কার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে বিএনপি?

জিয়া পরিবার থেকে মুক্ত হলে বিএনপির চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী অনেকেই। দলের মধ্যে যেমন বিএনপির চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আছেন, তেমনি দলের বাইরেও বিএনপি প্রধান হওয়ার পদপ্রর্থীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। সরকারের সাথে সমঝোতার অংশ হিসেবে ‘জিয়া পরিবার মুক্ত’ বিএনপি গঠনের আলোচনায় বেশ কিছু নাম উঠে এসেছে। দাতা ও বন্ধু দেশগুলো বেগম জিয়া ও তারেক জিয়ার বাইরে কাউকে বিএনপির নেতৃত্বে দেখতে চায়। যার নেতৃত্বে বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

বেগম জিয়া দণ্ডিত হওয়ায় তাঁর জন্য আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। তারেক জিয়া ইতিমধ্যে দণ্ডিত হওয়ায় এবং আপিল বিভাগে আপিল না করায়, নির্বাচনে অযোগ্য হয়েছেন। বেগম জিয়া মুক্ত হলেও , সমঝোতার অংশ হিসেবে নির্বাচন কালীন সময়ে দেশের বাইরে থাকবেন। এজন্যই উন্নয়ন সহযোগী এবং বন্ধু রাষ্ট্ররা চাইছে, জিয়া পরিবারের বাইরে বিএনপির নেতৃত্ব।

এমনকি ওই নেতৃত্ব যদি আওয়ামীলীগ বিরোধী ঐক্যবদ্ধ মোর্চার মাধ্যমেও হয় তাহলেও বিদেশী কূটনীতিকদের আপত্তি নেই। এই প্রেক্ষাপটে অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের আলোচনার পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী বিরোধী মোর্চার বিষয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে।

জিয়া পরিবার মুক্ত বিএনপির প্রধান হবার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বেগম জিয়ার কারান্তরীনের পর তিনিই এখন বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে তার ইমেজ ভালো। আন্তর্জাতিক মহলেও তার গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু বিএনপির মত দলের প্রধান হওয়ার জন্যে যে ক্যারিশমা দরকার, তার ঘাটতি মির্জা ফখরুলের রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।

যারা আওয়ামী লীগে কর্তৃত্ব খর্ব করতে একটি শক্তিশালী বিরোধী মোর্চা করতে চান, তারা শুধুই বিএনপি নয় সকল আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তির জোট চান। এরকম একটি জোট ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়েই আগামী নির্বাচন করুক, এমন অভিপ্রায় অনেকের।

এই মত পোষণকারীদের অনেকের পছন্দ সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। জাতীয় নেতা হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তাও কম নয়। তাঁর স্বচ্ছ ইমেজও রয়েছে। কিন্তু বিএনপির মধ্যেই তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিএনপির একটি বড় অংশের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্যও নন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালিন আরেক নেতা  কর্ণেল (অবঃ) অলি আহমেদ। তিনিও সৎ এবং ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। কিন্ত জাতীয় নেতা হবার ক্ষেত্রে তাঁর ব্যাক্তিত্বের ঘাটতি রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।

শেষ পর্যন্ত জিয়া পরিবার বিহীন বিএনপি বা বিএনপি মোর্চার প্রধান নেতা কে হবেন তা জানার জন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

আগে কাদের, পরে ফখরুল যাচ্ছেন ভারতে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয় সেজন্য মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামী সপ্তাহে ভারত সফরে যাচ্ছেন। মার্চের শেষ সপ্তাহে ভারত সফরে যাবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যদিও দুই দলের পক্ষ থেকেই, ভারতের মধ্যস্থতার উদ্যোগের কথা অস্বীকার করা হয়েছে।

কিন্তু কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভারত উদ্যোগী হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ভারতকেই দায়িত্ব দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ভারতে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তবে তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে। যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি শুভেচ্ছা সফরে যাচ্ছি। এর সঙ্গে আগামী নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।

ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। আমরা সব সময় ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী।’ কিন্তু একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে সরকার কতদূর পর্যন্ত ছাড় দেবে সে ব্যাপারটি চূড়ান্ত হবে ভারতে। এরপরই বিএনপি মহাসচিব যাবেন ভারতে। তবে, তার সফরসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

বাংলা ইনসাইডার

তারেক জিয়া দেশে ফিরবেন?

এ সপ্তাহের মধ্যে বেগম জিয়া মুক্তি না পেলে কঠোর আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও দেশে ফিরতে পারেন। বিএনপির বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র এ খবর জানিয়েছে। বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, ‘তারেক জিয়ার দেশে প্রত্যাবর্তনের মধ্যে দিয়ে বিএনপি আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়।’

বিএনপি আশা করছে, রোববার-সোমবারের মধ্যে বেগম জিয়া হাইকোর্ট থেকে জামিন পাবেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে বেগম জিয়া এখন কারাভোগ করছেন। এই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে বেগম জিয়ার আইনজীবীরা ইতিমধ্যে আপিল দায়ের করেছেন। হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে। রোববার হাইকোর্ট জামিনের ব্যাপারে আদেশের জন্য রেখেছে।

কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সূত্রে বলা হয়েছে, রোববারও তারা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কিছু বক্তব্য রাখবে। বেগম জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, আজ কালের মধ্যে হাইকোর্ট আদেশ দেবে। তাদের ধারণা এই মামলায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন না হওয়ার কারণ নেই। বেগম জিয়া মুক্তি হওয়া না হওয়ার উপর বিএনপির রাজনীতির কৌশল অনেকখানি নির্ভর করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে, বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা  বলেছেন ‘সমঝোতার যে কথা শোনা যাচ্ছে, তা সত্য হবে যদি আমরা দেখি চেয়ারপারসনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জামিন পাবার পর যদি তাকে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাহলে আর সমঝোতার সম্ভাবনা নেই।’ ওই নেতা বলেছেন, ‘সেক্ষেত্রে পর্যায় ক্রমে আন্দোলনকে আমরা বেগবান করব। আন্দোলনের একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে তারেক জিয়া দেশে ফিরবেন।’

গত দুই দিন তারেক জিয়া দলীয় আইনজীবীদের সঙ্গে তার মামলা এবং দণ্ড নিয়ে আলোচনা করেছেন। মানি লন্ডারিং মামলায় তাঁকে দণ্ড দিয়েছে হাইকোর্ট। কাজেই এই মামলায় জামিন পেতে হলে তাঁকে প্রথমে আত্মসমর্পণ করতে হবে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলাও চূড়ান্ত পর্যায়ে।

বিএনপির একজন নেতা বলছেন, সরকারের শেষ প্রান্তে এসে তারেক জিয়ার দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির ওই নেতা বলেছেন, রোজার পর থেকে বিএনপি আন্দোলন বেগবান করবে যদি সরকারের সাথে সমঝোতা চূড়ান্ত না হয়। এমনকি বেগম জিয়া মুক্ত হলেও, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বড়সড় আন্দোলন করতে চায় বিএনপি।

ওই আন্দোলনকে বিএনপি সেপ্টেম্বর অক্টোবরে একটা মোমেন্টাম দিতে চায়। এসময় মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে সরকারের নিয়ন্ত্রণও আলগা হয়ে যাবে। তারেক জিয়া এই সময়টিকেই তার দেশে ফেরার জন্য বেছে নিয়েছেন বলে বিএনপির একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছে। তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ এক তরুণ নেতা বলেন ‘নিশ্চিত থাকুন, নির্বাচনের আগে আগে তারেক জিয়া দেশে ফিরবেন। তার দেশে ফেরাটাই হবে, নির্বাচন এবং রাজনীতির ট্যানিং পয়েন্ট।’

তবে, বিএনপির মধ্যেই অনেক সিনিয়র নেতা এগুলোকে ‘তারেক জিয়ার পলিটিকাল ট্যান্ট’ বলে মনে করেন। তাদের মতে ‘যদি তার দেশে ফেরার ইচ্ছা থাকতো তাহলে তো মায়ের জেলের পরই তাঁর দেশে ফেরা উচিত ছিল।’ এরকম একজন নেতা বলেছেন ‘দেশে ফেরার মতো সৎ সাহস তারেক জিয়ার নেই। তারেকের সংগে একাধিক দিন টেলিফোনে কথা বলেছি। রাজনীতি নিয়ে তাঁর কোনো সিরিয়াসনেস নেই।’

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin