bnp_jot

জোটের বৈঠকে সব নেতারা একমত: শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করবে না

দলীয় সরকার তথা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়েও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বৈঠকে সব নেতারা একমত হয়েছেন।

বুধবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ২০ দলীয় জোটের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

একইসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৮ বিভাগে জনসভা করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, মেয়াদের তিন মাস আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়া দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তোলা হবে বলেও বৈঠকে জানানো হয়।

সরকার দাবি না মানলে রাজপথে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ারও আহবান জানান খালেদা জিয়া।

জানা যায়, রংপুরসহ ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও যাবে বিএনপি। রংপুরে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জোটের নেতারাও সফর করবেন।

এ ছাড়া ডিসেম্বরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত আইনজীবীদের মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে এই কর্মসূচি ডাকা হবে।

চার মাস পর ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

রাত ৯টায় শুরু হওয়া দেড়ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সমস্যা ও নির্বাচনের বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীসহ ১৭ টি শরিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর কারণে তিনি ছিলেন না। জোটের শরিক লেবার পার্টিকে সংগঠনটির উপদলীয় কোন্দল বিভক্ত নেতৃত্বের কারণে কোনো অংশকেই এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আবদুল হালিম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির ডা. রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এম এ রকীব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) খোন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাশনাল পিপলস পাটির্র ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খাঁন, ন্যাপ-ভাসানী আজহারুল ইসলাম, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, জমিয়তে উলামা ইসলামের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) সাইফুদ্দিন মনি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

যুগান্তর

বেগম জিয়ার পর কে?

টিকে থাকার লড়াইয়ে বিএনপি সবগুলো পথই খোলা রাখতে চাইছে। নির্বাচনের জন্য যেমন এখন থেকেই নীরবে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে, তেমনি আন্দোলনের কৌশলও ঠিক করছে। বেগম জিয়ার মামলা এক বছর ঠেকিয়ে রাখার ছক কষছে বিএনপি, তেমনি বেগম জিয়া আদালতে দণ্ডিত হলে বিএনপির হাল কে ধরবে, সেই চিন্তাও মাথায় রাখছে। তবে এইসব কৌশলই অত্যন্ত গোপনে হচ্ছে। বেগম জিয়া, তার পুত্র তারেক জিয়া এবং জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ বিএনপির দুএকজন ছাড়া কেউই এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানেন না।

বিএনপির জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বেগম জিয়ার মামলা। তারেক জিয়া একটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ইতিমধ্যে নির্বাচনের অযোগ্য হয়েছেন। দেশে এসে বিএনপির হাল ধরা এখন তাঁর জন্য অসম্ভব। দেশে এলেই তাঁকে মামলার সাজা ভোগ করতে আগে জেলে যেতে হবে। বেগম জিয়াও যদি জিয়া চ্যারিটেবল এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হন, তাহলে বিএনপির হাল ধরবে কে?

জিয়া পরিবারের ধারণা, এটাই সরকারের কৌশল। সরকার বেগম জিয়াকে নির্বাচনের অযোগ্য করে দলে ভাঙ্গন ধরাতে চায়। একটি অংশকে নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। বিএনপির একাধিক নেতা খোলামেলাই স্বীকার করেছেন, ‘খালেদা জিয়া বিহীন বিএনপি, আর পাইলট ছাড়া প্লেন একই কথা।’ বেগম জিয়া জেলে গেলেই বিএনপি দিক নির্দেশনাহীন হয়ে পড়বে, কর্মীরা হবে হতাশ।

এই সুযোগে সুবিধাবাদীরা সরকারের সঙ্গে ‘আঁতাত করে নির্বাচন করবে-এমনটাই বিশ্বাস করেন অনেক বিএনপি নেতা। এজন্যই বেগম জিয়া তাঁর রায়ের আগেই বিএনপির পরবর্তী কান্ডারী চূড়ান্ত করে যেতে চান। বিএনিপর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, বেগম জিয়া এটি লন্ডনেই চূড়ান্ত করে এসেছেন। বেগম জিয়া জেলে গেলে, দলের হাল ধরবেন তারেক জিয়ার স্ত্রী জোবায়দা রহমান। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার চূড়ান্ত শুনানি হবার পর, রায়ের তারিখ দেবার সঙ্গে সঙ্গেই বেগম জিয়া এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন বলে জানা গেছে।

বেগম জিয়া তাঁর ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, ওয়ান ইলেভেনে তিনি যে ভুল করেছেন, এবার সেটি করতে চান না। ওয়ান ইলেভেনে গ্রেপ্তার হবার পর বেগম জিয়া দলের মহাসচিব মান্নান ভুঁইয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন, খন্দকার দোলোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে কাউকে ঘোষণা করে যাননি। ফলে নেতৃত্বহীন বিএনপি সংস্কারপন্থীদের দখলে চলে যায়। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মারা গেলে বেগম জিয়া সবাইকে অবাক করে শোক বাণী দেন। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বঙ্গ ভবনে যান।

দলের কেউ কেউ বেগম জিয়ার এই ব্যতিক্রমী আচরণে অবাক হয়েছিলেন। তাদের তিনি দুঃখ করে বলেছেন, ‘আমার দলে যদি একজন তাঁর মতো (জিল্লুর রহমান) লোক পেতাম, তাহলে ওয়ান ইলেভেনে এই অবস্থা হতো না।’ উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার হবার মুহূর্তে জিল্লুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঘোষণা করে যান। বেগম জিয়া মনে করেন ওটাই ছিল রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট। নেতৃত্বহীন একটি দলে সুবিধাবাদীরাই প্রভাব বিস্তার করে। এবার যেন সেটা না হয় সেজন্যই জোবায়দা রহমানকে মনোনয়ন।

তবে, এই মনোনয়নের কিছু কৌশলগত দিকও আছে বলে বিএনপি সংশ্লিষ্ঠরা মনে করছে। প্রথম সুবিধা হলো, চিকিৎসক ও শিক্ষিত হিসেবে জোবায়দা রহমানের আলাদা ইমেজ আছে। দ্বিতীয়ত, তিনি কথা বলেন কম, ফলে হঠাৎ তাঁর বিতর্কিত হবার সম্ভাবনা নেই। তৃতীয়ত, সরকারের মনোভাবও তাঁর ব্যাপারে ইতিবাচক। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার বৈঠকে জোবায়দার মতো শিক্ষিত মানুষদের রাজনীতিতে আসাকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছিলেন।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, জোবায়দার বিরুদ্ধে উল্লেখ করার মতো মামলা নেই। ফলে, বেগম জিয়া দণ্ডিত হলে তিনি দ্রুত দেশে এসে দলের হাল ধরতে পারবেন। কর্মীরা তাতে উজ্জীবিত হবে। এর ফলে দলের ভাঙ্গনের সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। এরকম পরিস্থিতিতে, নির্বাচন নয় বরং খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনই সরকার পতনের আন্দোলনের পথে যাবে বলে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন। অনেকে আবার চমকও আশা করছেন।

একজন নেতা তো দিবা স্বপ্নের মত বললেন, ‘এমনও হতে পারে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা জোবায়দার নেতৃত্বে নির্বাচনে গেলাম। নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমেই বেগম জিয়া ও তারেক জিয়ার মুক্তির সনদ নিলাম।’ দিবা স্বপ্ন নয়, বেগম জিয়া তার ঘনিষ্ঠদের বলেছেন, কোনো অপশনই ক্লোজ করা যাবে না। কোন পথে যাবে বিএনপি, তা বুঝতে হলে অপেক্ষা করতে হবে একটি রায়ের।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin