কোনো সাকিব-তামিম মাঠ কাঁপায়, কোনো সাকিব-তামিম ভিক্ষা করে

সাকিব ও তামিম স্কুলে গেলেই তার বন্ধুরা খোটা দিয়ে অন্য বন্ধুদের বলে, ওই দেখ ওদের মা শ্যামলীতে ভিক্ষা করে। এ কথা শুনেই ছেলেরা আমার খুব কান্না করে। তারা বলে, মা তুমি আর ভিক্ষা করিও না। প্রয়োজনে সবাই মিলে অন্যের বাসায় কাজ করবো। তবুও তুমি ভিক্ষা করিও না। স্কুলে সবাই আমাদের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকায়।

এ কথা বলেই মোবাইল ফোনের অপরপ্রান্তে কেঁদে ফেলেন সাকিব ও তামিমের মা সাথী আক্তার। ওই সময় তিনি মোবাইল ফোনে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

তিনি বলেন, শখে কি মানুষের কাছে সাহায্য চাই। আমার পরিবারে আয় রোজগার করার মতো কেউ নেই। ওদের বাবা যখন মারা যায় সাকিবের বয়স তখন এক বছর। আর তামিম তখন ৮ মাসের পেটে। হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব চালাতো ওদের বাবা। ৬ বছর আগে মোহাম্মদপুর পুরান থানার পাশে বাসের সঙ্গে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনি। মারা যাওয়ার পর কোথাও থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি।

এরপর থেকেই মানুষের কাছে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে অনেক কষ্ট করে দুই ভাইকে লালন পালন করে বড় করেছি। তাদের পথশিশু হতে দেইনি। সারাক্ষণ সঙ্গে রাখতাম। যেন খারাপদের সঙ্গে না মিশতে পারে। সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে তিনি আদাবর ১০ নম্বর রোডের বেকারি মোড়ের বস্তিতে থাকেন। সেখানে সাকিব ও তামিমকে সবাই চেনে।

সাকিবের বয়স এখন ৭ বছর, আর তামিমের ৬ বছর। দু’জনেই কল্যাণপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। সকাল ৭টায় তাদের নিয়ে স্কুলে যায় তাদের মা। ১০টায় স্কুল ছুটি হওয়ার পর মাঝে মধ্যে শ্যামলী ওভারব্রিজের নিচে সন্তানদের পাশে বসিয়ে পথচারীদের কাছে সাহায্য সহযোগিতা চান তিনি। কারও দয়া হলে ১শ টাকাও দেয়। কেউ ৫ থেকে ১০ টাকাও দেয়। ২শ টাকা হলেই দুপুরের ১২টার মধ্যে সন্তানদের নিয়ে বাসায় চলে যান সাথী আক্তার।

তিনি বলেন, যে টাকা সাহায্য পাই সেটা জমাই। কারণ বাসা ভাড়া দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা। এ মাস থেকে দুই জনের প্রাইভেটের বেতন দিতে হবে ১৬শ টাকা। আমি মাত্র ক্লাস সিক্স থেকে পড়েছি। এখনকার পড়াগুলো খুব কঠিন তাই নিজে পড়াতে পারি না। এজন্য প্রাইভেট দিয়েছি।

সাথী আক্তার বলেন, আমার আর ভিক্ষা করার ইচ্ছে করে না। লজ্জা লাগে। বার বার সাকিব আর তামিমের সেই কান্নার কথা মনে পড়ে। কিন্তু করার কিছুই নেই, চলতে তো হবে। স্বামী মারা যাওয়ার পর কূল-কিনারা হারিয়ে ফেলেছি।

তিনি বলেন, চাকরি আমি করতে পারবো না। সেই যোগ্যতাও আমার নেই। তাছাড়া আমার ছেলেরা সারাদিন বাড়িতে একা থাকবে। হয়তো খারাপ কিছুতে জড়িয়ে পড়বে তারা। আমি চাই ছেলেদের সারাক্ষণ আমার সঙ্গে রাখতে। এভাবেই তাদের পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করতে। তবে কেউ যদি বাড়ির সামনে একটা দোকান করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে হয়তো আমার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়াটা সহজ হতো। প্রয়োজনে ছেলেদের নিয়ে সারাদিন দোকান করবো। কেউ কি এই সহযোগিতা করবে আমাকে?

সাথী আক্তারের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামে। তার স্বামী ইমরুল কায়েসের বাড়িও ময়মনসিংহে। সাথীর বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা আরেকটি বিয়ে করেন। এরপর এতিম হয়ে যান তিনি। ২০০০ সালে ইমরুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে সাথীর। ওই বছরই তারা বিয়ে করে।

সাথী বলেন, বিয়ের পর আমাদের সংসারটা বেশ সুখের ছিল। সে খুব ভালোবাসতো আমাকে। কারণ আমার স্বামীর আয় রোজগার ভালো ছিল। ট্যাক্সি ক্যাব চালাতো সে। তখন আমরা রাজধানীর আদাবরেই থাকতাম।

তিনি বলেন, সাকিবের জন্ম হয়েছে ২০১১ সালে ময়মনসিংহে। তার জন্মের পরপরই আমার স্বামী জানায়, ছেলের নাম সাকিল আল হাসান রাখবো। কারণ সে নিয়মিত খেলা দেখতো। সাকিবের খুব ভক্ত ছিল। যেদিন খেলা থাকতো সেদিন তার আয় রোজগার কম হতো। রাস্তায় গাড়ি রেখে যেকোনো দোকানে খেলা দেখতো। সে মারা যাওয়ার সময় তামিম ৮ মাসের পেটে। তার জন্মের পর আমার খালাতো ভাই নাম রাখলো তামিম ইকবাল। সেও খেলা ভক্ত ছিল। এভাবেই দুই ভাইয়ের নামকরণ হয় সাকিব ও তামিম।

জাগো নিউজের এই প্রতিবেদকের কথা হয় সাকিবের সঙ্গেও। সে জানায়, বড় হলে আর্মি অফিসার হবো। এই প্রতিবেদককে আবদার জানিয়ে সাকিব বলে, অ্যাঙ্কেল আমি আর তামিম সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের সঙ্গে দেখা করতে চাই। আপনি কি ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?

তাদের আবদার শুনে চেষ্টা করবো জানিয়ে, কথার সমাপ্তি করতে হয় এই প্রতিবেদককে। তবে এই প্রতিবেদকও জানে না কিংবদন্তি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের সঙ্গে তাদের দুই ভাইয়ের দেখা করানো সম্ভব কীনা?

সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য একজন মাকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে সরিয়ে আনতে সমাজের হৃদয়বান মানুষগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। কেউ এই পরিবারটিকে সহযোগিতা করতে চাইলে সাথী আকতারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে 01724-118753 ।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin