bicharpoti

কে হচ্ছেন নতুন প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতির পদ থেকে বিচারপতি এসকে সিনহার পদত্যাগের পর এখন দেশের সর্বত্রই প্রধান আলোচ্য বিষয় পরবর্তী ২২তম প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন। প্রথা অনুযায়ী পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারপতির প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হবে কি হবে না তা নিয়ে আলোচনায় সরগরম রাজনৈতিক মহলসহ সর্বত্র। অবশ্য অতীতে এই প্রথা ভেঙে জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে কাউকে কাউকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের নজির রয়েছে।একজন প্রধান বিচারপতির এভাবে পদত্যাগের ঘটনা স্বাধীনতার ৪৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম।

জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা এক নম্বরে, দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারক হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং তৃতীয় অবস্থানে আছেন বিচারপতি মো. ইমান আলী। এছাড়া ক্রম অনুযায়ী আরো আছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।নানা নাটকীয়তার পর ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিচারপতি এসকে সিনহা। তিনি সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে তার পদত্যাগপত্র পাঠান।

গতকাল শনিবার রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব এম জয়নাল আবদীন জানান, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পৌঁছেছে। তবে অন্যান্য দাপ্তরিক ক্রিয়াকর্ম প্রক্রিয়াধীন আছে। জানা যায়, বাংলাদেশগামী একটি বিমানে পদত্যাগপত্রটি ঢাকায় পাঠানো হয়।২০১৮ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সিনহার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি এসকে সিনহা শপথ নেন। ওইদিন থেকে এ পদে তিনি ১০২৭ দিন অর্থাত্ প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের প্রধান বিচারপতির অবসরের বয়স থাকা সত্ত্বেও বিচারপতি সৈয়দ কামালউদ্দিন হোসেনকে সরে যেতে হয়েছিল। কারণ হঠাত্ করে বিচারপতিদের অবসরের বয়স কমিয়ে দিয়ে একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। বিচারপতি হোসেন এজলাসে উঠে জানতে পারেন তার অবসরের বয়স কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে তিনি বিচারালয় থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। এছাড়া প্রধান বিচারপতি এসএম সায়েমকেও পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল বলে খবর রয়েছে। সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা পদত্যাগ করলেন যা নজিরবিহীন বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। তবে এখন দেখার বিষয় কাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়।

জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী এক নম্বর ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রথা আগেই ভঙ্গের নজির রয়েছে। ২০১১ সালের ১৩ মে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান পদত্যাগ করেন। তাকে ডিঙ্গিয়ে প্রধান বিচারপতি করা হয়েছিলো দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনকে। মোজাম্মেল হোসেনের পূর্বে আরো একবার শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে ডিঙ্গিয়ে প্রধান বিচারপতি করা হয় বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে। বিচারপতি মোমিনুর রহমান ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম হান্নান শাহর ভাই।

জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও ঘটেছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ও বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে ডিঙ্গিয়ে যথাক্রমে বিচারপতি কেএম হাসান ও বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও বিচারপতি এমএম রুহুল আমিনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয় জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে ডিঙ্গিয়ে।আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে ডিঙ্গিয়ে বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। যদিও পরে বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে নিয়োগ দেওয়া হয় বিচারপতি এমএ মতিন ও বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে ডিঙ্গিয়ে।

উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে গত ৩ জুলাই রায় দেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ। পুনর্বহাল করা হয় সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান। রায়ে কড়া সমালোচনা করা হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আমি ও আমিত্ব’-এর সংস্কৃতির।

এরপরই ওই রায় ও রায়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার দেওয়া পর্যবেক্ষণের তীব্র সমালোচনা করেন সরকার ও সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা। তাতে যোগ দেয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলও। এমনকি সরকার ও সরকারপন্থি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারাও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সরব হন। পাশাপাশি রায়ে প্রধান বিচারপতির দেওয়া পর্যবেক্ষণও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এছাড়া গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে একটি প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়।

তবে রায়কে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন বিএনপি ও তার সমর্থিত আইনজীবীরা।এই প্রেক্ষাপটে গত ৩ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা; কিন্তু ওই মেয়াদ শেষ না হতেই গত ১০ অক্টোবর ছুটির মেয়াদ আরো দশ দিন বৃদ্ধি করেন প্রধান বিচারপতি।১২ অক্টোবর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি বর্ধিত ছুটিকালীন বিদেশে অবস্থানকালে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অথবা পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন।

সূত্র:purboposhchim

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin