বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মায়ের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। নামাজ পড়ে মায়ের জন্য দোয়া ছাড়া বিশেষ কোনো আয়োজন নেই।
তবে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতেও ছাড় নেই খালেদা জিয়ার। জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী হওয়ায় আদালত মুলতবি চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করেননি আদালত। কিন্তু শুধুমাত্র খালেদা জিয়াকে বৃহস্পতিবারের (১৮ জানুয়ারি) জন্য জামিন দেয় আদালত।
অন্য আসামিদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শুনানি চলমান থাকবে বলেও জানান আদালত। তবে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন এ জামিন গ্রহণ করেননি খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার নির্ধারিত যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন তিনি।
এসময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়ার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী এটা যেহেতু ধর্মীয় বিষয় সেহেতু আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
এরপর আদালত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এমনকি অন্য আসামিদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শুনানি চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছেন বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
তবে খালেদা জিয়া তার ব্যক্তিগত অব্যাহতি গ্রহণ করেননি।
তিনি বৃহস্পতিবার ধার্য দিনে আদালতে উপস্থিত হবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
তিনি জানান, খালেদা জিয়া শুনানির মুলতবি চেয়েছিলেন। তা মঞ্জুর না করে আদালত খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে ওই দিনের জন্য অব্যাহতি দেন। তিনি ব্যক্তিগত জামিন চাননি। তাই তিনি আগামীকাল আদালতে আসবেন।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) যুক্তি-তর্ক শুনানির বিরতির পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ আবেদন জানান। এরপর আসামি শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী আহসানুল্লাহ।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক ২ ঘণ্টা উপস্থাপন শেষে আদালত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত মুলতবি করে।
সরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে যুক্তি-তর্ক শেষ হলে অপেক্ষমান আছে অপর আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল।
এর আগে খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজ্জাক খান, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ যুক্তি উত্থাপন করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির প্রধান আসামি খালেদা জিয়া।
অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি মোট ছয়জন। অন্য পাঁচ আসামি হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে আছেন। এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন।
২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করা হয়। মামলায় এতিমদের সহায়তা করার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনে দুদক।
এদিকে ২০০৮ সালের এই দিনে তা মাতা তৈয়বা মজুমদার ইন্তেকাল করেন। জেলার জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। মায়ের মৃত্যুকালে বেগম খালেদা জিয়াসহ তার দুই ছেলে সেনাসমর্থিত জরুরি সরকারের কারাগারে বন্দি ছিলেন।
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের লাশ দেখেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মহানগরীরর আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত জানাজা নামাজে শরিক হন বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার ছোটভাই আরাফাত রহমান কোকো। কোকো ইন্তেকাল করেছেন। তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডনে।
১৯২০ সালে ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তৈয়বা মজুমদার। মরহুমা তৈয়বা মজুমদারের তিন মেয়ের মধ্যে সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী খুরশিদ জাহান হক ২০০৭ সালে ইন্তেকাল করেন। দুই ছেলে হলেন মেজর (অব.) সাইদ এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দার। সাঈদ এস্কান্দারও ইন্তেকাল করেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া নিজ বাসায় মায়ের মৃত্যুবাষির্কী পালন কররেন সাদামাটাভাবে। চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) প্রতিদিনের মতোে আদালত থেকে ফিরে মায়ের মৃত্যুবাষির্কীর দিনও নামাজ পড়ে মৃত মায়ের জন্য দোয়া করবেন।