বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এখনই বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক মো. শামছুজ্জামান একথা জানিয়েছেন।
আজ রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনো আসেনি। তবে তিনি যত দূর দেখেছেন, তাতে খালেদা জিয়াকে এ মূহুর্তে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি জানান, কারাগারে আসার আগে থেকেই তাঁর আরথ্রাইটিসের সমস্যা ছিল। এখন সেই সমস্যা কিছুটা বেড়েছে। তাঁর বাঁ পা ও বাঁ হাতে একটু ব্যথা হয় এখন। যেহেতু বাঁ পাশে ব্যথা, তাই ধরে নেওয়া যায় তাঁর কোমরে কিছুটা সমস্যা আছে।
বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার খালেদা জিয়ার কোমর ও ঘাড়ের এক্স-রে করা হয়। পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে এসব পরীক্ষা করা হয়। এর আগে গতকাল খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে পরীক্ষার পর
বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন সাংবাদিকদের বলেন, আপাতদৃষ্টিতে তিনি ভালো আছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল কারা প্রশাসনকে জানাবে।
এর আগে ১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত বিশেষ মেডিকেল বোর্ড কারাগারে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। পরদিন বোর্ডের সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক মো. শামছুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তবে গুরুতর নয়। তবে গত শুক্রবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের স্বাস্থ্য খুব ভালো নয়।’
আরেক মামলায় গ্রেফতার
দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আরেক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আটজনকে হত্যার মামলায় কুমিল্লার একটি আদালত আজ তাকে গ্রেফতার আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. মোস্তাইন বিল্লাল রোববার এ আদেশ দেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কুমিল্লার এ মামলায় তার জামিনের আবেদন করলে শুনানির জন্য তা আগামী মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর প্রায় দুইমাস ধরে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
ওই মামলায় হাই কোর্ট তাকে জামিন দিলেও দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগ সেই জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে। এখন মুক্তি পেতে হলে খালেদা জিয়াকে এ মামলাতেও জামিন পেতে হবে।
নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির ডাকে টানা হরতাল-অবরোধের মধ্যে ২০১৫ এর ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুরে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা হামলা হলে দগ্ধ হয়ে আটজনের মৃত্যু হয়।
চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার পরদিন মামলা করেন। তদন্ত শেষে বিস্ফোরক আইনে ও হত্যার অভিযোগে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দুই মামলাতেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়।
ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত। এর মধ্যে খালেদা ঢাকার দুর্নীতি মামলায় কারাগারে যাওয়ায় কুমিল্লার মামলাতেও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত ওই আবেদন গ্রহণ করে ২৮ মার্চ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ সেদিন তাকে হাজির না করায় বিচারক গত ৩১ মার্চ কারা কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর আদেশ দেয়।
সেই আদেশ অনুযায়ী রোববার কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানায়, বিএনপি নেত্রী কারাগারে রয়েছেন। অসুস্থতার কারণে তাকে আদালতে হাজির করা যায়নি।
খালেদার আইনজীবী কাইয়ুমুল হক রিংকু জানান, আদালত এ মামলায় বিএনপিনেত্রীকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর তারা জামিনের আবেদন করলে বিচারক শুনানির জন্য ১০ এপ্রিল দিন ঠিক করে দেন।