কোকোর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদালেন খালেদা জিয়া

ছােট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আদালতে হাজিরা শেষে ছেলের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে ভেঙে পড়েন তিনি। তার অশ্রুসিক্ত চোখ দেখে কেঁদেছেন উপস্থিত নেতাকর্মীরাও। এসময় সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণ হয়।

বুধবার বাদ আসর বনানী কবরস্থানে আরাফাত রহমান কোকোর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।

বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে প্রিয় ছেলের কবরে গিয়ে ফাতিহা শরিফ পাঠ করে মোনাজাত করেন বেগম জিয়া। এরপর প্রায় ঘণ্টাব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত করেন তিনি।

এ সময় বেগম জিয়ার চোখ কান্নার জলে সিক্ত হয়ে যায়। প্রিয় নেত্রীর অশ্রুসিক্ত নয়ন দেখে উপস্থিত নেতাকর্মীদের অনেকেই চোখের জল লুকিয়ে রাখতে পারেননি। পরে দ্বিতীয়বার মোনাজাত শেষে গুলশানের বাসভবন ফিরোজাতে চলে যান খালেদা জিয়া।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন- নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, ফজলুল হক মিলন, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইদ সোহরাব, নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ।

ছেলের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনেও আদালতে হাজিরা দিয়েছেন বিএনপি প্রধান। ঢাকার আলিয়া মাদরাসার মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে হাজিরা শেষে বিকেলে বাসায় পৌঁছেন খালেদা জিয়া। বাসায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষে বনানীতে ছেলের কবরে দোয়া মোনাজাত করেন তিনি।

এই সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল
‘ইতোমধ্যে এটা প্রমাণিত হয়েছে এই সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, স্পষ্ট করেই বলেছি, নির্বাচনকালীন সময়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই, সমান সুযোগ চাই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার দুপুরে বনানী কবরস্থানে বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার গণতান্ত্রিক সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। জনগণের ভোট দেওয়ার যে নূন্যতম অধিকার, তাও কেড়ে নিয়েছে। আজকে কথা বলা, লেখার ও সংগঠন করার সুযোগ নাই। রাস্তায় বের হওয়ার সুযোগ নাই। এমনকি খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আমাদের দলের তরুণরা যখন তাকে আদালতে নিয়ে যায়, নিয়ে আসে, তখন ৫০-৬০/১০০ জন নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়। তাই আমাদের এই কথা মনে রাখতে হবে যে আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে সমাজে-রাষ্ট্রে তারা জোর করে ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়। কিন্তু তারা তা পারবে না। এর অবসান হবেই। এ দেশের মানুষ নি:সন্দেহে তাদের পরাজিত করবে।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চক্রান্ত করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিদিন সারা দেশে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, মিথ্য মামলা দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্য মামলা দিয়ে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চক্রান্ত হচ্ছে। তারেক রহমানকেও মিথ্য মামলা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, সরকার গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, জনগণের ভোট দেওয়ার ন্যূনতম অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কথা বলা, লেখার ও সংগঠন করার সুযোগ নাই। রাস্তায় বের হওয়ার সুযোগ নাই। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। আমরা আবারও বলছি এই অবস্থা চলবে না, চলতে দেওয়া হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের উপর হামলার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাবিতে যা ঘটেছে তা আওয়ামী লীগের চরিত্র। এটা ছাত্রলীগের নতুন কিছু ব্যাপার নয়। তারা বহুবার শিক্ষকদের মেরেছে, ছাত্রদের মেরেছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিক্টেটেরিয়াল যে অথরিটি আছে তারা যখন তাদের (ছাত্রলীগ) বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তখনেই তারা (ছাত্রলীগ) হাতিয়ার নিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষের উপর আক্রমণ করেছে। আজকে দেশে সমাজে রাষ্ট্রে তারা জোর করে ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়। কিন্তু তারা তা পারবে না। এর অবসান হবেই। এ দেশের মানুষ নি:সন্দেহে তাদের পরাজিত করবে।’

এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালি, আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে ও কোকোর রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালি, আবদুস সালাম ও সাংগঠনিক শামা ওবায়েদ প্রমুখ।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin