গ্রেপ্তার হতে পারেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা

রায়ের আগেই বড় ধরনের নাশকতা এবং জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা। এ কারণেই আজ থেকেই ঢাকা সহ সারাদেশে নিরাপত্তা সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। গ্রেপ্তার হতে পারেন বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর হলো, রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি আগে থেকেই সহিংসতা ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে পারে। এছাড়াও কিছু জঙ্গিকে বিএনপি নাশকতা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সারা দেশে বিএনপির কোন কোন নেতাকর্মী সন্ত্রাস ও সহিংসতা করছে তার একটি তালিকা তৈরি করেছে। রায়ের আগেই এইসব নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে। বিএনপিকে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো সন্ত্রাস করতে দেওয়া হবে না।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির সঙ্গে বিভিন্ন জঙ্গি নেটওয়ার্কের যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তারেক জিয়া এবং আইএসআইয়ের মাধ্যমে একাধিক জঙ্গি সংগঠন বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটনা পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে শনিবার থেকেই। আইন-শৃংঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, রায়ের আগেই শীর্ষ পর্যায়ের অনেক বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

সরকারের একাধিক সূত্রগুলো বলছে, ‘১ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু হচ্ছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই তিনটি দিবসকে ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হবে।

জঙ্গিরা উন্মুক্ত স্থানগুলোকে টার্গেট করতে পারে এমন তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে আছে। তবে, বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা আন্দোলনের কথা স্বীকার করলেও জঙ্গি হামলা ও নাশকতার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা বলেছেন, ‘সরকার জঙ্গি বিরোধী অভিযানকেও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়।’ তাঁর মতে, ‘জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যদি সরকার বিএনপিকে জড়ায় তাহলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ।’

তবে সরকারের একাধিক নেতা বলেছেন, ‘জনগণের জীবন ও নিরাপত্তা সবার আগে। আন্দোলনের নামে যারা জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে চাইবে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।’ একাধিক সূত্র বলছে, আন্দোলন বা উস্কানি দিলেই শুধু মাঠ পর্যায়ের নেতা নয় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ যেমন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রহুল কবির রিজভী,গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মির্জা আব্বাসের মত নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করা হবে। রায়ের তারিখ ঘোষণার পরপরই বিএনপির অনেক নেতাই আত্মগোপনে গেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে।

শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয় বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান। তিনি জানান, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে এই বৈঠকে।

খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়েও আওয়ামী লীগ আগের অবস্থানেই রয়েছে। ফলে এসব বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করে দলের করণীয় নির্ধারণ করতেই মূলত সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটির বৈঠকে বসেছেন তিনি।

যেনতেন একটা রায় জনগণ মেনে নেবে না: ফখরুল
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘এতো সোজা নয় দেশনেত্রীকে যেনতেন একটা রায় দেবেন। জনগণ মেনে নেবে না।’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্বেচ্ছসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীর মুক্তির দাবিতে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রতিবাদ সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকার ‘অন্যায় আচরণ’ করছেন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দুই বারের বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন।’

‘তার সঙ্গে আপনারা যে আচরণ করছেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে তা নজিরবিহীন। আমরা এর নিন্দা জানাই। জাতি এর জন্য কোনো দিন আপনাদের ক্ষমা করবে না।’

সরকার সুপরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগকে ‘করায়ত্ত করেছে’ অভিযোগ করে মির্র্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে যে মামলার রায় দেওয়া হবে সেটি কোনো মামলাই হয় না। তার আইনজীবীরা প্রতিটি অভিযোগ খণ্ডন করেছেন এবং প্রমাণ হয়েছে, এই মামলা কোনো মামলাই হতে পারে না। সম্পূর্ণ মিথ্যার ওপর এই মামলা হয়েছে।’

‘যে ট্রাস্ট্রে খালেদা জিয়ার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই, যে ট্রাস্ট্র গঠনে তার কোনো মন্তব্য নেই, কোনো ডকুমেন্টে স্বাক্ষর নেই, কোনো নির্দেশনা নেই। একটা জাল ফাইল-নথি হাজির করা হয়েছে। আমাদের আইনজীবীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, এই নথিটি সম্পূর্ণভাবে জালিয়াতি করে ঘষামাজা করে কোনো স্বাক্ষর ছাড়াই রাষ্ট্রপতির প্যাডে সেই নথি তৈরি করা হয়েছে’, বলেন তিনি।

অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে নজিরবিহীন তাড়াহুড়ো করে মামলা শেষ করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শেষ দিনে আইনজীবীরা আরো কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাদের কথা বলার কোনো সুযোগ না দিয়ে বক্তব্য শেষ করা হয়েছে এবং মামলার রায় তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যিনি (খালেদা জিয়া) ১৬ কোটি মানুষের আশা-ভরসাস্থল তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায় (ক্ষমতাসীনরা)- এটা কি হতে দেবেন?’

তিনি আরো বলেন, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। আসুন জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সবাই মিলে রুখে দাঁড়াই।

‘কেন এই জোর করা? আইনের স্বাভাবিক যে গতি তা বন্ধ করে দিয়ে দ্রততার সঙ্গে কেন এই রায় দেওয়ার চেষ্টা? কারণ একটাই বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’

রায়কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে তা কঠোর হাতে দমনের যে কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তার প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই কথা বলছেন কেন? কারণ রায় তো আগে থেকেই নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। আপনারা বলছেন ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে রায় হতে যাচ্ছে।’

আয়োজক স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin