hasina_jante_chailen

ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনা জানতে চাইলেন, `কত টাকা লাগে?`

ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন ‘কত টাকা তাঁর লাগে। বউ ছেলে সহ খাওয়া শুরু করেছে। এদের জন্য সরকারের সম্মান নষ্ট হয়। কোথায় তিনি?’ সরকারী কর্মকর্তা উত্তরে জানালেন, মন্ত্রী ব্যক্তিগত সফরে বিদেশে অবস্থান করছেন। প্রধানমন্ত্রী ঐ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তলব করলেন, কিছু নির্দেশনাও দিলেন।

মন্ত্রীদের অদক্ষতা, অনিয়মের বিরুদ্ধে এভাবেই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরকম পাঁচ মন্ত্রীকে চিহ্নত করা হয়েছে, যারা মন্ত্রণালয়ের কাজ কাঙ্ক্ষিত মানে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন না, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই মন্ত্রীদের সতর্কবার্তা দিয়েছেন। এর মধ্যে সংশোধন না হলে, ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।

সবচেয়ে বেশী অভিযোগ এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। এই মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগের স্তূপ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। নির্দিষ্ট জিনিস না কিনেই বিল নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের দুটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর স্ত্রীর নামে কোম্পানী করে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবসা করছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে। পরিবার পরিকল্পনার মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই।

অভিযোগ আছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীর অদক্ষতায় চাল সঙ্কট বাড়ছেই। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে। নির্বাচনের আগে দ্রব্যমূল্য ভোটারদের চটিয়ে দিচ্ছে বলেও মনে করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাজেও সন্তুষ্ট নন প্রধানমন্ত্রী। ট্যানারী সরিয়ে নেয়ার পর এখন ধলেস্বরী দূষণের শিকার এমন রিপোর্ট এসেছে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে।

তবে, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ক্ষুব্ধতার কারণ প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয়। ঐ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। মালয়েশিয়ার ‍দূতাবাস থেকেও মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তহীনতার অভিযোগে তুলেছেন। এই প্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী ঐ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তলব করেন। অবিলম্বে মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আনার জন্য কিছু নির্দেশনাও সচিবকে দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিশেষ সেল খোলা হয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে আগামী একবছর সর্বোচ্চ নিংড়ে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব। আগামী সপ্তাহেই সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে এই চিঠি পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, দুবছর আগে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের কার্যক্রম চালু করে ছিলেন। তাতে মন্ত্রণালয়ের কাজের গতিও এসেছিলো। আবার এ ধরণের কর্মসূচি নেয়ার কথাও ভাবছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

বাংলা ইনসাইডার

আবারো ক্ষমতার অংশীদার হতে ছক কষছে জাপা

আগামীতে আবারো যেকোনোভাবে ক্ষমতার অংশীদার হতে চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। কিন্তু এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার মতো জনসমর্থন না থাকায় সুবিধাজনক অবস্থান তৈরিতে ছক কষতে শুরু করেছে দলটি। এ ক্ষেত্রে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে তারা। বিএনপি যদি নির্বাচন করতে পারে তাহলে এক রকম আর নির্বাচন করতে না পারলে ভিন্ন পরিকল্পনা জাপার।

বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে তাহলে সরকারের সাথে সমঝোতা করে এবারের মতোই প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ নিতে চায় তারা। সে েেত্র সরকারের মন্ত্রিসভায় ও বিরোধী দলে থাকা সহজ হবে দলটির। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে তাহলে সরাসরি আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে নির্বাচন করার আশা তাদের। তবে যদি কোনো ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয় সে জন্য বিএনপির সাথেও যোগাযোগ রাখছে জাপার নেতারা।

গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। নানা মহলের চাপ সত্ত্বেও তিনি নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। সে সময় নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণাও দেন এরশাদ। আর এ পরিস্থিতিতেই এরশাদের সাথে বৈঠক করেন সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। এরপরই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন অসুস্থ এরশাদ। তখন সিএমএইচে ভর্তি এরশাদের পরিবর্তে নির্বাচনে মূল ভুমিকা পালন করেন তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। যে কারণে পরে তিনিই হন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা। আর এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।

এ ছাড়া সরকারে জাপার তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন। বর্তমান সরকার প্রায় চার বছর মেয়াদ পার করেছে। আগামী এক বছর পর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকারের নেতা-মন্ত্রী এবং কয়েক দফায় সরকার পরিচালনা করা দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপির নেতাদের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বাহাসও চলছে। সভা-সমাবেশ করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তারা। তবে বসে নেই জাতীয় পার্টিও।

সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা জাতীয় নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি রয়েছে বললেও এরই মধ্যে একাদশতম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে জাতীয় পার্টি। এ জন্য অর্ধশতাধিক দল নিয়ে একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করেছেন এরশাদ। অবশ্য এসব দলের বেশির ভাগই নামসর্বস্ব ও নিবন্ধনহীন বলে জানা যায়। তবে গত জুলাই মাসে ভারত সফর করে আসার পরই এরশাদ ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। ৩০০ আসনে নিজ দলের প্রার্থী তালিকাও প্রস্তুত করেছে দলটি। ইতোমধ্যে প্রায় এক ডজন নেতাকে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে তারা। এ ব্যাপারে প্রার্থীদের দেয়া চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাদের এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

জাপার যুগ্মদফতর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান নয়া দিগন্তকে জানান, ৩০০ আসনে প্রায় ১২০০ প্রার্থীর তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে পার্টির চেয়ারম্যান পর্যায়ক্রমে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছেন। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে জাতীয় পার্টি।

জাপার নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনে আবারো যেকোনভাবে ক্ষমতায় যাওয়াই জাতীয় পার্টির লক্ষ্য। কিন্তু তাদের এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার মতো জনসমর্থন নেই। এ জন্য জোট করা ছাড়া বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোনো শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় আবারো তারা আওয়ামী লীগের সাথেই জোট করে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ জন্য জাতীয় পার্টি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিএনপিকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধোয়া তুলে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন, তাদের উদ্দেশ্য কখনই সফল হবে না। সংবিধান অনুসারেই জাতীয় নির্বাচন করতে হবে।’ তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের মতে, বর্তমান সংবিধান অনুসারে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোনো সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার বহাল রেখেই নির্বাচন হতে হবে।

যদিও জাপার তৃণমূলে সরকারের সাথে জোট করার ব্যাপারে ভিন্নমত রয়েছে। জাপার কিছু নেতামন্ত্রী ক্ষমতায় থেকে লাভবান হলেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু না পাওয়ার ক্ষোভ-হতাশা রয়েছে। এ দিকে জাপা নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগেরও এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার অবস্থা নেই। ক্ষমতা ধরে রাখতে তাদেরও প্রয়োজন জাতীয় পার্টিকে। কারণ রংপুরসহ কয়েকটি স্থানে জাপার ভোট ব্যাংক রয়েছে।

এ জন্য আওয়ামী লীগকে চাপে রাখতে তারা এককভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিচ্ছেন। তবে তিনবার ক্ষমতায় থাকা বিএনপির নির্বাচনে থাকা না থাকা নিয়ে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে। বিএনপি যদি শেষ মুহূর্তে ভিন্ন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে তাহলে জাপার চিন্তাভাবনায়ও পরিবর্তন আসতে পারে। এ জন্য তলে তলে বিএনপির সাথেও জাপা নেতারা যোগাযোগ রাখছেন।

নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা এখন এককভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করছি। তবে এটি চূড়ান্ত নয়। জোট করে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জোটের প্রয়োজন হলে জোট করব, আর না হলে এককভাবেই নির্বাচন করব। তবে এখনই তা বলার সময় আসেনি।

dailynayadiganta

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin