খালেদা জিয়ার ভিডিও কপি করে ধরা খেল প্রধানমন্ত্রীর সচিব আশরাফুল আলম!

‘তারেকও চায় ক্ষমতা, তার বউও চায় ক্ষমতা’

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য সম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।

১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিও বার্তায় খালেদা জিয়ার বক্তব্যে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা যতই বলেন আন্দোলন, আন্দোলন ঢাকায় সেভাবে করা সম্ভব হয়নি, এখানে পরিবারের মধ্যে গণ্ডগোল আছে। তারেক রহমানকে তো আপনারা ভালো করেই চেনেন, বউয়ের সঙ্গেও গণ্ডগোল। বউও চায় ক্ষমতা, সেও চায় ক্ষমতা।’

তবে খালেদা জিয়া কবে কোথায় এমন বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইং সদস্য শাইরুল কবির খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, চেয়ারপারসন কারাগারে থেকে এ ধরনের বক্তব্য কীভাবে দেন তা আমার বোধগম্য নয়, বিএনপির বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চলছে এটা তার অংশ।

‘খালেদার জিয়ার ভিডিও’ নিয়ে রিজভীর ব্যাখ্যা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘তারেকও চায় ক্ষমতা, তার বউও চায় ক্ষমতা’ খালেদা জিয়ার বক্তব্য সম্বলিত যে ভিডিও প্রচার হয়েছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যে সরকার জাল-জালিয়াতি করে চলছে তাদের এটা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

রিজভী বলেন, ‘আমরা ছাত্রজীবনের ফার্স্ট ইয়ার থেকে দেশনেত্রীকে চিনি। তিনি কখনও বাড়তি কথা বলেন না, অরুচিকর কথা বলেন না। বিভিন্ন সময়ে তিনি নেতাকর্মীদের মধ্যে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কাটিং পেস্ট করে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে যে পরিবারের মধ্যে সমস্যা হয়েছে।’

রোববার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী আহমেদ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ‘অপপ্রচারের সেল’ খোলা হয়েছে বলে দাবি করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘তারেক রহমানকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মাথা ব্যথার যেন শেষ নেই। তাকে নিয়ে তাদের অন্তহীন ষড়যন্ত্র বারবার ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নানা অপপ্রচারের জন্য সেল খোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপ-প্রেস সচিবের ফেসবুক আইডিতে নানা মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প বানিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিতরা কাজ করে। কিন্তু তাদের মানসিকতা বস্তির চেয়েও নিম্ন মানের। উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কাটিং পেস্ট করে এই নোংড়া অপপ্রচার করছে। তাদের অন্তরে শিক্ষার কোনো আলো নেই। বাড়ির একটা বখাটে ছেলে যেমন ফেনসিডিল খায়, ছিনতাই করে, আওয়ামী লীগও তেমনি রাজনীতির বখাটে সন্তান।’

রিজভী বলেন, ‘এই ধরনের অপপ্রচার নিম্নরুচির পরিচায়ক। যারা কুরুচিসম্পন্ন এবং যারা অপরাজনীতি ও অসভ্যতার চর্চা করে তারাই কেবল অসত্য ও নোংরা রাজনীতির আশ্রয় নেয়। আওয়ামী লীগ কুৎসা সঞ্চারিত মনের বিকারে ভোগে। তাদের ঐতিহ্যে সভ্যতা ও সুরুচির কখনোই কোন নিদর্শন ছিল না। সে জন্য তাদের কোনো কথাই জনগণ বিশ্বাস করে না। আমি এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে আরও অবনতি হয়েছে জানিয়ে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করার পর বেগম জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে এখনও তার পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দ্বারা চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে সরকার প্রতিহিংসা বাস্তবায়নে চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছে কি না তা নিয়ে জনমনে এখন নানা প্রশ্ন ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ক্রমাগত অবনতির খবরে গোটা জাতি এখন চরম উদ্বিগ্ন। দেশনেত্রীকে নিয়ে সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভৎস মূর্তি মানবজাতিকেই শিহরিত করছে। আমি আবারও অতি দ্রুত দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

গতকাল দেশব্যাপী যুব দলের বিক্ষোভে ঢাকা মহানগর এবং পটুয়াখালীতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপির এ নেতা। একই সঙ্গে তাদের মুক্তি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির ৭ অঙ্গ সংগঠন মহাসচিবের অপসারণ চায়

চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মোট ৯ টি অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে ৭ টিই তাঁর প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। তাদের অনাস্থা জ্ঞাপন সংক্রান্ত লিখিত সিদ্ধান্ত পাঠিয়েছে লন্ডনের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার কাছে। ৭ টি অঙ্গ সংগঠনই অভিযোগ করেছে যে, মির্জা ফখরুল দলকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন।

সরকারের ইচ্ছা দাসে পরিণত হয়েছে বিএনপি। তাদের অভিযোগ আন্দোলনের নামে নাটক করে বর্তমান মহাসচিব দলকে ‘আওয়ামী লীগ’ সরকারের অধীনে একটা প্রহসনের নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যে ৭ টি সংগঠন বর্তমান মহাসচিবের ব্যাপারে অনাস্থা জানিয়েছে সেগুলো হলো: ১. জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল, ২. জাতীয়তাবাদী যুবদল ৩. জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ৪. জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাস, ৫. জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ৬. জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ৭. জাতীয়তাবাদী ওলামা দল।

অঙ্গ সংগঠন সমূহের মধ্যে জাতীয়তাবাদী তাঁতি দল ও জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল এখনো বিএনপি মহাসচিবের প্রতি আস্থা অটুট রেখেছে। তবে সংগঠন দুটি বর্তমান কার্যক্রম খুবই সীমিত। এছাড়াও বিএনপির দুটি সহযোগী সংগঠনের মধ্যে একটি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আনুষ্ঠানিকভাবে অনাস্থা না জানালেও মহাসচিব সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৭ টি অঙ্গ সংগঠনই ১৩ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল সময়ের মধ্যে তাদের ঢাকায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করে। প্রত্যেকটি বৈঠকেই বর্তমানে বিএনপির সাংগঠনিক অপারগতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করা হয়। অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর যেভাবে আন্দোলন গড়ে ওঠার সুযোগ ছিল, সেভাবে আন্দোলন গড়ে ওঠেনি।

দলীয় চেয়ারপারসনের দোহাই দিয়ে আন্দোলনের লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। ৭টি অঙ্গ সংগঠনই মনে করে, আন্দোলনে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন সমূহকে সম্পৃক্ত করার কোনো উদ্যোগ বিএনপি মহাসচিব নেননি। বরং অঙ্গ সংগঠনগুলোকে নিষ্ক্রিয় রাখার কৌশল নিয়েছেন দলটির মহাসচিব। অঙ্গ সংগঠনগুলো মনে করছে, আন্দোলনের কর্মসূচি ও কৌশল প্রণয়নে বিএনপি মহাসচিব এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কোনো পরামর্শই গ্রহণ করছেন না। বরং অদৃশ্য ইশারায় দল পরিচালিত করছেন।

পৃথক পৃথক বৈঠকে প্রায় সব অঙ্গ সংগঠনই এরকম মনোভাব প্রকাশ করেছে যে, বিএনপি মহাসচিব একটি প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপিকে ঠেলে দিচ্ছে। ৭ অঙ্গ সংগঠনই, অবিলম্বে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে অর্থবহ এবং বেগবান আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, সরকারের ভয়ে হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকলে সরকার একতরফা নির্বাচনের সুযোগ পাবে।

তাই অবিলম্বে, নেতৃত্ব পরিবর্তন ঘটিয়ে , দলকে ‘উজ্জীবিত’ করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তাঁরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছে।বিএনপির এই সব অঙ্গ সংগঠনগুলো, তারেক জিয়া নিয়ন্ত্রিত। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে চাপে রাখতে অঙ্গ সংগঠন দিয়ে তারেক এই চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে বলে অনেকের ধারণা।

বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলীয় চেয়ারম্যান যেকোনো সময় মহাসচিবকে অপসারণ করতে পারেন। ৭ অঙ্গ সংগঠনের অনাস্থা সংক্রান্ত চিঠি পাবার পর তারেক জিয়া কি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তা এখনো জানা যায় নি।

জাপায় যাচ্ছেন মওদুদ?

হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। দলের কোনো কর্মকাণ্ডে কয়েকদিন তাঁর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। দলের সিনিয়র নেতাদের সান্ধ্যকালীন বৈঠকেও তিনি অনুপস্থিত। তাঁকে দলের অন্য সিনিয়র নেতারা ফোন করলেও তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। দলের কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত থাকলেও কূটনৈতিক পাড়ায় সরব ব্যারিস্টার মওদুদ।

গত ৭ দিনে তিনি অন্তত ৪টি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মার্কিন দূতাবাসের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে গত ২৫ এপ্রিল ব্যারিস্টার মওদুদ নৈশভোজে মিলিত হন। পরদিনই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতীয় দূতাবাসের পদস্থ দুজন কর্মকর্তা। ২৭ এপ্রিল ব্যারিস্টার মওদুদের বাংলাদেশস্থ যুক্তরাজ্য দূতাবাসের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গতরাতে ব্যারিস্টার মওদুদ সাক্ষাৎ করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে।

কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদের সিরিজ বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। যখনই ব্যারিস্টার মওদুদ নিজের স্বার্থে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যান, তখনই তিনি এরকম কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিএনপিতে কানাঘুষা চলছে, ব্যারিস্টার মওদুদ কি এবার ডিগবাজি দেবেন? এজন্যই কি তিনি তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন?

মওদুদ যে দল ভেঙ্গে আলাদা বিএনপি করবেন না, যে ব্যাপারে বিএনপির নেতারা মোটামুটি নিশ্চিত। কারণ বিএনপিতে তাঁর অনুগতের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তাহলে কি তিনি অন্য কোন দলে যোগ দেবেন মওদুদ? জাতীয় পার্টিতে ব্যারিস্টার মওদুদ যোগ দিতে পারেন, এমন একটা গুঞ্জন গত কয়েকদিন ধরেই কূটনৈতিক পাড়ায় চাউর হয়েছে। অবশ্য ব্যারিস্টার মওদুদ বলেছেন, এসবই ফালতু গুজব। তবে ব্যারিস্টার মওদুদকে যারা চেনেন তারা জানেন দল বদলে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin