বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন অভিযোগ করে বলেছেন, “বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে সরকার বলে, ‘জামিন দেয়া, না দেয়া সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। এখানে আমাদের কোনো আপত্তি নাই।’ কিন্তু যখনই আমরা জামিনের দরখাস্ত করি তখনই অ্যাটর্নি জেনারেল গিয়ে হাজির হয়ে যান এবং জামিনের বিরোধিতা করেন।”
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে খন্দকার মাহবুব হোসেনের নিজ কার্যালয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এমন মন্তব্য করেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেনের এমন বক্তব্যের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘কোর্টে গিয়ে কি বলব, জামিন দেয়া হোক? তাদের (খালেদা জিয়ার আইনজীবী) তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি জামিন পাওয়ার অধিকারী। সেখানে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা, আর দোষ চাপাচ্ছেন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের ওপর। সম্পূর্ণ হাস্যকর বিষয়!’
এর আগে দুপুরে আদালতের আদেশ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টে পাঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন আসার পরপরই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে আমাদের দাবি, সরকারের উচিত হবে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) অসুস্থ, এ নিয়ে কারও দ্বিমত নাই, তিনি তার ইচ্ছা মতো যাতে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পান। সবকিছুর ঊর্ধ্বে আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগ, তাকে সে সুযোগটা দেবেন, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য তার সুচিকিৎসা, তাকে বাঁচিয়ে রাখা। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে কোনো বাঁধা দেবে না। তাকে সুচিকিৎসার সুযোগ দেবেন।’
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, অসুস্থ খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে সরকার দ্বিমুখী আচরণ করছে। একদিকে সরকার বলছে, জামিন দেয়া সম্পূর্ণ আদালতের ব্যাপার, অপরদিকে সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল এসে জামিনের বিরোধিতা করছেন।’
খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবী) যদি মনে করে যে প্যারোল চাই, চিকিৎসার বন্দোবস্ত চাই, আইনেই বিধান আছে। সে বিধান মতো তারা দরখাস্ত কোনো সময় করছেন না। করলে হয়তো সরকার বিবেচনায় নেবে এবং তথ্য-উপাত্ত দিয়ে যদি প্রমাণ করতে পারে, সত্যিই তার বিদেশে যাওয়া দরকার…। কিন্তু এখানে সর্বোচ্চ চিকিৎসালয়ের প্রায় ছয়জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেছেন, তার চিকিৎসা এখানেই সম্ভব। কিন্তু তিনি সম্মতি দিচ্ছেন না। এখন বিএনপির নেতৃবৃন্দ যারা বাইরে এত কথাবার্তা বলছেন, আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন, তাদের তো উচিত তাদের নেত্রীকে রাজি করানো।’
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন কি-না, সম্মতি দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কি-না এবং শুরু হলে কী অবস্থা— তা জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্যকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বুধবারের (২৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে এ প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়। এ বিষয়ে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য করা হয়।
সূত্র: জাগো নিউজ