‘রাজাকারের বাচ্চাদের দেখে নেব। মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে। মতলববাজ, জামায়াত-শিবির ও তাদের এজেন্টদের সামান্য ছাড় দেয়া হবে না’। সোমবার সংসদ অধিবেশন চলাকালে সরকারি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অভিযুক্ত করে এসব কথা বললেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, ছাত্রদের প্রতি আমাদের কোনও ক্ষোভ নেই। কিন্তু জামায়াত-শিবির ও তাদের এজেন্টদের ব্যাপারে শিথিলতা করা হবে না।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, যারা দেশের জন্য জীবন বাজি রাখেন, পৃথিবীর সব দেশে তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা সুযোগ পাবে না, রাজাকারের বাচ্চারা সুযোগ পাবে? তাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংকুচিত হবে? রাজধানীকেন্দ্রিক একটি এলিট শ্রেণি তৈরির চক্রান্ত চলছে। তারই মহড়া গতকাল আমরা দেখলাম।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী কোটা সংস্কারের আন্দোলন নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান। পরে বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও কয়েকজন এমপি বক্তব্য রাখেন। কেউ কেউ কোটা সংস্কারকে যৌক্তিক উল্লেখ করে বিষয়টি বিবেচনার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী রাতের আঁধারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় হামলার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এটা শিক্ষার্থীদের জন্য একটা কলঙ্কজনক ইতিহাস। প্রতিবাদ করতে মুখোশ কেন পরতে হবে? মুখোশ কারা পরে? যারা ভণ্ড, প্রতারক তারাই মুখোশ পরে। সাহস থাকলে মুখটা দেখাও। ইতর হওয়ার একটা সীমা আছে।’
তিনি বলেন, যারা সাঈদীকে চাঁদে নিয়ে যায়, মুখোশ পরে হামলা করে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলব তাদের কোনও ক্ষমা নেই। তাদের ক্ষমা করা যাবে না। এই দেশে হয় তারা থাকবে, না হয় আমরা থাকবো।
অধিবেশনে রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি যুক্তিসঙ্গত। নাগরিকদের দাবি জানাবার, আন্দোলন করার অধিকার আছে। কিন্তু উপাচার্যের বাড়িতে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তা কি ভুল নাকি অনুপ্রবেশ; সেটা একটা বিষয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনটা ঘটেনি। আন্দোলনে নেমে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য কেন?
স্বতন্ত্র এই এমপি কোটা সংস্কারের দাবির প্রতি নৈতিক সমর্থন জানান। তিনি বলেন, এ নিয়ে মন্ত্রিসভা ও সংসদে আলোচনা হতে পারে। সংসদীয় একটি কমিটি করা যেতে পারে। এই কমিটি সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরর নেতৃত্বে যে আলোচনা চলছে, এর সহায়ক হবে। ন্যায়সঙ্গত একটা সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নানকের ইন্ধনেই ভিসির বাস ভবনে হামলা!
আবারো আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সুপরিকল্পিতভাবে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে নৃশংসভাবে হত্যার সময় আলোচনায় এসেছিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। কথিত বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনা করতে সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জাহাঙ্গীর কবির নানককেই পিলখানায় পাঠিয়েছিলেন।
নানক আর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বের হয়ে আসার পর রাতের আধারে বিডিআরের পোশাক পরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা সেনা কর্মকর্তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশগুলো মাটির নিচে পুতে রাখে। পরবর্তীতে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর কবির নানক আর সাহারা খাতুন কথিত সমঝোতার কথা বলে পিলখানায় ঢুকে কথিত বিদ্রোহীদেরকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের জন্য আরও উস্কে দিয়ে আসছিলেন।
সেই জাহাঙ্গীর কবির নানকই আবার রোববার মধ্যরাতে কথিত সমঝোতার বাণী নিয়ে আসছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে কথিত শান্তির বাণী শুনিয়ে নানক ক্যাম্পাস ছাড়ার পরই রাতের আধারে বর্বরোচিত ঘটনাগুলো ঘটে।
টিভি চ্যানেলগুলোর ফুটেজে দেখা গেছে, জাহাঙ্গীর কবির নানক যখন ঢাবি ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীদেরকে কথিত শান্তির বাণী শুনান তখন তার পাশে ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। নানক তার বক্তব্য শেষ করে জায়গা ত্যাগ করার পর পরই ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি জঙ্গি মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ছাত্রলীগ যখন ক্যাম্পাসে মিছিল করে তখনই বাতি নিভিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, ছাত্রী ও ভিসির বাস ভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। মিছিলকারীদের মধ্য থেকেই একটি গ্রুপ মুখে কালো কাপড় বেধে ঢাবি ভিসির বাস ভবনে ঢুকে ভাঙচুর চালায়।
ভাঙচুরের সময় ঢাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা তখন ভিসি সঙ্গে ছিলেন। তিনি আজ গণমাধ্যমকে বলেছেন, হামলাকারীরা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে ভিসির বাসায় ঢুকে ভাঙচুর করেছে।
ঢাবি ভিসির বাস ভবনে হামলা-ভাঙচুর নিয়ে অনেক প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রলীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী যখন ঢাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে মিছিল করে তখন ভিসির বাস ভবনে ভাঙচুর করা হয়। ছাত্রলীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর সামনে ভিসির বাস ভবনে শিক্ষার্থীরা হামলা-ভাঙচুর করবে এটা কেউ বিশ্বাস করে না।
আর ভিসির বাস ভবনে যেভাবে হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দ্বারা সম্ভব না। এটা শুধু ছাত্রলীগের দ্বারাই সম্ভব।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, জাহাঙ্গীর কবির নানকের বক্তব্যের পর ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে কেন? আর নানকে যাওয়ার পরই এসব হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখানে স্পষ্ট হয়ে গেছে, আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ফাঁসাতেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মুখে কালো কাপড় বেধে এ হামলা করেছে। আর জাহাঙ্গীর কবির নানকের ইঙ্গিতেই ছাত্রলীগ এটা করেছে। নানক কথিত শান্তির বাণীর আড়ালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে উস্কে দিয়ে গেছেন। নানকের উস্কানিতেই তারা ভিসির বাস ভবনে হামলা-ভাঙচুর চালায়।
অ্যানালাইসিস বিডি