খালেদার সাফ কথা ঃ শেখ হা‌সিনার অধীনে নির্বাচ‌নে যাবো না

শেখ হা‌সিনার অধীনে বিএন‌পি নির্বাচনে যাবে না বলে মন্তব্য করে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএন‌পি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘তোমরা এগিয়ে চলো। ২০১৮ সাল হবে গণতন্ত্রের বছর।’

২ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর ই‌ঞ্জি‌নিয়ার্স ইন্স‌টি‌টিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রদল আ‌য়ো‌জিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অ‌তি‌থির বক্ত‌ব্যে এ সব কথা বলেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, আমরা নির্বাচন করব, চাইলেও নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা যাবে না। তবে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে। সে জন্য সংসদ ভে‌ঙে নির‌পেক্ষ নির্বাচন হ‌তে হ‌বে। সরকার যদি মনে করে নেতাকর্মীদের জেলে নিয়ে নির্বাচন দেবে, তাহলে সে নির্বাচন আমরা অংশগ্রহণ করব না।

কারণ বিএনপি অনেক বড় রাজনৈতিক দল। বিএনপি ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ২০১৮ সাল হবে গণতন্ত্রের বছর।

বিএনপি নেত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, বৈধ সরকার নেই, আইনের শাসন ও কথা বলার অধিকার নেই। তার প্রমাণ একটু আগে দেখলাম। অনেকদিন ধরে ছাত্ররা আলোচনা সভার প্রস্তুতি নিয়েছে।

অনুমতি দিয়েছে, ভাড়াও নিয়েছে। অথচ হঠাৎ করে হলরুমে তালা লাগিয়ে দিলো। এটা কেমন আচরণ? আজকে দেশ এক ব্যক্তির দখলে। দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ তার জন্য দায়ী। গুম, খুন বেড়েছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। মানুষের অভাবের শেষ নেই।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে মানুষ বিশ্বাস করে না। তারা মানুষের ভোটে না, অন্যের কাঁধে ভর করে ক্ষমতায় এসেছে বারবার। অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে মানুষ নির্যাতন করছে। বিএনপি মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসে। অন্যের ওপর নির্ভর করে নয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, মানুষের দুঃখের সীমা নেই। তার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। সে জন্য তাদের চলে যেতে হবে। নতুন যে কোনো সরকার আসতে হবে। পরিবর্তন আসতে হবে। সে জন্য একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার লাগবে। হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবেও না। এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই তাদের অধীনে ভোট হতে পারবে না। পার্লামেন্ট রেখে কোনো নির্বাচন হবে না।

খালেদা জিয়া বলেন, পদ্মাসেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মাসেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না।

সেসময় ভারতের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ভারত আমাদেরকে স্বাধীনতার সময় সাহায্য করেছে। ভারতকে আমরা বন্ধুর মতো দেখতে চাই। বন্ধু হয়ে থাকতে চাই সবসময়।

খালেদা জিয়া বলেন, দেশের পুলিশ খারাপ নয়, আওয়ামী লীগ পুলিশকে খারাপ বানাচ্ছে। পুলিশ নিজেদের কাজ করুক। তবে আমার অনুরোধ, আমার ছেলেদের ধরবেন না। যারা জেলে আছে ছেড়ে দিন।

তিনি বলেন, পুরো দেশটি আজ কারাগার হয়ে গেছে। আমরা সবাই বন্দী। শুধু শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে মুক্ত।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের শুধু ছবি তোলে আন্দোলনে আছে তা না দেখিয়ে মনপ্রাণ উজাড় করে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, তোমরা ঐক্য, ইমান, শৃংখলা ঠিক রাখলে সব কিছু জয় করা সম্ভব। শুধু স্লোগান দিলে হবে না। স্লোগানের ধারা পরিবর্তন করতে হবে। আগের স্লোগান দিলে হবে না, সময়ের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তা পরিবর্তন করতে হবে।

‘তোমরা এগিয়ে চলো। ২০১৮ সাল হবে গণতন্ত্রের বছর’, বলেন খালেদা জিয়া।

ভেন্যু নিয়ে জটিলতা

এর আগে দিনভর নানা নাটকীয়তার পর ছাত্রদলের সমাবেশের ভেন্যু ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের তালা খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৫টা ২৫ মিনিটে তালা খুলে দেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ছাত্র সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে পৌঁছান। ওই সময় মিলনায়তনের গেট তালাবদ্ধ ছিল। ইনস্টিটিউশন চত্বরেই চলছিল কর্মসূচি।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এরপর থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পূর্বঘোষিত ছাত্র সমাবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সমাবেশের অনুমতি দিয়ে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার অজুহাতে পরে তা বাতিল করা অগণতান্ত্রিক।’

নির্বিঘ্নে ছাত্র সমাবেশ করার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার রওনার খবরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সামনে জড়ো হন। সেখানে সকাল থেকেই জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ট্রাকে রাখা সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে বক্তব্য দেন তারা।

পরে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে ইনস্টিটিউশন চত্বর থেকেই মির্জা ফখরুল ঘোষণা দেন- বিএনপি চেয়ারপারসন যতক্ষণ থাকবেন, ততক্ষণ তারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে অবস্থান করবেন। পরে ৫টা ২৫ মিনিটে মিলনায়তনের তালা খুলে দেওয়া হয়।

প্রিয়

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin