খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি: ড. খন্দকার মোশাররফ

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে সিইসি কেএম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জানা যায়, আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সাত দিন আগে থেকে সেনা মোতায়েন দাবি করে বিএনপি। একই সঙ্গে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিও জানায় নির্বাচনে সরকারি দলের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলটি। দলীয় প্রতীকে এই দুই সিটিতে ভোট হবে আগামী ১৫ মে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে এক বৈঠকে এসব দাবি জানায় বিএনপি।

লিখিত দাবিনামায় বলা হয়, দুই সিটি নির্বাচনের সাত দিন আগে থেকে নির্বাচনী এলাকায় টহলসহ প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েন করতে হবে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুণ অর রশীদকে প্রত্যাহার করারও দাবি জানিয়েছে বিএনপি। কারণ নির্বাচনী অনিয়মের কারণে ২০১৬ সালে কমিশন তাকে প্রত্যাহার করেছিল। তিনি ২০১১ সালের ৬ জুলাই সেই সময়ের বিরোধীদলীয় চিপ হুইপ ও বিএনপি নেতা জয়নুল আবদীন ফারুককে পিটিয়েছিলেন বলে দাবিনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এর অাগে সকালে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে কথা বলতে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠকে বসে। মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের ৬ সদস্য আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে বৈঠকে অংশ নেয়।

প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে আট সদস্যের এই প্রতিনিধিদল উপস্থিত হয়।

অপরদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্ব কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ১০ জনের মনোনয়ন দাখিল

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মেয়র পদে ১০ জন, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের ১৯টি কাউন্সিলর পদের জন্য ৮৭ জন ও ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৯৪ জন প্রার্থীসহ মোট ৩৯১ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন।

মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষদিনে সকাল থেকেই প্রার্থী, কর্মী ও তাদের সমর্থকদের গাড়ি ভাড়া করে লোকজন নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস জেলা শহরের রথখোলার বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামের দিকে ছুটতে থাকে। এ সময় প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার ও দলীয় প্রতীক নিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করে তাদের কর্মী-সমর্থকরা শোডাউন করে। দুপুর না গড়াতেই প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতিতে আশপাশের এলাকাসহ পুরো শহর সরগরম হয়ে উঠে। সৃষ্টি হয় যানজটের। রিকশা পর্যন্ত চলার উপায় ছিল না। এ যেন ছিল নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙের মহোৎসব।

নির্বাচনে শেষ দিন পর্যন্ত মোট ৩৯১ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারসহ মেয়র পদে মোট ১০ জন প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা ফজলুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আফসার উদ্দিন, মো. সানাউল্লাহ মিয়া ও ফরিদ আহমেদ। মেয়র পদের নয়জন প্রার্থী বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর আগে বুধবার জাসদ মনোনীত প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানা তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন।

সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের ১৯টি কাউন্সিলর পদের জন্য ৮৭ জন ও ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৯৪ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন।

বৃহস্পতিবার মেয়র পদপ্রার্থীদের পাশাপাশি সংরক্ষিত ওয়ার্ড ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরাও উৎসবমুখর পরিবেশে জেলা শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ১৮ জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯৭ জন এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ৩৮৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তার মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, আব্দুল হাদী শামীম, মো. মুজিবুর রহমান, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সফিকুল আলম বাবুল, আব্দুর রউফ নয়ন, অধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন মহি, কাজী ইলিয়াস, যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান মতিসহ প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম বক্তব্য দিতে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সুন্দর ও বাসযোগ্য মহানগর গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন ও সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল আলম বাবুল, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন সরকার, ডা. মাজহারুল আলম, মীর হালিমুজ্জামান ননী ও সোহরাব উদ্দিনসহ প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

হাসান উদ্দিন সরকার মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সবার সহযোগিতা চান এবং এই নির্বাচনকে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে রূপান্তরের কথা বলেন। সেই সঙ্গে তিনি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনেরও দাবি জানান।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘আচরণবিধি যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রার্থীদের সঙ্গেও কথা হয়েছে মনোনয়নপত্র দাখিল করার সময় কোনো প্রার্থীর সঙ্গে যেন পাঁচজনের বেশি লোক না আসে। তারপরও পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটদের বলে দিয়েছি কোথাও যাতে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন। আচরণবিধি যাতে লঙ্ঘন না হয় এজন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আচরণবিধি বিলি করছি, মাইকিং দিচ্ছি, প্রশাসনও চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল আজ। তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১৫-১৬ এপ্রিল এবং প্রার্থিতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ এপ্রিল। ২৪ এপ্রিল প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং ১৫ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

গত ৩১ মার্চ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর এটি হবে এ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন। এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin