‘জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে’

‘জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করা হবে’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদসহ বিএনপি নেতারা।

মঙ্গলবার বিএনপির নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে তারা এসব কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়া দেশের ১৬ কোটি মানুষের জনপ্রিয় নেত্রী। দেশের মানুষকে মামলা হামলা দিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না। এ দেশের মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে নয়ে আসবে। এ লড়াই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লড়াই। জনতার উত্তাল তরঙ্গের মধ্য দিয়েই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনা হবে।’

আজ সারা দেশে নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ মামলা হামলা দিয়ে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই আমাদের এই লড়াই ও সংগ্রাম দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনবার লড়াই। এই লড়াই নেতাকর্মীদের মক্ত করবার লড়াই। বাংলাদেশের মানুষ এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার লড়াই

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সাথে আছেন। তিনি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে কারাগার পরিত্যক্ত ও নির্জন। সেই কারাগারে দেশনেত্রীকে রাখা হয়েছে। আজকে দেশনেত্রীকে সম্পূর্ণ একা নির্জন কারাগারে রেখে বর্তমান সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত করেছে। এর জন্য তাদের (সরকার) বিচার হবে।

আওয়ামী লীগের সরকার সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে। এর জন্য খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা। সারাদেশে প্রায় ১৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।

ফখরুল বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন ও ব্যর্থ। তাদের আর ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নাই।

খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে গিয়ে সরকার ভেবেছে বাংলাদেশের মানুষকে স্তব্ধ করা যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার ভাবছে, বাংলাদেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে, সেটা যাবে না। তারা (জনগণ) কারাগারে থেকে খালেদা জিয়াকে অবশ্যই মুক্ত করে নিয়ে আসবে। অতীতে তাদের নেতা (শেখ মুজিবুর রহমান) মিথ্যা মামলার কারাগারে বন্দি ছিলেন। মানুষ তাকে মুক্ত করে নিয়ে এসেছিল। আর খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের নেত্রী। এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী। রাজপথে নামলে লাখ লাখ মানুষ তার পিছনে আসে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই কর্মসূচি থেকে আমরা শপথ নেই, জনতার উত্তাল তরঙ্গের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করে আনবো। সেই লক্ষ্য আন্দোলনকে আরো বেগবান করি।

অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে তিন দিন সাধারণ কয়েদী হিসেবে রাখা হয়েছে। যারা খালেদা জিয়াকে সাধারণ কয়েদী হিসেবে রেখেছেন তাদের বিচার চাই আমরা।

এসময় ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘একটি মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা তাঁকে কারাগার থেকে মুক্ত করব। পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়াও চালিয়ে যাব।’

সরকারের নির্দেশে আদালত মিথ্যা মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনকে সাজা দিয়েছে অভিযোগ করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এর প্রতিবাদে নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি পালন করতে গেলেও সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তাতে বাধা দিয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি এবং প্রতিবাদ পালন করে যাব। কিন্তু আজকের এই কর্মসূচি পালনের জন্য এরই মধ্যে তিনটি জায়গা পরিবর্তন করতে হয়েছে। আমাদের কোথাও দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু এর পরও আজকের এ উপস্থিতি প্রমাণ করে, রাস্তায় নামার সুযোগ দেওয়া হলে সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসবেন। কারণ, একজন জনপ্রিয় নেত্রীকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। এ জন্য এই সরকারকে অনেক খেসারত দিতে হবে।’

কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া জেলে বন্দি মানে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বন্দি। খালেদাকে জেলে রেখে দেশ পরাধীন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের জনগণ সেটা হতে দেবে না।

বিএনপিতে ভাঙ্গন সময়ের ব্যাপার মাত্র- সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ঢাকার সাবেক এই মেয়র বলেন, দেশের কোন শক্তিই বিএনপিকে ভাঙ্গতে পারবে না। দেশনেত্রীকে জেলে নিয়ে আওয়ামী লীগ তাকে দেশনেত্রী থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা বানিয়েছে। সেজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিচারের নামে প্রহসন করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা হয়েছে। সুতরাং আমরা সুবিচার পাইনি। এরকম অত্যাচারী সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সুবিচার পাওয়ার আশা করা বোকামি। এরপরও আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আইনি লড়াই করছি।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা (সরকার) ভাবছেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে নির্বাচন করবেন। ভুলে যান। কারণ খালেদা জিয়া ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হবে না।

এসময় হাজার হাজার নেতাকর্মী ‘বন্দি আছে আমার মা ঘরে ফিরে যাবো না, আমার মা জেলে কেন, গণতন্ত্র জেলে কেন, স্বাধীনতা জেলে কেন, খুনী হাসিনা জবাব দে’ এমন স্লোগানে নয়া পল্টন মুখরিত করে তোলে।

মঙ্গলবার বিএনপির নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ১১টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় এই কর্মসূচি। এর জানানো হয়েছিল প্রেসক্লাবের সামনে হবে, পরে জানানো হয় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হবে, কিন্তু পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় অবশেষে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুরু হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ-ভাসানীর মহাসচিব গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

এছাড়া অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, জয়নাল আবদীন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূইয়া, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাড. সৈয় মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, তথ্য ও গভেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আরো ছিলেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ডা. মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। এছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

রায় ঘোষণার পর পরই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর আরো তিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাকে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এদের মধ্যে তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin