৩ ফেব্রুয়ারি দলের নির্বাহী কমিটির সভা এবং ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে সর্বশেষ করণীয় ও প্রস্তুতি ঠিক করতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টায় চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। শেষ হয় রাত সাড়ে ৯টায়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে ও ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন ধার্য রয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাহী কমিটির সভার দিনব্যাপী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে এ বৈঠকে। এছাড়াও নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার এবং রায় ঘোষণার দিন সম্ভাব্য কর্মসূচিও চূড়ান্ত করা হবে এই বৈঠকে।
৮ ফেব্রুয়ারী ঘিরে বিএনপিতে সাজ সাজ রব
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলার রায়ের দিন ৮ ফেব্রুয়ারীকে ঘিরে ঢাকার রাজপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। বড় জমায়েতের অঘোষিত এই কর্মসূচি সফল করতে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসনের মামলার রায়কে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। মূল দলের কর্মকা- অনুসরণ করবে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। ইতোমধ্যে দলের প্রতিটি ইউনিটের নেতাদের বিশেষ দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুলিশের ধড়পাকড় এড়াতে কৌশলী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
৮ ফেব্রম্নয়ারির আগেই গ্রেপ্তার বা শক্তি ক্ষয় না করতে বলা হয়েছে। চলমান গণগ্রেপ্তারের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম নেতা গ্রেপ্তার হলে পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এ রকম ধাপ রয়েছে তিনটি। ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীসহ সারা দেশে মাঠে থাকবেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির সূত্রমতে, রাজপথে বিশাল জমায়েত রেখে ওই দিন মামলার রায় শুনতে আদালতে যেতে চান বিএনপির চেয়ারপারসন। এজন্য এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত্ম থেকে ঢাকায় ঢুকতে শুরম্ন করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। আগামীকাল শনিবার বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভাকে কেন্দ্র করে জেলা পর্যায়ের সভাপতিদের আমন্ত্রণ জানালেও তারা সঙ্গে ২০ থেকে ১০০ জন কর্মী নিয়ে ঢাকায় আসছেন।
এ ছাড়া নেতাদের নির্দেশে নিজ উদ্যোগে অনেক নেতাকর্মী ঢাকা আসছেন। ঢাকায় থাকার জন্য নানা প্রতিবন্ধকতার কথা বিবেচনা করে আপাতত হোটেলে অবস্থান না নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মীদের ঢাকা আসার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলছেন না দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতারা।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক সিনিয়র নেতা বলেন, ৮ ফেব্রম্নয়ারিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসতে প্রতি পদে পদে বাধা আসবে। বিগত সময়ের মতো গণপরিবন বন্ধ করে দিয়ে অঘোষিত কারফিউ জারি করতে চাইবে ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য আগে থেকেই যতটুকু সম্ভব নেতাকর্মীদের ঢাকায় প্রবেশ করে নিরাপদে অবস্থান নিতে বলা হযেছে।
এদিকে অঘোতিক জমায়েতের কর্মসূচি ধরনের বিষয়ে এখনো পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই নেতাকর্মীদের কাছে। দলের একটি অংশের রাজপথে অবস্থানে বাধা দিলে পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা করার পক্ষে মত থাকলেও দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত্ম হচ্ছে, রায়ের পর দলীয় প্রধানের জেল-জরিমানা যা-ই হোক, এর বিরুদ্ধে দল নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ জানাবে, কর্মসূচি দেবে। এর চূড়ান্ত্ম লক্ষ্য হবে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। ৮ ফেব্রম্নয়ারির আগেই হাইকমান্ডের এই নির্দেশনার বার্তা নেতাকর্মীদের কাছে দেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার প্রিজন ভ্যানে হামলা ও পুলিশকে মারধরের ঘটনার ফলে গণগ্রেপ্তারের কারণে ৮ ফেব্রুয়ারির জমায়েতের কর্মসূচির প্রস্তুতিতে বেগ পেতে হচ্ছে বিএনপির। এ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা কিছুটা বিব্রত এবং অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন। যদিও বিএনপির নেতারা বলছেন, মঙ্গলবারের ঘটনা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিকল্পিত একটি ফাঁদ। তাতে পা দিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার কর্মী-সমর্থকরা।
রায়কে ঘিরে আন্দোলনের ধরন প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ জানাবেন। একই বিষয়ে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলছেন, খালেদা জিয়ার বিরম্নদ্ধে নেতিবাচক রায় দিলে সেদিন থেকেই সরকার পতনের ভিত স্থাপিত হবে। আর স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোনে বলেন, স্বেচ্ছায় কারাবরণের সিদ্ধান্ত্ম রেখেছেন সিনিয়র নেতারা।
রায়কে কেন্দ্র করে জমায়েতের প্রস্তুতির পাশাপাশি সাংগঠনিক ও কূটনৈতিক প্রস্তুতিও দ্রম্নত এগিয়ে নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাহী কমিটির ভেনু্য নিয়ে দুশ্চিন্ত্মা শেষ পর্যন্ত্ম লাগব হয়েছে দলটির। ঢাকার আন্ত্মর্জাতিক বিমান বন্দর সড়কে পাঁচতারা হোটেল ‘লা ম্যারিডিয়ানে’ আগামীকাল দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রম্নহুল কবির রিজভী বলেন, এ ব্যাপারে হোটেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়েছেন এবং পুলিশের অনুমতিও পাওয়ার ব্যাপারেও আশাবাদী। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ৩ ফেব্রম্নয়ারি শনিবার সকাল ১০টা থেকে শুরম্ন হবে বলেও জানান রিজভী।