khaleda_zia

খালেদা জিয়ার উপস্থিতিই অনুপ্রেরণার, বলছে বিএনপি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রথম দফার ছয় মাসের মুক্তি​র মেয়াদ আজ বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে সাজা স্থগিত করে দ্বিতীয় দফায় ছয় মাসের মুক্তির গণনা।

আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় মুক্তির দিনগুলোতেও তাঁকে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাবে না। তবু দলটির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার উপস্থিতিই নেতা-কর্মীদের কাছে একটি বড় অনুপ্রেরণা, তিনিই দলের অভিভাবক।

গত ২৫ মার্চ সরকার এক নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে প্রথম মুক্তি দেয়। এরপর থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসায় ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের দেখভালের মধ্যে আছেন। এই সময়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য নেতাদের সঙ্গে খুব একটা সাক্ষাৎ দেননি খালেদা জিয়া।

ঈদুল আজহার পরদিন ২ আগস্ট ও তার আগে মুক্তি পাওয়ার পর একবারসহ মোট দুইবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। এর বাইরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না পৃথক সাক্ষাৎ​ করেছিলেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। দুটোই ​ব্যক্তিগত বিষয় এবং একান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

বিএনপির সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার চিকিৎ​সার তত্ত্বাবধান করছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান। তিনি সে দেশে খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎ​সকের পরামর্শ নিয়ে ঢাকায় তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎ​সকদের জানাচ্ছেন।

সে মোতাবেক দু’জন ব্যক্তিগত চিকিৎ​সক খালেদা জিয়াকে চিকিৎ​সা দিচ্ছেন। বাড়িতে তাঁকে দেখভালের জন্য সার্বক্ষণিক দু’জন নার্সও রাখা হয়েছে। মূলত পারিবারিক সেবা-শুশ্রূষায় দিন কাটছে খালেদা জিয়ার। প্রায় প্রতিদিনই পরিবারের কেউ না কেউ বাড়িতে যাওয়া-আসার মধ্যে আছেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) জেলের বাইরে আছেন, যদিও তিনি মুক্ত নন। আমরা এটাকে গৃহবন্দী বলতে পারি, কারণ তিনি বাড়ির বাইরে গিয়ে চিকিৎ​সা করাতে পারছেন না, রাজনীতির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আছে।

এরপরও নেতা-কর্মীরা এই ভেবে আশ্বস্ত যে, তিনি আগের চেয়ে একটু ভালো আছেন, বাড়িতে আছেন, চিকিৎ​সা করাতে পারলে সুস্থ হয়ে উঠবেন।’

পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করে সরকার। ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে ডায়াবেটিস, বাত ও চোখের সমস্যাসহ আরও কিছু স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন। পরিবার মনে করছে, তাঁর উন্নত চিকিৎসা জরুরি।

কিন্তু সরকার মুক্তির মেয়াদ বাড়ালেও খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাড়িতেই থাকতে হবে। কারণ, আইন মন্ত্রণালয় তাঁর সাজা স্থগিত ও মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর সুপারিশ করলেও তাতে এই সময়ে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর আগেও এই শর্ত ছিল। সে কারণে গত ছয় মাসে খালেদা জিয়াকে কোনো রাজনৈতিক ভূমিকায় দেখা যায়নি।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, পরিবারের আবেদনে বিদেশে যেতে না পারার শর্তটি শিথিল করার অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে তিনি দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতে গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়ার উপযুক্ত চিকিৎসা করা যায়নি।

খালেদা জিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে ডায়াবেটিস, বাত ও চোখের সমস্যাসহ আরও কিছু স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন। পরিবার মনে করছে, তাঁর উন্নত চিকিৎসা জরুরি।

তবে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এ সময়ে তিনি দেশের ও বহির্বিশ্বের সব খবরাখবর রেখেছেন। সাক্ষাতে নেতাদের কাছ থেকেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নিজ দলের কার্যক্রমের বিষয়ে জেনেছেন। তবে কোনো বিষয়ে তিনি নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেননি।

শর্তসাপেক্ষে মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে মুক্তির আগামী ছয় মাসেও তাঁকে এমন চুপচাপ দেখা যেতে পারে। তবু খালেদা জিয়ার সুস্থ থাকাই নেতা-কর্মীদের কাছে বড় স্বস্তির বিষয়। কারণ তিনি যত দিন থাকবেন, তত দিন দলের অভিভাবক হিসেবেই থাকবেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত কারাগারে পাঠান। তাঁর বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছাড়াও আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে। যে দুটি মামলায় সাজা হয়েছে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin