ছাত্রদলের সোনালী ফসলেরা কোথায়?

বিএনপির ভ্যানগার্ড জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ। ১লা জানুয়ারী ১৯৭৯ সালে কেন্দ্রীয়ভাবে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান যখন বিএনপির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তখন তিনি ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরি করার জন্য এর একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

তাই তিনি কেন্দ্রীয়ভাবে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখনকার সময়ের জিয়ার জনপ্রিয়তার জন্য অনেক তরুন অনুপ্রানিত হয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩৯ বছরের পথ-পরিক্রমায় গড়ে উঠা ছাত্রদলের সোনালী ফসলেরা এখন কোথায়?

১৯৭৯ সালে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক ছিলেন কাজী আসাদুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রনেতা বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা।

১৯৮৫ ও ১৯৮৬ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন শামছুজ্জামান দুদু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করা এই নেতা বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা।

১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন ড. আসাদুজ্জামান রিপন। মুন্সীগঞ্জের এই ছাত্রনেতা বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। বেশ কিছু সময় দল থেকে দূরে থাকায় তিনি পিছিয়ে পড়েছেন। তিনি ইংরেজি ম্যাগাজিন দ্য ডিপ্লোম্যাট অ্যান্ড গ্লোবাল-এর সম্পাদক।

১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক পদে ছিলেন আমান উল্লাহ আমান। এর আগে ৮৭ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ৯০ সালে তিনি ছিলেন ডাকসুর ভিপি। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে এমপি হয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, পরবর্তীতে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা।

১৯৯২ সালের ১৬ই মে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি পদে জয়ী হন রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। কিন্তু আন্তঃকোন্দলের ফলে মাত্র ৪ মাস টিকে ছিল রিজভীর কমিটি। ৪ মাস পরেই তিনি কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ থেকে চলে যান। এককালের মাঠকাঁপানো এই ছাত্রনেতা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-রাকসুর ভিপি। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি সরকারের সময়ে তিনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও দপ্তরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা।

১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে ছিলেন ফজলুল হক মিলন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা। মিলনের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নাজিম উদ্দিন আলম। বর্তমানে তিনিও বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা।

১৯৯৬-এর শেষের দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে আসেন শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সভাপতির পদে ছিলেন তিনি। ৭ম, ৮ম, ৯ম জাতীয় সংসদে লক্ষীপুর-৩ আসন থেকে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা। এ্যানীর কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হাবীব-উন-নবী সোহেল।

হাবীব-উন-নবী সোহেল ২০০০ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি। ২০০২ সালের শেষের দিকে মাত্র ৪ মাসের জন্য ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন এবিএম মোশারফ হোসেন। বর্তমানে তিনিও বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা।

২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শফিউল বারী বাবু। নবম সংসদ নির্বাচনে নিজ জন্মস্থান লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। শফিউল বারী বাবু বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি।

২০০৯ থেকে ২০১২ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ ছিলেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা। তার পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল থেকে নির্বাচন করতে চান। টুকুর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আমিরুল ইসলাম খান আলীম। তিনিও বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা।

এছাড়া রাজনীতির বাইরে যারা: ছাত্রদলের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল করিম শহিদ। ১৯৭৯ সালের শেষের দিকে এই পদ পান তিনি। বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। এককালের তুখোড় এই ছাত্রনেতা বর্তমানে টাঙ্গাইলের একটি কলেজে শিক্ষকতা পেশায় রয়েছেন।

এনামুল করিম শহিদের পরে ছাত্রদলের আহ্বায়কের পদে আসেন গোলাম সরোয়ার মিলন। এরশাদ সরকারের সময় দল ছেড়ে চলে যান জাতীয় পার্টিতে। এর কিছু দিন পরেই রাজনীতি থেকে সরে যান তিনি। ১/১১-এর সময় আবারও রাজনীতিতে জড়িত হন ফেরদৌস কোরেশীর দল পিডিপিতে।

গোলাম সরোয়ার মিলনের মতোই অবস্থা এককালের তুখোড় ছাত্রনেতা আবুল কাশেম চৌধুরীর। ১৯৮৩ থেকে ৮৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এরশাদ সরকারের সময় বিএনপি ছেড়ে চলে যান এরশাদের সঙ্গে। এর কিছুদিন পরেই রাজনীতি থেকে সরে যান তিনি। ১/১১-এর সময় তিনি পিডিপিতে যোগ দিলেও বর্তমানে কোনো দলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই তার।

১৯৮৬ ও ৮৭ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন জালাল আহমেদ। পরে রাজনীতি ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়।

১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আমানউল্লাহ আমানের আহ্বায়ক পদে থাকাকালীন যুগ্ম-আহ্বায়কের পদে ছিলেন সানাউল হক নীরু। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে একাধিকবার দুর্ব্যবহার করে বর্তমানে দলচ্যুত।

২০০৩ ও ০৪ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলে সাহাবুদ্দিন লাল্টু। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে অভিমানে দল ছেড়েছেন তিনি। বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন তিনি।

এছাড়া মারা গেছেন ৩ জন: ১৯৭৯ সালে ছাত্রদলের প্রথম সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন আকম গোলাম হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নেতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন দীর্ঘদিন। বিএনপির একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে তার ছিল খ্যাতি। বেশ কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।

ছাত্রদলের শ্রেষ্ঠ সংগঠক বলে পরিচিত মাহবুবুল হক বাবলু। ১৯৮৬ সালের শেষের দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হয়ে ১৯৮৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিলেন। এরশাদ সরকারের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলে বোমা হামলায় নিহত হন তিনি।

১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নাসিরুদ্দিন আহমেদ পিন্টু। এরপর ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি। পিলখানায় বিডিআর হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে গত বছরের ৩রা মে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে মারা যান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।

ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ই এপ্রিল রাতে নিজ বাসায় ফেরার পথে রাজধানী ঢাকার মহাখালী থেকে নিখোঁজ হন তিনি। তখন থেকেই কোনো হদিস মেলেনি তার। ইলিয়াস আলী ছিলেন একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা। ১৯৯২ সালের শেষের দিকে তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গুম হওয়ার পরও ইলিয়াস আলী বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতার পদে রয়েছেন।

২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ পান। ২০০৯ সালে ছাত্রদল থেকে বিদায় নেয়ার পর তিনি নবম জাতীয় সংসদে তার নিজ জন্মস্থান খুলনা থেকে নির্বাচন করবেন বলে ব্যাপক কাজ করেন। সেখান থেকে মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচন করেন ঢাকা-১৮ আসনে। তবে নির্বাচনে হেরে যান তিনি। বর্তমানে বিএনপির তথ্য সম্পাদকের পদে আছেন।

২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। তার সভাপতি থাকাকালীন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন হাবিবুর রশিদ হাবিব। দু’জনেই বিএনপির রাজনীতিতে ভাল অবস্থানে রয়েছেন।

বর্তমানে ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান। দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সর্বশেষ ছাত্রদলের ৭৩৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin