আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীল ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে নাশকতার ছক কষে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত-শিবির। সারাদেশে জামায়াত-শিবিরকে নতুনভাবে সংগঠিত করা হচ্ছে। রংপুরে হিন্দু বাড়িঘরে হামলা ঘটনায় জামায়াত শিবির জড়িত বলে পুলিশের দাবি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে জামায়াত-শিবির আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে এ ধরনের আরও হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় জামায়াত আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে বিএনপির নেতৃত্বে বিশ দলীয় জোটভুক্ত হয়ে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচন অংশ নিতে পারে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির উদ্যোগে যে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে জামায়াত-শিবিরের কর্মী-ক্যাডাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করেছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। রংপুরে হিন্দু পরিবারে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে জামায়াত-শিবিরের মধ্যে আবারও সংগঠিত হওয়ার মতো শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে হামলা চালিয়েছে এমন দাবি করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ। রংপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সামনে নির্বাচন’। রংপুরে হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে পাওয়া গেছে, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে জামায়াত-শিবির। পুলিশের তদন্তের উদ্বৃতি দিয়ে ইতোমধ্যেই গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহলকে অবহিত করেছেন বলে জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানান, রংপুরে হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনার সময়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এবং পরবর্তী পর্যায়ে যাা গ্রেফতার হয়েছে তাদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী। শুক্রবার জুমার নামাজের দিনকে সামনে রেখে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে রংপুরে হিন্দু বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে কয়েক হাজার মানুষ।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হন। এ হামলায় বিএনপির স্থানীয় নেতারা ছিলেন বলেও দাবি করেছেন রংপুরের কোতোয়ালি থানার পুলিশ। শুক্রবার হামলার আগে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও হামলা থামাতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়তে বাধ্য হয়। তখন কর্তব্যরত পুলিশ দেখেছে হামলা চালিয়েছে কারা?
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রংপুরে হিন্দু বাড়িঘরে হামলার নেতৃত্বে যারা ছিল তাদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের সাক্ষ্যদানে বলেছেন, রংপুর সদর উপজেলা ওলামা দলের আহ্বায়ক এনামুল হক মাজেদি, স্থানীয় বিএনপি নেতা মাসুদ রানা এবং শলেয়াশাহ জামে মসজিদের ইমাম সিরাজুল ইসলামকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।
পুলিশ রাতের বেলায় তাদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু পালিয়ে যাওয়ায় তাদের ধরা যায়নি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টার জন্য রংপুরের হিন্দু বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং এ ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে রংপুরের হিন্দু বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রংপুরের স্থানীয় লালচাঁদপুর গ্রামের মুদি দোকানি আলমগীর হোসেন এক হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ২৯ অক্টোবর থানায় মামলা করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত মঙ্গলবার ওই যুবককে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। তারপর তিন দিন বাদে আবার বিক্ষোভের পর হয় হামলা। মঙ্গলবার দুপুরে পাগলাপীর এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশে কয়েকশ’ মানুষ ছিল। বিক্ষোভের পর ওই হিন্দু যুবককে গ্রেফতারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। পরে পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে ওই হিন্দু যুবককে গ্রেফতারের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়। এরপরেও ওই গ্রেফতার না হওয়ায় শুক্রবার দুপুরে আবার বিক্ষোভ মিছিল হয়।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রংপুরের হিন্দু বাড়িতে হামলার ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে। বর্তমান সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নেই, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এ ধরনের হামলা ও অগ্নিসংযোগ করার উদ্দেশ্য।
সূত্র: জনকণ্ঠ