bnp-flag

খোকা, সালাম, মিলন, বেবি নাজনীন মিলে কি করছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে?

মহা ‘সংকটে’ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। বহু বছর ধরে কমিটি নেই। গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত নেতারা। কেউ কারো কথা মানছেন না। দলের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচীও পালন হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন সিনিয়র নেতা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলেও তারা কোন ভূমিকা রাখছেন না বা ভূমিকা রাখার দায়িত্ব পাচ্ছেন না।

এর উপর বিএনপির কথিত মালিকানা নিয়ে তৈরি হয়েছে মারাত্বক জটিলতা। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার কারণে কেন্দ্রও বিএনপির যুক্তরাষ্ট্র শাখাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে পারছে না। ফলে এ পরিস্থিতি থেকে সহসা উত্তরণের পথ দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতারা বলেন, আর দশটি দেশের বিএনপির মতো নয় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ সব দিকে এগিয়ে আছে এখানকার নেতারা। নেতাদের দক্ষতার কারণে কেন্দ্রের সুদৃষ্টি থাকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির দিকে।

বাংলাদেশ থেকে আসা বিএনপি এবং বিএনপি ঘরনার বিশিষ্টজনরাও প্রতিনিয়ত যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে বা বিএনপির কর্মসূচীতে। এছাড়া দিনে দিনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীদের সংখ্যা বেড়ে চলায় বিএনপি সমর্থকও বাড়ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, এক/ এগারোর সময় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতার চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতাদের দৃষ্টি কাড়ে। ওই সময় প্রায় প্রতিদিনই জাতিসংঘ সদর দপ্তর এবং জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় প্রতিবাদ সমাবেশ করতো যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিও অঙ্গ এবং সহযোগি সংগঠনের নেতারা।

দলের নেতারা বলছেন, সেই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এখন বেহলা দশা। দীর্ঘ ৫ বছর কমিটি না থাকার কারণে গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত নেতারা। মাঝে মধ্যে একসঙ্গে অনুষ্ঠানে মিলিত হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ স¤্রাট ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু।

আরেকটি গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহসভাপতি গিয়াস আহমেদ।

সাবেক সহসভাপতি শরাফত হোসেন বাবুর নেতৃত্বে রয়েছে ৩৪ অঙ্গও সহযোগি সংগঠন। যেখানে অগ্রণী দায়িত্ব পালন করেন সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসিম ভূঁইয়া। গণমাধ্যমের সংবাদ দখল করে আছেন সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন বাদল। নিজেইে একটি বলয় তৈরি করে আছেন সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান ভূইয়া মিল্টন। সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ারও মেন্টইন করছে একটি গ্রুপ। এছাড়া দু‘এক গ্রুপের সঙ্গে দেখা যায় সাবেক সভাপতি ডা. মুজিবুর রহমানকে।

নেতারা আরও বলেন, কেন্দ্রের কোন কর্মসূচী আসলে দেখা মেলে নেতাদের বিভক্তিা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরেও নেতারা আলাদা আলাদা ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। এসময়ও তারা এক হতে পারেননি। বিভক্ত হয়ে ছুঁটেছেন লন্ডন বা ঢাকায়। কিন্তু কার্যত কোন ফল বয়ে আসেনি। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতারা দেন দরবার করেও পায়নি কমিটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, বিএনপি নেতারা চরমভাবে হতাশ। মাঝে মধ্যে লন্ডন বা ঢাকা থেকে প্রতিনিধি দল এসে ব্যাপকভাবে আথিতিয়তা নিচ্ছেন কিন্তু কমিটির দেখা নেই। এছাড়া কেন্দ্রের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলেও তারা ঠুঁটো জগন্নাথ। তারা একবার এ গ্রুপে, আরেক বা ওই গ্রুপের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি-বিশেষ অতিথি হচ্ছেন।

সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে লন্ডন থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে গেছেন একাধিক নেতা। তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিভক্ত গ্রুপগুলোর সঙ্গে। তারা গিয়ে লন্ডনে রিপোর্ট দেবেন বলে ব্যাপক আতিথিয়তাও নিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।

সূত্র আরো জানায়, কেন্দ্রের দায়িত্বশীল ও প্রভাবশালী নেতা সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা অসুস্থতাজনিত কারণে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। তিনি খুব কমই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও নানা সময় দলের নেতাদের নানা ইস্যুতে তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। এক হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। কে কার কথা শুনে?

সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহেসানুল হক মিলন কিছু দিন দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিভিন্ন স্ট্রেট ও সিটি কমিটি গঠন কররার নামে তিনি উল্টো জন্ম দিয়েছেন বির্তকের। তার সামনে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় অপ্রিতকর ঘটনা পুলিশ এসে থামাতে হয়েছে। পরে মিলনকেই দ্রুত জ্যাকসন হাইটস ত্যাগ করতে হয়েছে নেতাদের বাঁধার মুখে। সেই থেকে তিনি আর কোন কর্মসূচীতে নেই।

বিএনপি নেতা ও সাবেক ডেপুটি মেয়র এম এ সালাম মাঝে মধ্যে আসেন নিউইয়র্কে। তিনি এসে নানা সময় বিভক্ত গ্রুপগুলোর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মধ্যমনি হন। দু/এক দিন আলোচনায় থেকে আবারও ফিরে যান।

বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক সম্পাদক বেবী নাজনীন বছরের বেশির ভাগ সময় থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনিও অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়া এবং নিজের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সম্প্রসারণ ছাড়া কিছুই করছেন না।

দলের নেতারা বলেন, এ অবস্থায় কথিত বিএনপির মালিকানা দাবী নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্বক জটিলতা। মালিকানা দাবী আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিবাদী হয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা বাবুল ও সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন, সাবেক সহসভাপতি শরাফত হোসেন বাবু, সাবেক কোষাধ্যক্ষ

জসিম ভূঁইয়া ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন বাদলসহ কয়েকজন। বিবাদী হওয়ার পরও তারা আদালতে বাদীকে মোকাবেলা করছে পৃথক পৃথকভাবে। সবাই মনে করেছিল ‘সংকটে’ নেতারা এক হবেন। কিন্তু তা হচ্ছে না।

এদিকে আইনগতভাবেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে স্বীকৃতি দিতে পারছে না কেন্দ্র। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার কারণে বিএনপির যুক্তরাষ্ট্রের শাখা বা কমিটি আছে বলে দাবী করা যাচ্ছে না। সে সুযোগও কাজে লাগচ্ছে বিভক্ত গ্রুপগুলো। ফলে দিন যত যাচ্ছে সংকট ঘনিভূত হচ্ছে। আজ বা কাল কমিটি ঘোষণা করা হবে এমন প্রত্যাশায় বসে থাকা নেতারা নিজেদের গুটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির কোন শাখা নেই। বিএনপি নেতারা নিজ দায়িত্বে এবং ভালোবেসে দল করছে।

সাপ্তাহিক আজকাল

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin