ht-imam

‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সময় কোনো অপারেশনে অংশ নেননি’ – এইচ টি ইমাম

মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান কোনো অপারেশনে অংশ নেননি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, মেজর জিয়াউর রহমানকে আমি ভেতর থেকে চিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আমাদের ক্ষতি করেছেন।

আমি তাকে কখনো মুক্তিযোদ্ধা মনে করি নি, ভবিষ্যতেও করবো না। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মুক্তিযোদ্ধা ও সৈনিক হত্যা’ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

এইচ টি ইমাম বলেন, খালেদ মোশাররফ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। জাতি হিসেবে তার অবদান অামাদের স্মরণ করা উচিত। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় কোনো অপারেশনে অংশ নেননি।

তার যে অপারেশনগুলো সব কর্নেল তাহেরের করা। জিয়া যদি অারো ক্ষমতায় থাকার সময় পেতেন, তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করে ফেলতেন।

রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার তিন দশক, যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপিকে – দেখুন বিস্তারিত

বিগত কয়েক বছর থেকে রাজনীতিতে বিএনপি যে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বিশেষ করে বিগত ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমানের গড়া দলটি অনেকটাই প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হয়। নানা উদ্যোগের পরও সেই প্রতিকূল পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে পারছে না দলটি।

এতে বলা যায়, ক্ষমতাসীন দলের দমন-নিপীড়ন কৌশলের কাছে অনেকটাই মাঠের রাজনীতি থেকে স্তিমিত হয়ে দীর্ঘদিন ঘরোয়া পরিবেশে আলোচনা সভা, সংবাদ সম্মেলন ও বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখে দলটির নেতারা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরাও চাচ্ছে দলটিকে বরাবরই চাপের মুখে একঘরে করে রাখতে। এ জন্য শীর্ষ নেতাসহ দলের তৃণমূলে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, হুমকি-ধামকি দিয়ে কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টা করে আসছে। এই কৌশলে তারা অনেকটাই সফলও হয়েছে বলা যায়।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরার পর আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি ফের মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে বেগম খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরের মাধ্যমে দলটি মাঠের রাজনীতিতে নামার বড় ধরনের জানান দিয়েছে।

এরপর ৭ নভেম্বরের জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যে কোনো মূল্যে বিএনপির কর্মসূচি পালন করা হবে। এরই মধ্যে ১২ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। এর আগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে চিঠি দেয় দলটি। দুইদফা তারিখ পরিবর্তন করে নতুন তারিখ ১২ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে। এর আগে ৮ ও ১১ নভেম্বর সমাবেশ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওইদিনগুলোতে আপত্তি থাকায় তারা ফের তারিখ পরিবর্তন করে ১২ নভেম্বর নির্ধারণ করে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়া গেছে। তারা আশা করছেন কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই ওই দিন সমাবেশ করা সম্ভব হবে। আর সেভাবেই বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

এদিকে মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,ভোটবিহীন সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে যেতে দেয়নি।

তবে বিএনপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে নিজে বলেছেন, জিয়ার মাজারে যেতে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কোনো বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু বিএনপি না গিয়ে বলছে সরকার অনুমতি দেয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপি মিথ্যা কথা বলছে।’

বিএনপির সমাবেশের অনুমতি প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলে থাকার সময় ২১ ফেব্রুয়ারি ৩ দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু বন্ধ করে দিয়েছে। অনুমতি দেওয়া হয়নি। হাওয়া ভবনে বসে রক্তাক্ত করা হয়েছিল আমাদের সমাবেশ। সেই দিন গণতন্ত্র কোথায় ছিল? এখন গণতন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বহুবার অনুমতি চেয়েছি। অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদিও অনুমতি দিয়েছে সমাবেশস্থল পণ্ড করা হয়েছে। পুলিশ দিয়ে লাঠিপেটা করা হয়েছে।’

২১ আগস্ট হামলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা অফিসের সামনে সমাবেশ করছিলাম। তখন রক্তাক্ত করা হয়েছিল। মানুষ মারা হয়েছিল বোমা মেরে। বিএনপিকে তো আর এ অবস্থায় পড়তে হয়নি। ফলে ধৈর্য্য দরুন।’

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটি এতোটা প্রতিকূল পরিবেশ আর কখনো মোকাবেলা করেছে বলে আমার জানা নেই।

১৯৮১ সালের ৩০ মে কিছু বিপদগামী কিছু সেনার হাতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। তখন আমি খুবই ছোটছিলাম। ফলে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করার মতোও আমার ঝুড়িতে তেমন কোনো কিছু নেই। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকেই আজ দু’কলম লিখতে বসলাম।

আজ জিয়া নেই, তার স্ত্রী, এক সন্তান আছে, তার গড়ে যাওয়া দল আছে। বিএনপি আজ দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল, যাদের সারা দেশে মোট জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশে সমর্থক রয়েছে। এই হিসাবে দেশের ১৬-১৭ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৮-৯ কোটি মানুষ কম-বেশি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অথবা দলটিকে সমর্থন ও সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। এটা কম ব্যাপার নয়।

বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই দল প্রতিষ্ঠা করেন। ৩০ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান তার শাসনকে বেসামরিক করার উদ্দেশ্য ১৯ দফা কর্মসূচি শুরু করেন। জেনারেল জিয়া যখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি রাষ্ট্রপতির পদের জন্য নির্বাচন করবেন তখন তার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন। জাগদলকে বিএনপির সাথে একীভূত করা হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন। জিয়ার এই দলে বাম, ডান, মধ্যপন্থী সকল প্রকার লোক ছিলেন। বিএনপির সবচেয়ে প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর কর্মীনিয়োগ পদ্ধতি। প্রায় ৪৫ শতাংশ সদস্য শুধুমাত্র রাজনীতিতে যে নতুন ছিলেন তাই নয়, তারা ছিলেন তরুণ।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। সেই থেকে যাত্রা এই দলটির।

এরপর দলটি মোট চারবার ক্ষমতায় আসে। আজ দলের ব্যাপ্তি অনেক দূর। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে ৮০-৯০ বছরের বৃদ্ধও নিজেকে এই দলের লোক বলে দাবি করতে দেখা যায়। এটা বিএনপির জন্য কম প্রাপ্তির কথা নয়।

তবে এই দলের বিশালতা সত্ত্বেও ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দলটি বর্তমান সময়ের মতো এতটা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন ইতোপূর্বে কখনো হয়েছিল বলে আমার জানা নেই। অন্যদিকে সুদীর্ঘকালের ইতিহাসে বর্তমান সময়ের মতো তাদের এত সমর্থনও কোনোকালে ছিল বলে মনে হয় না। এমন কি জিয়াউর রহমানের জীবদ্দশাতেও নয়।

ফলে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যদি আজ জীবিত থাকতেন তবে নিশ্চয়ই তিনি তার দলটির বিশাল ব্যাপ্তি ও অগণিত কর্মী-সমর্থক দেখে সত্যিই অনেক খুশি হতেন, আনন্দিত হতেন। সে সঙ্গে নিজ জীবসঙ্গীর দৃঢ়তা দেখেও অভিভুত হতেন।

অন্যদিকে বর্তমান দুরাবস্থার জন্য ব্যথিত না হয়ে এর পেছনের কারণ জানার চেষ্টা করতেন এবং সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পথ খুঁজতেন। দেশপ্রেমিক বিচক্ষণ জিয়া হয়তোবা একটা সুন্দর মসৃণ পথ পেয়েও যেতেন।

কেননা, জিয়া এমন বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন, যখন ১৯৭১ সালে জাতীয় ইতিহাসের চরম দুর্যোগময় কাল। যখন সকলেই ২৫ মার্চ মধ্যরাত ইতিহাসের পৈশাচিক গণহত্যার ভয়াবহতায় হয়ে পড়েছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আক্রান্ত অসহায় দেশবাসী হতবিহবল এবং অনেকে আত্মসমর্পণ কিংবা দালালির মাধ্যমে বেছে নিয়েছিলেন আত্মরক্ষার পথ।
সেই সময় কালুরঘাটের বেতার কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তার সেই কন্ঠস্বর ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’। দেশের রাজনৈতিক বিভাজনে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বির্তক যাই করা হোক না কেন, সবকিছু উপেক্ষা করে সেদিন যে জীবন বাজি রেখে জাতির পক্ষে জিয়াউর রহমান যুগান্তকারী দুঃসাহসী ঘোষণা দিয়েছিলেন এটা অস্বীকার করার মতো কারো সুযোগ নেই।

কেবল ঘোষণার মধ্যেই নিজের কর্তব্যকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। স্বাধীনতাকামী সৈনিক জনতাকে সংগঠিত করে বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহ ও প্রতিরোধের লড়াইকে তিনি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে উন্নীত করেছিলেন।
অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অবশেষে ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসলে সবাই তাকে বরণ করে নেন।

যতদূর জানি, জিয়ার অকৃত্রিম দেশপ্রেম আর মহান মুক্তিযুদ্ধে দুঃসাহসিকতার জন্যই বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান করেছিলেন। এ থেকেই বুঝা যায় বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানের মধ্যে সম্পর্ক কতটা সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিলো।

কিন্তু আজ যখন দেশের রাজনৈতিক দৈন্যতায় পরস্পর বিরোধী দু’পক্ষের লোকজনের কাছ থেকে যখন বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান সম্পর্কে নানা কথা, নানা নতুন তথ্য শুনি তখন মনোকষ্ট পাওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার থাকে না।

অবশ্য পরে সশস্ত্র বাহিনীর একটি অংশের পরিকল্পনায় ১৯৭৫ এর মধ্য-আগস্টে রক্তক্ষয়ী এক সশস্ত্র সেনাঅভ্যুত্থানে ঘটে যায় রাষ্ট্রক্ষমতার পটবদল। বঙ্গবন্ধুর সহচর খন্দকার মোশতাক আহমদ দেশজুড়ে সামরিক শাসন বলবৎ ও শাসনতন্ত্র স্থগিত করে রেখে তার নিজস্ব মর্জি মাফিক শাসন চালাতে থাকেন। সবমিলেই এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগুচ্ছিল জাতি।

যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, রাজনীতিহীন ওই সময়ে জাতীর ঐক্য ও আশা-আকঙ্ক্ষার প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীতে সৃষ্টি করা হচ্ছিল নানা দল-উপদল, ভেঙ্গে পড়েছিল শৃংখলা ও সংহতি। এরই মধ্যে কতিপয় উচ্চাভিলাষী সেনা অফিসার ৩ নভেম্বর ঘটিয়ে দেয় আরেকটি স্বল্পমেয়াদী ক্যু। তদানীন্তন সেনাপ্রধান জিয়া তাদের হাতে বন্দী হন। তবে সেটা বেশিদূর এগুতে পারেনি।

৭ নভেম্বরের প্রথম প্রহর থেকেই সারাদেশের সেনা ছাউনিগুলোর চেহারা বদলে যায়, ওইদিন ভোরে সেনা সদস্যরা ভোরে রাস্তায় নামলে তাদের প্রতি স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন জানাতে সারাদেশের সাধারণ মানুষও বেরিয়ে আসে ঘর থেকে।

যেটাকে আমরা জাতীয় বিপ্লব বা সংহতি দিবস বলে থাকি। বির্তক থাকলেও ওই সময়ে জিয়ার ক্ষমতায় আসার বিষয়টি ছিল অনেকটাই দেশবাসীর বহুল কাঙ্খিত বিষয়। প্রবীণদের ভাষ্যমতে, ওই সময় জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ না করলে হয়তো দেশে বিশৃঙখলা ও রক্তপাত আরো দীর্ঘ হতে পারতো।

এরপর জিয়া দেশ শাসন করেন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে তিনি দেশের জন্য অনেক কিছুই করেন, তবে সবচেয়ে বড় এবং যুগান্তকারী বিষয় ছিলো বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে ফেরা। কেননা, দেশ স্বাধীনের স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই জনগণের রাজনৈতিক অধিকার শৃঙ্খলিত হয়ে পড়েছিল। এরপর পরের ইতিহাস আমাদের সবারই জানা।

জিয়ার মৃত্যুর পর নদীর ঘাটের জল অনেক দূর গড়িয়েছে। ৩৬ বছর বয়সে বিধবা খালেদা জিয়া অবুঝ দুই ছেলেকে নিয়ে পথচলা শুরু করেন। এরপর নিয়তির ডাকেই রাজনীতিতে আসা। দলে স্বামীর শূন্যতা পূরণে সেই দশকের গোড়ার দিকে রাজনীতির মাঠে আসেন। স্বামীর হত্যাকারী খ্যাত এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বেগম জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বেই ’৯০-এর পটপরিবর্তন ঘটে। তার আপোষহীন অসাধারণ নেতৃ্ত্বের আকৃষ্ট হয়ে মানুষ বিএনপিকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। এরপর আরো দুইবার ক্ষমতায় বসেন বেগম জিয়া।
সেই সময়টাই খালেদা জিয়ার জীবনের ‘শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত’।

এরশাদবিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তীতে তিনবার ক্ষমতায় আরোহণের সময়টি যদি বেগম জিয়ার জীবনের ‘শ্রেষ্ঠ সময়’ হয়ে থাকে তবে পরবর্তীতে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনটি তার জীবনের সবচেয়ে ‘অন্ধকার সময়’।

কেননা, সেই আপোসহীন নেত্রী বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে স্বাধীনভাবে চিন্তার মাধ্যমে পরিস্থিতির মূল্যায়ন, দ্রুত সমন্বয় এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে কতটা সমর্থ হয়েছেন সেটা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে। এমনকি ১৯৯১ থেকে ৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সরকার চালানোর সময় নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক চিন্তায় এবং দূরদর্শিতায় যে অভাব কিংবা বড় ভুল ছিল তা পর্যালোচনা করার সময়ে এসেছে। যে সব কারণে এমন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার দলটি।

কেননা, তিনবার ক্ষমতা থাকাকালীন অনেক অপার সুযোগ ছিল- দেশ, দল ও জনগণের স্বার্থে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার। কিন্তু সেই সুযোগটা সেভাবে ব্যবহার করা হয়নি বলেই খোদ বিএনপি ঘরণার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করেন। যে কারণেই হয়তো ৭২-৭৫ এর কায়দায় আরেকটি শাসন ঝেঁকে বসেছে জাতির ঘাড়ে।

১৯৮১ থেকে ২০১৬ এই ৩৬ বছরে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে জিয়া পরিবারকে। চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে তাদের। এরশাদের শাসনামলে ’৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় তাকে চরম জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়। অতঃপর ২০০৭ সালের ১/১১ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সময় তাকে কারাগারে যেতে হয়। দুই ছেলেকেও পাঠানো হয় কারাগারে। ছেলেদের উপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন।

এরপর শেখ হাসিনার আমল শুরু হয়, বেগম জিয়ার নেতৃত্বে চলছে ৯ বছর ধরে আন্দোলন। আন্দালনের মধ্যেই ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো নির্বাসনে থাকাবস্থায় মারা যান। আর বড় ছেলে তারেক রহমান সেই ২০০৮ সাল থেকেই স্বপরিবারে নির্বাসনে রয়েছেন। আর ২০০৯ সালের মে মাসে ৪০ বছরের স্বামীর স্মৃতি বিজরিত বাড়ি ছাড়া হয়ে উঠেছেন ভাড়া বাসায়।

এখানেই শেষ নয়, খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন আদালতে রয়েছে অর্ধশতাধিক মামলা। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা বেশ কয়েকটি মামলাও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সবমিলেই এখন চরম প্রতিকূল পরিবেশ চলছে। সামনের দিনগুলো আরো বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে এই পরিবারটি।

এরপরও এটা সত্য যে- এতো প্রতিকূল পরিবেশেও খালেদা জিয়া কখনো বিচলিত কিংবা আদর্শচ্যুত হননি। সর্বদা জিয়ার আদর্শের ওপর অটল থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করেছেন। বহু মামলা-হামলা তাকে টলাতে পারেনি। গত কয়েকদিনেও তার সে ধরনের দৃঢ়তাই লক্ষ্য করা গেছে।

এখন দেখার বিষয়, বেগম জিয়া এবং তার দল কীভাবে বর্তমানের এই প্রতিকূল পরিস্থিতিটা মোকাবেলা করে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin