কুমিল্লায় হত্যা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা দুটি এবং নড়াইলে মানহানির একটি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদেনের ওপর আদেশ দেয়া হবে আগামী রবিবার (২৭ মে)।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আজ তৃতীয় দিনের মতো কুমিল্লায় হত্যা ও নড়াইলে মানহানির একটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। এদিন রাষ্ট্রপক্ষে অসমাপ্ত শুনানি শেষ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে আদালত জানান, ‘আগামী রবিবার (২৭ মে) বাকি মামলাটির শুনানি শেষে ঐদিনই আদেশ দেয়া হবে।’
গত সোমবার (২১ মে) এই তিন মামলার মধ্যে দুটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল। তবে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রস্তুতির জন্য সময় চান। পরে আদালত জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য মঙ্গলবার (২২ মে) দিন ধার্য করেন। মঙ্গলবার প্রথম দিনে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার বক্তব্য শেষ না হওয়ায় বুধবারের দিন ধার্য করেন আদালত।
বুধবার খন্দকার মাহবুব হোসেনের শুনানি শেষ হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি শুরু করেন। তার শুনানি শেষ না হওয়ায় আদালত আজকের দিন (বৃহস্পতিবার) ধার্য করেছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে শুনানি কথা থাকলেও অ্যাটর্নি জেনারেলের সময় আবেদনের ফলে শুনানি শুরু হয় দুপুর ২টা পর্যন্ত।
আদালতের অনুমতি নিয়ে তিন মামলায় রবিবার (২০ মে) হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
এর আগে গত ১৬ মে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। তবে তার কারামুক্তির জন্য আরও ৬টি মামলায় জামিন নিতে হবে। পাশাপাশি ৪টি মামলায় হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহারের প্রয়োজন রয়েছে।
আবেদন শুনানিতে অযথা সময়ক্ষেপণ করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল: খন্দকার মাহবুব
আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন অভিযোগ করে বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি করতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অযথা সময়ক্ষেপণ করছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে তৃতীয় দিনের মতো দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা ছিলো।
খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন শুনানিটি কার্যতালিকায়ও ছিল। দুটি মামলা কার্যতালিকার ৫ ও ৬ নম্বরে ছিল। সেই অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মামলাটি শুনানির জন্য সিরিয়ালে এলেও শুনানি শুরু করতে পারেননি খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। কারণ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলা দুটি শুনানির জন্য এলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় চান। সে অনুযায়ী আদালত শুনানির জন্য দুপুর ২টার পর সময় নির্ধারণ করেন।
এ সময় খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের দুর্ভাগ্য খালেদা জিয়ার কারাবরণকে দীর্ঘায়িত করার জন্য অযথা সময়ক্ষেপণ করছেন।’
মামলার বিষয়ে খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী বলেন, ‘অভিযোগে বলা হয়েছে খালেদা জিয়া অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিলেন সেই কারণেই বাসে কর্মীরা হাঙ্গামা করেছে এবং সেখানে পেট্রোল বোমা মারা হয়েছে। সেই কারণে লোক মারা হয়েছে। কিন্তু এজাহারে বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে এটুকুই বলা হয়েছে।’
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘যেহেতু খালেদা জিয়ার নাম এজাহারে ছিল না, পরবর্তীতে তার নাম ৭৭ জন আসামির মধ্যে ৫১ নম্বরে এসেছে। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পরোয়ানা নেই। তারপরও ফৌজদারি কার্যবিধিতে ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, যেক্ষেত্রে আসামির মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে সেক্ষেত্রেও যদি মহিলা হয়, অসুস্থ হয় বা অল্প বয়স্ক হয় তাকে জামিন দেওয়া যায়।
এইক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে জামিন না দেওয়ার আইনগত বিধান নাই। এইক্ষেত্রে আশা করছি, জামিন আদেশ আমরা পাব। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল এ ছোট দুটি মামলায় সময়ক্ষেপন করে তিনদিন যাবত ঠিকমতো শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেন না। একটি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার কাছ থেকে জাতি এটা প্রত্যাশা করে না।’
গত মঙ্গলবার এ দুই মামলায় শুনানি শুরু হয়। গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি শেষে আজ তৃতীয় দিন শুনানির দিন ধার্য হয়। গতকাল দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন তার অসমাপ্ত বক্তব্য শেষ করেন।
গত ২০ মে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন কুমিল্লার দুটি নাশকতার মামলা ও নড়াইলের মানহানির একটি মামলায় জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু কার্যতালিকায় শুধু কুমিল্লার হত্যা মামলা ও নড়াইলের মামলাটি একসঙ্গে আনা হয়।
অপরদিকে,কুমিল্লার বিস্ফোরক মামলাটিও আজ শুনানির জন্য রাখা ছিল।
এদিকে, ঢাকার মানহানি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলার জামিনের জন্য আবেদন করেছেন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের দুটি পৃথক অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তিনি। এ নিয়ে পাঁচটি মামলার জামিনের আবেদন করা হলো।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ আবেদন করেন। এ দুটি মামলাও আগামী সপ্তাহে শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।
গত ১৬ মে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। জামিন পেলেও তিনি মুক্তি পাননি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত। এ মামলার অপর আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচজনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা জরিমানাও করা হয়।
রায়ের পর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়েছে।