খালেদার আবার জেলজীবন চায় তারেক

বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বাকি আছে আর মাত্র ১ মাস। গত ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় এবং বিশেষ বিবেচনায় ৬ মাসের জামিন পেয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর তার এই জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং বিদেশে যাওয়ার জন্যে আবেদন করবেন এবং এরকম একটি আবেদন প্রস্তুতও করা হয়েছে।

কিন্তু বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, ‘রাজনৈতিক’ কৌশল হিসেবে তারেক জিয়া এখন বেগম খালেদা জিয়ার নতুন করে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি চান না এবং বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকুক এটাই তিনি চান।

তারেক জিয়া বিএনপির অন্তত দুজন নেতার সঙ্গে টেলিআলাপে বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যদি এই করোনাকালীন সময়ে জেলে থাকতেন, তাহলে বিএনপির পক্ষে একটি বড় ধরণের আন্দোলন গড়ে তোলা সহজ হতো। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার নীরবতার কারণে বিএনপি আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারেক জিয়া বিএনপির ঐ দুই নেতাকে এটাও বলেছেন যে, সরকারের কৌশলের কাছে পরাজিত হয়েছে বিএনপি।

খালেদা জিয়া গ্রেপ্তারের পর থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্তিপণ হিসেবে রেখে বিএনপিকে জনপ্রিয় করার এক কৌশল নিয়েছিলেন তারেক জিয়া। যদিও বিএনপি না পেরেছে আন্দোলন করতে, না পেরেছে আইনি লড়াই করতে। বরং বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার থাকাটা একটি উপেক্ষিত এবং জনগুরুত্বহীন বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মানুষের মধ্যে এই নিয়ে কোন মাথাব্যথা দেখা যায়নি। আর খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার পর বিএনপির অনেক নেতাই যেমন উচ্ছসিত হয়েছিলেন, আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে, এখন হয়তো বিএনপি চাঙ্গা হবে এবং বিএনপিতে জোয়ার আসবে- তেমন কিছুই বাস্তবে হয়নি।

বরং বেগম জিয়া গত চার মাসে বারবার প্রমাণ করেছেন যে, তিনি সরকারের সঙ্গে শর্তের বেড়াজালে বন্দি এবং রাজনৈতিক ব্যাপারে তার কোন উৎসাহ নেই। বন্দি বেগম খালেদা জিয়ার চেয়ে মুক্ত বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির জন্য আরো বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিক কারণে এটা হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন।

খালেদা জিয়া যখন বন্দি ছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের মধ্যে একটা ইস্যু ছিল যে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সরকারবিরোধী একটি আন্দোলন গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা ছিল। বিশেষ করে, তৃণমূলের মধ্যে এই ধরণের অভিপ্রায়টা মোটামুটি প্রকাশ্যই ছিল। আর বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর যখন তিনি সুনশান নীরবতা অবলম্বন করছেন, তখন বিএনপি নেতারা বিভ্রান্ত।

বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া যখন রাজনৈতিক বিষয়ে কোন কথাই বলছেন না তখন বিএনপি নেতা-কর্মীরা মনে করছেন যে, নিশ্চয়ই সরকারের সঙ্গে বেগম জিয়ার একটি সমাঝোতা হয়েছে। সেই সমাঝোতার অংশ হিসেবেই এখন বেগম জিয়া কোন কথা বলছেন না। এখন যখন আবার বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তার মুক্তির বিষয়ে কথা বলছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে সাক্ষাৎ করবেন বলেও প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছেন, তখন বিএনপির মাঝে আরো হতাশা বাড়ছে।

বিশেষ করে, বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার এবং তার বোন সেলিমা ইসলাম দলকে বাইরে রেখে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সরকারের সঙ্গে মীমাংসা করছেন। এর ফলে বিএনপির অনেকেই মনে করছে যে, এভাবে বিএনপি আস্তে আস্তে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে।

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, তারেক জিয়া সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতি নিয়ে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপ করেছেন। এই আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন যে, বেগম জিয়াকে যদি আবারও প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় জামিন দেওয়া হয় এবং বেগম জিয়া যদি রাজনীতি না করার শর্তে বিদেশে চিকিৎসা করতে আসেন তাহলে বিএনপির রাজনীতির কবর রচনা হবে।

কারণ তখন বিএনপির কর্মীরা আন্দোলন করার যে তীব্রতা সেই তীব্রতা অনুভব করবে না। তাছাড়া এর মাধ্যমে বিএনপির যে সরকারবিরোধী অবস্থান, সেই অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়বে। বরং বিএনপি সরকারের লেজুড়বৃত্তি করছে এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন করার কোন নৈতিক অধিকার বিএনপির নেই তা প্রমাণিত হবে।

আর এ কারণে তারেক জিয়া মনে করছেন যে, শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ যদি আবার বৃদ্ধি না করা হয়, তাকে যদি আবার জেলে বন্দি করা হয় সেটা হবে বিএনপির জন্যে লাভ। তবে বিএনপির খালেদাপন্থী নেতারা তারেকের এই মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করছেন। তারা মনে করছেন যে, তারেক জিয়া তার সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নিজের মাকে মুক্তিপণ হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং মাকে জিম্মি করছেন।

সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin