কার হয়ে খেলছেন নূর?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন অন্যতম আলোচিত নাম ডাকসুর সাবেক ভিপি নূর। নূর নিজে ধর্ষণের অভিযোগ মাথায় নিয়ে ধর্ষণ বিরোধি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে যে, একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে নূরকে আলোচনার পাদপ্রদীপে নিয়ে আসা হয়েছে।

তাকে জিরো থেকে হিরো বানানোর একটি পরিকল্পিত নীল নকশা বাস্তবায়ন যেন চলছে। কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে নূর আলোচনায় আসেন। সেখানে ছাত্র অধিকার পরিষদ গঠন করে সারা দেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল নূর সহ কয়েকজন।

এই আন্দোলনে যারা যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে জামাত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। যদিও নূর এ অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করেন। তিনি বরাবরই বলেন যে, ছাত্রদের অধিকারের জন্য কাজ তিনি করছেন। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্যই তিনি আন্দোলন করছেন।

কোটা আন্দোলন জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরপরই নূর আরো ছাত্র রাজনীতিতে পরিচিত মুখ হন। কোটা আন্দোলনে সফল হওয়ার পরেও অদৃশ্য শক্তির হাত ছিল বলে মনে করা হয়। কারণ কোটা আন্দোলনে অযাচিত ভাবে বাধা দেওয়া। নূরের ওপর হামলা করা ইত্যাদি করে প্রায় অপরিচিত একজন ছাত্রকে আলোচনায় নিয়ে আসা হয়েছে, বলে অনেকে মনে করেন।

এরপর নূর ডাকসু’র নির্বাচনের প্রার্থী হন। সবাইকে চমকে দিয়ে ডাকসু’র ভিপি পদে বিজয়ী হয়েছিলেন নূর। কিভাবে ওই নির্বাচনে নূর বিজয়ী হল, সেটি একটি কোটি টাকার প্রশ্ন বটে এবং সেই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর, এখনো পাওয়া যায়নি।

বিশেষ করে ছাত্রলীগের সভাপতিকে হারিয়ে নূরের ডাকসু ভিপি হওয়াটা ছাত্র রাজনীতির এক রহস্যময় অধ্যায়, বলে মনে করেন অনেকে। কেউ কেউ মনে করেন যে, তাকে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।

আর ডাকসু ভিপি হিসেবে অকার্যকর ব্যর্থ এবং অযোগ্যতা পরিচয় দেয়ার পরও রাজনীতিতে নূর ম্লান হয়ে যায়নি। বরং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যখনই রাজনীতিতে ন্যুজ্বমান হয়ে পড়ছেন আলোচনার বাইরে যাচ্ছেন; তখনই কোন একটা কিছু ঘটিয়ে তাকে আলোচনার মধ্যে আনা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক ডাকসু ভিপি পদ থেকে সরে যাওয়ার পরে নূর প্রায় আলোচনার একদম বাইরে চলে গিয়েছিলেন। অথচ এই সময় হঠাৎ করেই এক ছাত্রী নূরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেন।

মজার ব্যাপার হলো, ওই ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরা-ফেরা করছে এবং তারাই এখন ধর্ষণ প্রতিরোধে আন্দোলন করছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল যে, ওই ছাত্রীর ধর্ষণ বিরোধী মামলার পর পরই সারা দেশে ধর্ষণের এক মহামারি রূপ আমরা লক্ষ্য করলাম। দেশের বিভিন্ন স্থান ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নূর এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করার পর পরই দেখা গেল যে, তারা সামান্য ক’জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি আন্দোলন আন্দোলন খেলায় অংশগ্রহণ করলো।

কি কারণে সেখানে আইনশৃখলা বাহিনী নূরদের গ্রেফতার করলো এবং এর পরপরই তাকে ছেড়ে দেয়া হলো- সে এক রহস্য বটে। এরপরই নূর অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন নূর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

এই কর্মসূচি পালন করতে যেয়ে, তিনি সরকারকে নানা ভাবে হুমকি-ধমকিও দিচ্ছেন। আগামী ১৫ এবং ১৬ তারিখ নূরের নেতৃত্বে বেগমগঞ্জে লং মার্চ করার কথা রয়েছে। বলা হচ্ছে যে, নূরকে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবহার করছেন দাবার গুটি হিসেবে।

আবার অনেকেই মনে করছেন যে, বিরোধী দলের রাজনীতির দাবার গুটি নয়। বরং সরকারের হয়েই খেলছেন নূর। একটা পর্যায়ে দেখা যাবে যে, নূর তার আসল রূপ প্রকাশ করবে। নূরের বড় রাজনীতি করার কথা। ডাকসু’র ভিপির পদ থেকে সরে যাবার পর তিনি উত্তরা নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু কেন তিনি করে নি, সেটাও একটা রহস্য। তবে যে প্রক্রিয়ায় নূরকে নেতা বানানো হচ্ছে, সে প্রক্রিয়া নূর কার পক্ষে নেতা হবেন বা কার পক্ষে খেলবেন- সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কারণ যারা আদর্শহীন ভাবে রাজনীতিতে হঠাৎ করে ফুলে-ফেঁপে ওঠে, তারা কখন কোন পক্ষে খেলেন, কোন পক্ষে খেলে কার পক্ষে গোল দেন- সেটি একটি অমীমাংসিত বিষয় বটে।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin