জামায়াত নিয়ে বড় দুই দলের হিসাব

নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। দলটির দাঁড়িপাল্লা প্রতীকও বাতিল করা হয়। তার পরও প্রতীকবিহীন দলটি নিয়ে নানা হিসাব কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি।

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল হোসেনের কারামুক্তি ও সিলেট সিটি নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নানা গুঞ্জনকে সামনে নিয়ে এসেছে।

বিভিন্ন বিষয়ে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় প্রকাশ্যেই জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলছেন বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। জামায়াত তাদের জোটে থাকুকÑ বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই সেটা চান না। আবার জামায়াতও তাদের শীর্ষনেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসিতে ঝোলানোসহ নানা ইস্যুতে বিএনপির ভূমিকায় খুশি হতে পারেনি।

বিএনপি-জামায়াতের টানাপড়েনের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকার পরও জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরের কারামুক্তিকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছেন।অনেকেই মনে করছেন, জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে সম্পর্ক, তাতে জামায়াত হয়তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রকাশ্যে জোট বাঁধবে না। এখন প্রশ্ন, জামায়াতের আমিরকে

কারামুক্তি দেওয়া হলো কেন? অনেকেই বলছেন, ২০-দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে কোনোভাবে বের করতে পারলেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শক্তি অনেকটাই কমে যাবে। এ ছাড়া বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে না গেলেও জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিতে পারবে।

অন্যদিকে বিএনপি মনে করে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে পার্শ্ববর্তী দেশসহ অনেক দেশেরই আপত্তি রয়েছে। জামায়াত এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও আসন সংখ্যা তেমনভাবে পাবে না।

সে কারণে জামায়াতকে নিয়ে সেভাবে ভাবছে না। জোটে থাকলে থাকুক, না থাকলে চলে যাকÑ অনেকটা এমন গা-ছাড়া ভাব দেখাচ্ছে। অবশ্য জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা এখন ২০-দলীয় জোটে থেকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বলে জানিয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতের টানাপড়েনের ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস আমাদের সময়কে বলেন, জামায়াত বাড়াবাড়ি করছে। তারা যা করছে তাতে ঐক্য বোঝায় না, ঐক্য থাকে না। ঐক্য ভাঙার দায়িত্ব জামায়াত নিতে পারে, তারা তা করতেই পারে। ২০০৮ সালে জামায়াতের চাপেই নির্বাচনে যেতে হয়েছিল, তার ফল এখন ভোগ করতে হচ্ছে বিএনপিকে।

জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার আমাদের সময়কে বলেন, আমরা জোটে আছি, জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেব। আমাদের দল গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী। সুতরাং আমরা নির্বাচনে যাব। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমরা জোটগতভাবেই নির্বাচনে যাব।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, জামায়াতের আমিরের জামিনের বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়েছে। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের হাত থাকার সুযোগ নেই। বিষয়টিকে নিয়ে বিএনপি নেতারা লাগাতার মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণের কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। তিন বিচারপতির বিশেষ বৃহত্তর বেঞ্চের দুজন নিবন্ধন বাতিলের পক্ষে ছিলেন। অন্যজনের ছিল ভিন্নমত। একই সঙ্গে এ রায়ের সঙ্গে সাংবিধানিক প্রশ্ন জড়িত থাকায় হাইকোর্ট সরাসরি আপিল করার সনদ দেন। ওই দিনই জামায়াত রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে আপিল করে।

এদিকে হাইকোর্ট থেকে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার প্রায় দেড় বছর পর নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধিত দলের তালিকা থেকে বাদ দেয়। ২০১৫ সালের ১ জুন ইসির এক তথ্য বিবরণীতে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তৎকালীন ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেছিলেন, হাইকোর্টের আদেশ আমলে নিয়েই নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওরা যদি আপিল করে থাকে এবং আপিলে জেতে, তা হলে নিবন্ধন ফেরত পাবে।

এর পর ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্টের ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিমকোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে এবং কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। ১৪ ডিসেম্বর ওই সিদ্ধান্তের বিষয়টি সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে ইসি সচিবালয়ে পাঠানো হলে কমিশন বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০০৮-এর বিধি ৯-এর উপবিধি (১)-এর ৩২ নম্বর ক্রমিক থেকে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বাতিল করার প্রস্তাব কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীকটি বাদ দিয়ে বিধিমালায় সংশোধন প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর তার গেজেট প্রকাশ করা হয়।

দলের নিবন্ধন ও প্রতীকের ব্যাপারে জানতে চাইলে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, হাইকোর্ট থেকে নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে আমাদের আপিল বিচারাধীন। বিচারাধীন বিষয়ে তাই বেশি কিছু বলব না। তবে এটুকুই বলব, আমরা এটা আইনিভাবেই মোকাবিলা করব। প্রতীক বাতিলের বিষয়টিও আইনগতভাবেই মোকাবিলা করা হবে বলেও তিনি জানান।

ইসির আইনজীবীর দেওয়া তথ্যমতে, নিবন্ধন ও প্রতীক না থাকায় জামায়াতে ইসলামী আপাতত জাতীয় নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়াটা অনেকটাই অনিশ্চিত।

উৎসঃ   amadersomoy

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin