খালেদার শাস্তি চেয়ে মাঠে নামছে সাবেক জোটসঙ্গী

১৭ বছরের জোটনেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ‘অর্থপাচারের’ শাস্তির দাবি সামনে নিয়ে আসছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক দল ইসলামী ঐক্যজোট। আগামী ৭ জানুয়ারি রাজধানীতে দলটি যে সমাবেশ ডেকেছে, তাতে এই দাবিটিও তুলে ধরেছে তারা।

১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকা দলটির নেতারা খালেদা জিয়ার গুনমুগ্ধ ছিলেন। সে সময় তারা ছিলেন আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক। এমনকি ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামীর অংশীদার হিসেবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাদের।

তবে গত দুই বছর ধরে অবস্থান পাল্টেছে দলটির। এখন আর তারা আওয়ামী লীগবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে না। বরং বিএনপির বিরুদ্ধেই একাধিক বক্তব্য দিয়েছেন নেতারা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো

আওয়ামী লীগ ও সমমনাদের বাইরে রাজনৈতিক দল বা সংগঠন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নিয়ে তেমন কিছুই বলছে না। বিএনপির সাবেক জোটসঙ্গী ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারাই বলতে গেলে এই বিষয়টি সামনে নিয়ে আসতে যাচ্ছেন।

অবশ্য ইসলামী ঐক্যজোট সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে যে প্রচারপত্র বিলি করছে তাতে খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের নাম নেই। এতে, ‘মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি’র কথা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রায় দেড় যুগ জোটবদ্ধ থেকে সেই নেত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাইছেন?- এমন প্রশ্নে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখানে জোটে থাকা না থাকার কোনো বিষয় না। এটা তো জাতীয় ইস্যু। যে বা যারাই অন্যায় করবে, তার শাস্তি হওয়া উচিত।’

যে সময় এই অর্থপাচারের অভিযোগ করছে সরকার, সেই সময় তো আপনারা খালেদা জিয়ার সঙ্গী ছিলেন- এমন মন্তব্যের জবাবে নেজামী বলেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিলাম, কিন্তু সরকারে ছিলাম না। আর বিষয়টি হলো আমরা পত্রিকায় খবরে দেখেছি টাকা পাচার হয়েছে। তাই সেটা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এটা তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেন দেশের টাকা বিদেশে পাচার করবে।’

৭ জানুয়ারির সমাবেশের সঙ্গে কি সরকারের আনুকূল্য পাওয়ার কোনো বিষয় আছে?- এমন প্রশ্নে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান বলেন, এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে সরকারের আনুকূল্য পাওয়া না পাওয়ার কিছু না। টাকা পাচারের কথা শোনা যাচ্ছে। আর ব্যক্তি বিশেষের বিষয়টি কাকতালীয়ভাবে হয়ে গেছে।’

ভিডিওর কথা তুলে ধরে গত ৭ ডিসেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচার এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

এরও আগে ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে জানিয়েছিলেন, সৌদি আরব খালেদা জিয়ার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। সে সময় এই বিষয়টি তেমন আলোচনায় না আসলেও প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর তা তুমুল আলোচনা তৈরি করেছে।

এই অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি নিয়ে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে আইনি নোটিস পাঠান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, তার পক্ষে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে। আর দলের নেতারা এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইসলামী ঐক্যজোটের সমাবেশের দাবি অবশ্য এই একটি বিষয়ে নয়। কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত নেয়ায় এবং মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চায় দলটি।

পাশাপাশি কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি সংসদে তুলে আইন পাসের দাবি জানানো হবে এই সমাবেশে। এর পাশাপাশি ২০১৩ সালে হেফাজত তাণ্ডবের ঘটনায় সারাদেশে আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার চাইছে ইসলামী ঐক্যজোট।

১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি সে সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সরকার থেকে হঠাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের আমির গোলাম আযম এবং ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠনের ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

২০০১ সালের ভোটের আগে এরশাদ জোট ছেড়ে বের হয়ে আসলেও দলের একাংশ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি নামে জোটে থেকে যায়। আর সে সময় ইসলামী ঐক্যজোটের চার জন সংসদ সদস্য ধানের শীষের প্রতীকে নির্বাচিত হন।

২০০৬ সালে ইসলামী আজিজুল হক চারদলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে খেলাফত মজলিস নামে দল চালিয়ে যান। সে সময় ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির সঙ্গে জোটবন্ধ থাকে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন জোটবদ্ধভাবেই করে তারা। এর মধ্যে চার দলে আরও নতুন দল যুক্ত হয়ে সেটি ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়।

২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর অবস্থান কর্মসূচিতে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা-কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা চালিয়ে যান। ২০১৩ সালে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তারা বিএনপির হয়ে ব্যাপক প্রচার চালান আর পরের বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনেও ঐক্যজোট বিএনপির সঙ্গী ছিল।

তবে বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় ইসলামী ঐক্যজোটের। এক পর্যায়ে ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের ঘোষণা দেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী।

পরে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা আবদুর রকিবের নেতৃত্বে একাংশ একই নামের দল হিসেবে ২০ দলে থাকার ঘোষণা করে। আর ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী এবং মহাসচিব মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়।

তবে নেজামী-ফয়জুল্লাহর নেতৃত্বেই ইসলামী ঐক্যজোট মূল শক্তি হিসেবে বহাল রয়েছে। আর দেশের কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক শক্তিগুলোর মধ্যে তারাই ‍মুখ্য।

এই দলের নেতারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই ভোটে আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তাও চাইছেন এক সময় প্রচণ্ড আওয়ামী লীগ বিরোধী নেতারা।

ঢাকাটাইমস

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin