bnp-flag

কৌশলী কর্মসূচিতে বিএনপি!

প্রত্যাশিত না হলেও কারাবন্দি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে দলের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে সেটাকে কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছেন বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তবে তারা আশাবাদী ধীরে ধীরে কর্মসূচির তীব্রতা এমন পর্যায়ে যাবে তাতে দলীয় প্রধানের মুক্তি মিলবে।

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে তাতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন এবং ১২ সেপ্টেম্বর প্রতীকী অনশন কর্মসূচি-যা ঢাকাসহ দেশের জেলা এবং মহানগর সদরে পালনের কথা বলা হয়েছে। ঘোষিত এই কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

ঘোষিত কর্মসূচিতে প্রত্যাশার প্রতিফলন কতটুকু রয়েছে জানতে চাইলে পল্টন থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফিরোজ আলম পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের কর্মসূচি আমরা অতীতেও পালন করেছি, ম্যাডামের মুক্তির জন্য আমাদের আরো বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, গণতন্ত্র এখন সংকুচিত। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলা হচ্ছে। সেই সরকার বিএনপিকে আরো চাপে রাখার চেষ্টা করবে সে কারণে যতটা সম্ভব শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি রাখতে এই কর্মসূচি। তা না হলে ম্যাডামের সঙ্গে যা হচ্ছে এর প্রতিবাদে তো বিক্ষোভে ফেটে পড়ার কথা। বৃহত্তর স্বার্থে সময়ের প্রেক্ষিতে ঘোষিত কর্মসূচিই ঠিক আছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এজিএম শামসুল হক বলেন, ‘মারামারি ভাঙচুর করে তো আর সরকারকে চাপে রাখার সুযোগ নেই। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা জন সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে চাপে রাখবো এটাই আমাদের কঠোর কর্মসূচি।’

বগুড়ার শেরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জানে আলম খোকা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমাদের কর্মসূচি দিয়েছে। নিশ্চয়ই মনে আছে, ম্যাডাম কারাগারে যাওয়ার আগে অহিংস কর্মসূচির কথা বলেছিলেন। এই কর্মসূচিই আরো বেগবান হবে।’

বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইউব বলেন, ‘আন্দোলনের একটা সূচনা হচ্ছে, আন্দোলন আগামীতে হবে। আমাদের আন্দোলনের প্লান প্রোগ্রাম আছে। কিছু কর্মসূচি দেয়া হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্ত এবং ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) যে জামিনযোগ্য ধারায় নাজেহাল করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে মৌন প্রতিবাদ ছাড়া কিছু না।’

যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘এই কর্মসূচিগুলো আমরা অবশ্যই বাস্তবায়ন করবো। আমরা এখনই কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চাচ্ছি না, ধীর গতিতে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কারণ আমাদের বিরুদ্ধে ফাঁদ সৃষ্টি করা হচ্ছে, আমরা ওই ফাঁদে পা দিতে চাচ্ছি না কৌশলগতভাবে যেতে চাচ্ছি নির্বাচনকে সামনে রেখে।’

পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, ‘তৃণমূল নেতারা উন্মুখ হয়ে আছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য। এটি হলো আমাদের মূল জায়গা। যে কর্মসূচিই দেয়া হোক না কেন আমরা বাস্তবায়ন করবো এবং এই কর্মসূচিকে ঘিরেই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেই প্রত্যাশা আমাদের আছে এবং বাস্তবায়নও হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বিশেষ করে ঢাকাকে ঘিরে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম হবে। হয়ত কেন্দ্রে যারা রয়েছেন ম্যাডামের নির্দেশে তারা একটু স্লো কর্মসূচি দিয়েছেন। কিন্তু আমরা হতাশ নই।’

নওগাঁ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু বলেন, ‘এটাতো ধারাবাহিকতার একটা কর্মসূচি দিয়েছে। এখন এ ধরনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আগামীতে চূড়ান্ত কর্মসূচি দেবে, হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি দেবে। একবারে তো আর হরতাল অবরোধ দেয়া যায় না। ধারাবাহিকভাবে আস্তে আস্তে চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা বলেন, ‘আন্দোলন একদিনে গড়ে ওঠে না। ঘোষিত কর্মসূচিতে অবশ্যই আমাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন রয়েছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের সকল পর্যায়ের নেতারা ঐক্যবদ্ধ আছেন যা এক সময় চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপ দেবে ইনশাল্লাহ।’

যুব দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য গিয়াস উদ্দিন মামুন বলেন, ‘সিনিয়র নেতারা সবার মতামতের ভিত্তিতে কর্মসূচি দিয়েছেন, এই কর্মসূচিই সরকারের পতন ত্বরান্বিত করবে এবং গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে, তারেক রহমান বীরের বেশে দেশে আসবেন এটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।’

জাসাস কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শাহারিয়া ইসলাম শায়লা বলেন, ‘এই ধরনের কাজ করতে করতে আস্তে আস্তে তীব্র আকার ধারণ করবে।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাবেক নেতা ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল বলেন, ‘কর্মসূচি দিয়েছে, কর্মসূচি হবে, আমরা যে যার অ্যাঙ্গেল থেকে কর্মসূচি সফল করবো’

বিএনপির কেন্দ্রীয় গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘তৃণমূল নেতাকর্মীরা তো আরো কঠোর কর্মসূচি চায়। এখন যেহেতু সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বসে সবার মতামত নিয়ে যে কর্মসূচি দেয় সেটাকে তো আমাদের সাপোর্ট করতে হবে। তৃণমূলের যে ডিমান্ডটা পরবর্তীতে তারা সেদিকেই যাচ্ছে। তার ফলশ্রুতিতেই এই কর্মসূচি দেয়া হয়েছে।’

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin