khaleda_zia

খালেদা জিয়া ইস্যুতে আ. লীগের যে শর্ত মানতে হবে বিএনপিকে

দুর্নীতির মামলায় কারান্তরীণ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনের বাইরে রাখাই এখন একমাত্র কৌশল আওয়ামী লীগের। সেটা কারাগারে রেখে হোক বা দেশের বাইরে পাঠিয়ে হোক— কোনোটাতেই আপত্তি নেই ক্ষমতাসীনদের। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে এমন মনোভাবের কথা জানা গেছে।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদাকে কারাগারে রেখে জাতীয় নির্বাচন করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি চিন্তায় আছে আওয়ামী লীগের।

সেটা সুচিকিৎসার জন্যও হতে পারে, অথবা অন্য কোনও কারণ দেখিয়েও হতে পারে। যেকোনও কারণে খালেদা বিদেশ যেতে চাইলে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

দলটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া যেহেতু দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত, ফলে তাকে নির্বাচনের বাইরে রাখার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আর সেই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না আওয়ামী লীগ।ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো দল ও সরকার উভয়ের জন্য স্বস্তির হবে।

এটা খালেদা জিয়াকে ‘মাইনাস’ করার প্রক্রিয়া কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমরা ‘মাইনাস’ বা ‘প্লাস-এর চিন্তায় নেই, আমাদের চিন্তা হলো নির্বিঘ্নে আগামী নির্বাচন সম্পন্ন করা। খালেদার অংশগ্রহণে সেটা সম্ভব নয় বলে আওয়ামী লীগ মনে করে।’ তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে এবারও তা করার সম্ভাবনা একেবারে কম নয়।

আমরা মনে করি, অতীতে খালেদার নির্দেশেই এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। ফলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচনের পথে খালেদা অন্তরায়। আর তাই খালেদাকে বাইরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে খালেদা জিয়া দেশে থেকে হোক আর বাইরে থেকে হোক, নির্বাচনের বাইরে থাকবেন— এই শর্তে রাজি হতে হবে। এর ফলে বিএনপি অনেক ক্ষেত্রে ছাড় পেতে পারে।’নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো দাবি করছে, খালেদাকে বাইরে রেখেই বিএনপিকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজনীতি করতে হবে।

এই শর্তে বিএনপি রাজি হলে নির্বাচনে আসার পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করা হবে। সেক্ষেত্রে অন্তরালে সংলাপও হতে পারে বিএনপির সঙ্গে। তবে তা হতে হবে অবশ্যই খালেদা জিয়া-তারেক রহমানকে বাইরে রেখে। এই শর্তে রাজি না হলে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক বা না করুক কোনও ‘স্পেস’ দেওয়া হবে না বিএনপিকে।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের এ অবস্থানের কথা এরই মধ্যে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের এই বার্তা দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এদের মধ্যে একজন সুশীল হিসেবে খ্যাত, অন্যজন বিএনপির সাবেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি বর্তমানে অন্য একটি দল গঠন করেছেন।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শর্তে রাজি হলে আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা বিএনপির সঙ্গে হবে আওয়ামী লীগের। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা, ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকানোর নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা এবং সবশেষ খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরে সমবেদনা জানাতে ছুটে গেলেও বাসার গেট বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঢুকতে না দেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসতে রাজি নন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা।

তবে খালেদাকে বাইরে রেখে আলোচনায় বসতে চাইলে বিএনপির অন্য নেতাদের সঙ্গে সেটা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা।আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ আরেক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হবে না।

সার্বিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্যও নিরাপদ হবে। এটা হলে খালেদা জিয়া জেলে রয়েছেন বলে বিএনপি জোরালোভাবে আর দাবিও তুলতে পারবে না। এছাড়া তাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার দাবিও বিএনপির জন্য দুর্বল হয়ে পড়বে। পাশাপাশি বিএনপির তরফ থেকে রাজপথে আন্দোলনের চাপও কমে আসবে। ভারমুক্ত হবে সরকার। জনগণের দৃষ্টিও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হবে।

banglatribune

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin