khaleda_zia

খালেদা জিয়ার জামিন : কী ভাবছে রাষ্ট্রপক্ষ?

কুমিল্লার হত্যা ও নাশকতার দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া ৬ মাসের জামিনের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করবে রাষ্ট্রপক্ষ। এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

খালেদার দুই মামলায় জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেয়ার পর আজ সোমবার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের একথা জানান।

মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন রেডি করেছি। আজকেই চেম্বার আদালতে যাব।’

এদিকে, খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, মানহানীর মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আবেদন করেছিলাম। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দেননি। পরে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করেছি। এটা জামিনযোগ্য অপরাধ। হাইকোর্টও জামিন দিতে পারে। আদালত বলেছেন, বিচারিক আদালত ঘুরে আসতে। এখন আমরা নড়াইলে যাবো। সেখানে আবেদন করবো।

আজ সোমবার কুমিল্লার দুই মামলায় হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সভাপতির কক্ষের সামনে এক ব্রিফিংয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন এ কথা বলেন।

এ সময় খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, নড়াইলের মামলায় ২৫ তারিখ ডেট ছিলো। ওই দিন বন্ধের দিন। তাই কাল ছিলো। সেখানে কালকে আদেশ দিয়েছে ৩০ তারিখ তারিখ রেখেছে। সেটা আমাদেরকে জানায়নি। আমরা সেশন কোর্টে আবেদন করিনি, তাই নট প্রেস করেছেন।

আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, অফিসিয়ালি খালেদা জিয়া তিনটি মামলায় অ্যারেস্ট। একটা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট। আর দুইটায় আজকে জামিন হয়েছে। এখন অন্য কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট নেই। আজকের আদেশের পর খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আইনগত বাধা নেই। তবে এরপর সরকারের যদি অসৎ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে কোনো মামলায় অ্যারেস্ট দেখাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে সোমবার সকালে খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার দুই মামলায় জামিন দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ। আর নড়াইলের মানহানির মামলার জামিন আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।

আদালতের অনুমতি নিয়ে এই তিন মামলায় ২০ মে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ওই আবেদনের উপর রোববার শুনানি শেষে সোমবার আদেশের দিন ধার্য করেন আদালত। সে অনুযায়ী আজ দুই মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করা হয়।

কুমিল্লার মামলা :
২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হায়দার পুলের চৌদ্দগ্রামে একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়। মামলাটি বর্তমানে কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১এ চলমান। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন আদালত। গত ২৩ এপ্রিল এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত আবেদনটির পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৭ জুন দিন ধার্য রাখেন। এ অবস্থায় শুনানি না করে এ মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করা হয়েছে।

নড়াইলে মানহানি মামলা :
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় একই বছরের ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নড়াইলে মানহানির মামলা করা হয়। স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রায়হান ফারুকি ইমাম বাদি হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতে বলা হয়েছে দণ্ডবিধির ৫০০, ৫০১ ও ৫০২-এর অধীনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। এ মামলাটি জামিনযোগ্য।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। এরপর থেকে খালেদা জিয়া ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। ওই রায়ের পর জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন বেগম খালেদা জিয়া। শুনানি শেষে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন। পরে অর্থাৎ গত ১৬ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ বহাল রাখেন। কিন্তু আরো কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোয় তিনি কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin