জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্বোধনী ভাষণ ফেসবুকে লাইভ হবে। কাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে এই ভাষণ লাইভ হতে পারে। এর আগে সকাল ১০টা থেকে বৈঠকের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান এ কথা বলেন।
ফেসবুকের তিনটি পেজ থেকে এই ভাষণ দেখা যাবে। এগুলো হলো: Facebook.com/bnp.communication, Facebook.com/bnpbd.org ও Facebook.com/bnplivenettv।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, উদ্বোধনী ভাষণ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের সম্প্রচার করতে দেওয়া হবে। তবে সরকারের বাধার কারণে যদি টেলিভিশনগুলো ভাষণ সরাসরি প্রচার করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে মানুষ যেন ভাষণ দেখতে পারে এ কারণে ফেসবুকে লাইভ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ধার্য করা হয়েছে। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরে বকশীবাজারের কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে বা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান এই দিন ধার্য করেছেন।
এ রায়কে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে উত্তাপ বয়ে যাচ্ছে। এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছেন আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান, জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এরও আগে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর এই মামলায় যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করা হয় আদালতে।
আদালত সূত্র জানায়, দুদক ও আসামি পক্ষে ১৬ কার্যদিবস ধরে যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। আর ২৩৬ কার্যদিবস শুনানির পর এ মামলা রায়ের পর্যায়ে এসেছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার নথি থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মাগুরার বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
এরপর গত বছর ১৯ ডিসেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। ২০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়ে ২১, ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ৩, ৪, ১০, ১১ ও ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা।
এর পরে এ মামলার অন্যতম আসামি শরফুদ্দিননের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয় ১৬ জানুয়ারি। ১৭, ১৮, ২২, ২৩ ও ২৪ যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী। ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ। মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ তিনজন পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে যুক্তি উপস্থানের সুযোগ নেই।
এর মধ্যে গত বছর ২৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বকশীবাজারের আলীয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আদালতে তার জবানবন্দী দানকালে ৬ষ্ঠ দিনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, স্বার্থান্বেষী মহলের নির্দেশেই বিরাগের বশবর্তী হয়ে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অসত্য সাক্ষী দিয়েছেন।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তিনি (মামলার তদন্ত কর্মকর্তা) আমার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে যে জবানবন্দী প্রদান করেছেন তা সর্বই ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে খালেদা জিয়া বলেন, রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষীদের সাক্ষ্যে আমি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমার ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এতিম তহবিল সংক্রান্তে কোনোরূপ অনুদান গ্রহণের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম- এরূপ কোনো বক্তব্য কোনো পর্যায়ে কোনো সাক্ষী দেয় নাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল সংক্রান্ত কোনো অনুদান গ্রহণ বা বিতরণের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম- এরূপ সাক্ষ্য রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীগণের কেউই বলেন নাই।