ত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল।

মেয়র নির্বাচন ইস্যুতে জামাতকে আলাদা করে ফেলবে সরকার বলেও কর্মীদের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির এই নেতা।

বিএনপির আরেক নেতা নজরুল ইসলাম খানও বিশ্বাস করেন বিএনপিকে বিভ্রান্ত করতে এবং কর্মীদের মনোবল নষ্ট করতেই মেয়র নির্বাচনের মঞ্চ সাজানো হয়েছে। কর্মীদের তিনি বলেছেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন না হলে হতাশ না হতে। নজরুল ইসলাম খান মনে করেন, মেয়র নির্বাচনে সরকারের জয়ী হবার সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগ যে প্রার্থীর দেবে বলে শোনা যাচ্ছে, সেই প্রার্থীও হেভীওয়েট প্রার্থী না। আওয়ামী লীগ আসলে তামাশা করছে।

তবে, বিএনপির মধ্যে একাংশ মনে করেন বাইরে থেকে কেউ যদি জোট ভাঙ্গতে পারে তাহলে মনে করতে হবে জোটেই সমস্যা আছে। আর মেয়র নির্বাচন না হলে সমস্যা কি, এই সুযোগে কর্মীরা তো চাঙ্গা হলো।

মেয়র পদপ্রার্থী নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সমঝোতা!

২০ দলীয় জোটের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নানারকম গুজবকে মিথ্যা প্রমাণ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সমঝোতা হয়েছে! বিএনপি-জামায়াত ২০দলীয় জোটের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন? আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে এবং তা জানা যাবে আজ সোমবার রাতেই।

সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জামায়াত প্রার্থী ড. সেলিম উদ্দীনসহ বিএনপির মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া পাঁচ প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। এই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে একজনকে চূড়ান্ত করা হবে ২০দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী হিসেবে।

দুপুরে বিএনপির মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীরা নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন। বিএনপির আগ্রহী প্রার্থীরা হলেন দলের বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, সহপ্রকাশনা সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ সুমন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুম ও বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো.আক্তারুজ্জামান।

অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা দফায় দফায় সমঝোতা বৈঠক চালিয়ে যান। শেষ মুহূর্তে সমঝোতা হওয়ায় বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় নেতাদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বয়ে যাচ্ছে। তবে ২০ দলীয় জোটের নেতারা স্পষ্ট করে জানাচ্ছেন না, কি কি শর্তের ভিত্তিতে এই সমঝোতা হল!

বেশ কয়েকদিন যাবৎ সংবাদপত্রে ২০ দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নিয়ে জোট ভেঙ্গে যাওয়াসহ নানারকম গুজব ছড়িয়ে পড়ে। জামায়াত প্রার্থী ড. সেলিম উদ্দীনসহ জামায়াত নেতারা অনড় অবস্থানে থাকায় জোটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ২০ দলীয় জোট ভেঙ্গে যাওয়ার শংকা দেখা দেয়।বিষয়টি দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা দেখা দেয়।

এর আগে দলটির মনোনয়নপত্র সংগ্রহের নির্ধারিত দিন গতকাল রবিবারে মেয়র পদে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক পাঁচজন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তারাই আজ সেই ফরম জমা দেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin