কোটা সংস্কারের দাবি – ৭ দিনের মধ্যে ৫ দফা মানার আহ্বান

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁরা অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। সাত দিনের মধ্যে তাঁদের পাঁচ দফা দাবি মানতে হবে। এ ছাড়া তিন দিনের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে—এমন কথা লিখিতভাবে জানাতে হবে, তাহলে আন্দোলন থেকে সরে আসবেন তাঁরা। এ সময়ে সারা দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকবে।

আজ মঙ্গলবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে তাঁরা জানান, সরকারের আশ্বাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন তাঁরা।

বেলা আড়াইটার দিকে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ জুবায়ের উদ্দীন বলেন, ‘উপাচার্য স্যারের বাসায় যে হামলা হয়েছে, আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। ক্যাম্পাসে পুলিশ দিয়ে নির্যাতন, বহিরাগত ব্যক্তিদের দিয়ে আক্রমণ—এগুলোর সুষ্ঠু বিচার চাই। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে পুলিশের অবস্থান শিথিল করতে হবে। আমাদের কটাক্ষ করে মতিয়া চৌধুরী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যে প্রত্যাহার করে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।’

এর আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে কয়েক শ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীর একটি মিছিল রোকেয়া হলের সামনে দিয়ে টিএসসি হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হয়। সেখানে শত শত আন্দোলনকারী কোটা সংস্কারের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীদের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন এই পক্ষটিকে মিছিল না করার অনুরোধ জানান। সরকার শেষ পর্যন্ত কী করে, তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে মিছিল শুরু করে আন্দোলনকারীদের একটি পক্ষ।

বিদ্যমান কোটার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে—সরকারে এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল সোমবার বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে প্রতিনিধিদল যে পাঁচ দফা দাবির কথা জানায়, তা হলো  ১. কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে আনতে হবে, ২. কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ দেওয়া যাবে না, ৩. চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা বারবার ব্যবহার করা যাবে না, ৪. সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্কস ও বয়সসীমা নির্ধারণ করতে হবে এবং ৫. কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধায় নিয়োগ দিতে হবে।

বৈঠকের পর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করছেন। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া সবাইকে মুক্তি দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। গতকাল রাতে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ও বাংলা একাডেমি এলাকায় অবস্থান নিয়ে তারা স্লোগান দিতে থাকে।

ওই অংশটিই আজ সকাল থেকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও পরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়।

কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আতাউল্লাহ আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। আমরা আন্দোলনকারীদের বোঝাচ্ছি, অন্তত ৭ মে পর্যন্ত তাঁরা যেন আন্দোলন স্থগিত রাখেন। আমরা দেখতে চাই সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়। ৭ মের মধ্যে সরকার কোটা সংস্কারের পক্ষে দাবি মেনে না নিলে আমরা আবারও আন্দোলন শুরু করব।’ তিনি বলেন, যাঁরা এখন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা এ বিষয়ে না জেনেই আন্দোলন করছেন। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করছেন।

মো. আতাউল্লাহ জানান, কোটা সংস্কারের পক্ষে ফেসবুকে একটি গ্রুপ আছে, যার সদস্য ১৪ লাখের ওপরে।

এদিকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষের কয়েকজন জানান, আন্দোলন স্থগিত রাখলে সরকার দাবি পূরণ করবে না।

বিদ্যমান কোটার সংস্কার চেয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এ দফায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছে। গত রোববার তাদের পদযাত্রা ও অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় ঢাকায় পুলিশ বাধা দিলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin