গাজীপুরে নির্বাচনের আগেই হার মেনে নিলো বিএনপি?

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিন ছিল আজ। দিনের শুরুতে গাজীপুরের কিছু অংশে বৃষ্টি হলেও দিনটি ছিল মোটামুটি রৌদ্রজ্জ্বল। এমন দিনে প্রচারণা নিয়ে দুই রকম চিত্র দেখা যায় প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শিবিরে।

গাজীপুরের শালনায় দিনের প্রথম কর্মসূচি পালন করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকের জাহাঙ্গীর আলম। সকাল নয়টার দিকে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অসংখ্য মানুষ পথসভায় উপস্থিত ছিলেন। জাহাঙ্গীর আলম শালনায় বললেন, নির্বাচনে নৌকার পক্ষে একটি জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

গাজীপুরের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবেন। গাজীপুরের মানুষ আর অনুন্নয়ের পথে থাকতে চান না। শালনার  পর জাহাঙ্গীর আলম  কোনাবাড়ি যান। সেখান থেকে বাসন এলাকার চৌরাস্তায় পথসভা করেন। এই পথসভাতেও অসংখ্য মানুষ যোগ দেন।

এখানে জাহাঙ্গীর   আলম বলেন, এখন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সরকার। নির্বাচিত হলে তাঁর পরিকল্পনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের কথা তিনি বলবেন। বাসনের সভার পর জাহাঙ্গীর আলম জয়দেবপুরে ২৪ নম্বরও ওয়ার্ডে যান। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

তারপর কোনাবাড়িতে গিয়ে সভা  করেন। দুপুরে হারিকেনের নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি আবারও উন্নয়নের স্বার্থে তাঁকে নির্বাচিত করার জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে জনগণের কাছে আবেদন করেন। এসময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও মহানগর সভাপতি মো. আজমত উল্লাহ খান উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের পর জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর শহরের শিববাড়ি এবং আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে, টঙ্গী মিলগেট, গাছা বাজার ও বোর্ডবাজার এলাকায় পথসভায় বক্তব্য দেন। বিকেলে মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪২৫ কেন্দ্র কমিটির নেতাকর্মীরা মিছিল করেন।

এ তো গেল জাহাঙ্গীর আলমের দিনের ফিরিস্তি কী করেছেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার? হাসান উদ্দিন সরকার আজ প্রচারণার কাজেই নামেন বেশ দেরি করে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে তিনি কেবল একটি প্রেস ব্রিফিং করেছেন।

আজ বেলা ১১টার দিকে টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল সংলগ্ন বিএনপি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংটি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর অনেকটা সময় কেটে গেলেও হাসান সরকারকে জনসংযোগ করতে বা অন্য কোনো ধরনের প্রচারণা কাজে অংশ নিতে দেখা যায়নি।

বেলা ২ টা পর্যন্ত গাজীপুরে বিএনপি কার্যালয়ে নিশ্চল বসে ছিলেন হাসান সরকার। দিনের বাকি সময়টাতেও উল্লেখযোগ্য কোনো নির্বাচনী প্রচারণা দেখা যায়নি বিএনপি প্রার্থীর। বরং দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায়ই ব্যস্ত দেখা যায় তাঁকে।

গাজীপুরে প্রচারণার শেষ দিকে এমন কর্মকাণ্ডের পরও আজ বিকেলে রাজধানীর গুলশানস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গাজীপুরে যদি ন্যূনতম নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে বিএনপির প্রার্থী বড় ব্যবধানে জয়ী হবেন।

এদিকে গাজীপুরের আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলছেন ভিন্নকথা। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিএনপি প্রার্থী হাসান সরকার প্রচারণায় ভোট পর্যন্ত চাচ্ছে না। করছেন সরকারের সমালোচনা। বিএনপি বিভিন্ন দাবি জনগণের কাছে বলতেই সময় পার করেছেন হাসান সরকার।

অবস্থাদৃষ্টে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, তবে কি বিএনপি গাজীপুর নির্বাচনে অংশগ্রহণ শুধু সরকারের সমালোচনার জন্যই। এলাকার উন্নয়ন ও পরিকল্পনার কোনো কথা না বলে সরকারের সমালোচনাতেই তারা মন ভোলাতে চান গাজীপুরবাসীর। বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, তবে কি গাজীপুরে হার মেনে নিয়ে এখন নির্বাচন পরবর্তী সরকারের সমালোচনার গতাণুগতিক কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি?

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin