কারাগারে থাকা খালেদা জিয়ার অসুস্থতা গোপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে তাঁর আইনজীবীরা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। আইনজীবীরা মনে করেন, তাঁর সুচিকিৎসার প্রয়োজন।
আজ বুধবার দুপুরে বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালত থেকে বের হয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আজ মামলার তারিখ ধার্য ছিল। খালেদা জিয়াকে আজ আদালতে আনা হয়নি।
আদালতের পরোয়ানার ফিরতি কাগজ (কাস্টডি পরোয়ানা) দেখেছেন বলে জানিয়ে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আমরা দেখেছি খালেদা জিয়া অসুস্থ। যেহেতু তিনি অসুস্থ, আমরা খুবই চিন্তিত। কারণ, আমরা জানতে পারছি না। উনারাও পরিষ্কার করে কিছুই বলেননি।’
সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, তিনি কী রোগে ভুগছেন, তিনি কেন এলেন না—সরকারের পক্ষ থেকে, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। শুধু লেখা আছে, খালেদা জিয়া জেলে অসুস্থ। এই মামলার আগামী তারিখ ধার্য করেছে ৫ এপ্রিল।
আরেক আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাড়ে নয়টায় আদালতে এসেছি। দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় ফোনালাপ করতে আমরা দেখলাম। তাদের মধ্যে আমরা বিভিন্ন দৌড়ঝাঁপ দেখেছি। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কী কারণে খালেদা জিয়াকে হাজির করা হচ্ছে না। অবশেষে আমরা যেটা দেখলাম, একটা পরোয়ানা জেলখানা থেকে এসেছে। সেখানে আমরা জানলাম, তিনি (খালেদা জিয়া) অসুস্থ।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চিন্তিত। আমরা শঙ্কিত। খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার প্রয়োজন। আমরা আগের জামিনে যে কথাগুলো উল্লেখ করেছি, এটিই আজকে প্রকারান্তরে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে।’
আজ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাজির করা হয়নি খালেদা জিয়াকে। আদালত বসার পর আজ দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে অন্য আসামিরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়াকে জেল কর্তৃপক্ষ আদালতে হাজির না করায় মামলার নতুন তারিখ হয়েছে। আশা করছি, আগামী ৫ এপ্রিল থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের বাকি কার্যক্রমগুলো সম্পূর্ণ করতে পারব।’
কারা কর্তৃপক্ষ হাজির করেনি কেন?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মোশাররফ হোসেন কাজল আরও বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ হাজির না করার কারণ অনেক রকম থাকতে পারে। আমরা গত তারিখেও তাঁকে পাইনি। উনি জেল কাস্টডিতে আছেন। কাস্টডিতে থাকাকালে তাঁর দেখভাল করার দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের। কারা কর্তৃপক্ষ যদি হাজির না করে, এখানে তো আমাদের বলার কিছু নেই।’
আদালতকে কারা কর্তৃপক্ষ কী জানিয়েছে, অসুস্থতার ব্যাখ্যা দিয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের এই আইনজীবী বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ কী ব্যাখ্যা দিয়েছে আমি জানি না।’
খালেদা জিয়া অসুস্থ এমন কথাও বলা হচ্ছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়েই চলে যান মোশাররফ হোসেন কাজল। তবে তাঁর সঙ্গে থাকা আরেক আইনজীবী বলেন, ‘এটার কোনো জবাব নেই।’
খালেদাকে হাজির না করায় কারা কর্তৃপক্ষকে শোকজ কুমিল্লা আদালতের
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগামী ৮ এপ্রিল কুমিল্লার আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির না করায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। বুধবার সকাল ও বিকেলে দুই দফা শুনানি শেষে কুমিল্লার আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাজী আরাফাত উদ্দিন এসব নির্দেশ দেন।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আটজনকে হত্যার মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি ছিল আজ বুধবার। কিন্তু আজ তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টায় ও তিনটায় দুই দফায় কুমিল্লার আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাজী আরাফাত উদ্দিনের আদালতে মামলার জামিনের বিষয় নিয়ে শুনানি হয়।
এতে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো নথিপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আদালতে কেন হাজির করা হয়নি, সে জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে এর জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়। এ ছাড়া আগামী ৮ এপ্রিল জামিনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।’
এর আগে ১৪ মার্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন ও আদালতে হাজিরা পরোয়ানা (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট) জারির নির্দেশ বাতিল চেয়ে আবেদন নিয়ে আদালত কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে তাঁর (খালেদা) উপস্থিতিতেই আজ (২৮ মার্চ) শুনানির দিন ধার্য রেখেছিলেন। কুমিল্লার আমলি আদালত-৫-এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুস্তাইন বিল্লাহ ওই আদেশ দেন।
কুমিল্লার কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি বলেন, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আগুনে পুড়িয়ে আটজন যাত্রী নিহত হন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ১২ মার্চ গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আবেদন করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন বিকেলে আদালতের বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন। একই সঙ্গে ২৮ মার্চ তাঁকে কুমিল্লার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের কপি বিকেল সাড়ে তিনটায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় আটজন হত্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪৭ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তামিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ওই আদালতের বিচারক কুমিল্লা অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জয়নব বেগম ওই আদেশ দেন।
চৌদ্দগ্রাম থানায় করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৭৭ জন আসামির মধ্যে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। জামিনে আছেন ২৯ জন এবং জেলহাজতে রয়েছেন একজন।