manna_nagorik_okko

‘কারো ক্ষমতার দুয়ার খুলে দিতে আসিনি’

দেশের প্রধান বড় দুই জোটের ‘অপরাজনীতি ও দুর্বৃত্তায়নের’ বাইরে মানবিক, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের জন্য নতুন করে আত্মপ্রকাশ করেছে যুক্তফ্রন্ট। চারটি দল নিয়ে গঠিত এ জোট লুটপাট ও দুর্নীতির বাইরে গিয়ে সুষ্ঠু সমাজ গঠনে কাজ করবে। প্রয়োজনে বড় দুই দলের বিকল্প প্রার্থী দিয়ে জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নেবে। সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরার এক বাসায় চারদল নিয়ে নতুন জোট যুক্তফ্রণ্ট গঠন করা হয়।

পরদিন মঙ্গলবার ওই জোটের উদ্যোক্তাদের একজন মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে কথা বলেন পরিবর্তন ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালাহ উদ্দিন জসিম ও মাহমুদুল হাসান।

রাজধানীর তোপখানা রোডে নিজ কার্যালয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না নতুনজোট, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভাবনাসহ নানা বিষয়ে খোলোমেলা কথা বলেন।

এসময় মান্না বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লক্ষ্য মূলত জনগণের কল্যাণে নয়। তারা জনকল্যাণটাকে বক্তব্যের বিষয় মনে করে। ক্ষমতায় গেলে দেখা যায়, তারা নিজেদের ক্ষমতাটাকে চুটিয়ে উপভোগ করে।’

‘আমাদের সংকট হচ্ছে, গণতন্ত্রের। গণতন্ত্রের অর্থ শুধু মাত্র একদিন ভোট দিলাম এটা নয়। গণতন্ত্র প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তের বিষয়। গণতন্ত্র প্রত্যেকটি মানুষের বিষয়, সমাজের বিষয়,’ বলেন তিনি।

মান্না বলেন, ‘অনেকই বলেন শেখ হাসিনাকে সরাতে পারবেন না। কিন্ত এরও পরিবর্তন হবে। এখন যেটা চলছে, একথায় এখানে গণতেন্ত্রর লেশমাত্রও নেই। জায়েজ করার জন্য তারা (আওয়ামী লীগ) নিজেদের মতো করে বলছে এটা উন্নয়ণের গণতন্ত্র। তেমনটা উন্নয়নও কিন্তু নেই। যা আছে তাও আবার খুবই কম। জিডিপি উন্নয়নের কথা বলা হয়। কিন্তু এটা উন্নয়নের কোনো সূচক নয়।’

‘বর্তমানে যে শাসন চলছে এটা অনির্বাচিত স্বেচ্ছাচারী সরকার’ উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল জবর দখল, একপাক্ষিকভাবে ক্ষমতা দখল করা। বিরোধীদল হিসেবে যারা ছিলেন তারাও ঠিকমত আন্দোলন করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি। আমাদের প্রধান বক্তব্য হচ্ছে, একটা অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন।’
সেই লক্ষ্যই জোট গঠন করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘হ্যাঁ, তবে লক্ষ্য আরেকটু বিস্তৃত। এরকম একটি শক্তি দরকার; যারা অপরাজনীতি এবং দুর্বৃত্তায়নের বাইরে সুষ্ঠু ও সঠিক রাজনীতি গড়তে পারবে। জনগণকে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ উপহার দিতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একটা কল্যাণ রাষ্ট্র চাই। সে রাষ্ট্র আর যাই হোক লুটপাটে যাবে না, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। সর্বক্ষেত্রে জনগণকে প্রাধান্য দেবে। এই অর্থে আমরা বলতে পারি; আমরা মানবিক, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের জন্য জোটবদ্ধ হয়েছি।’

বড় দুই জোটের বাইরে আপনারা কিভাবে জনগণের কাছে পৌঁছাবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ‘জনগণের কাছে পৌঁছানোর বহু মাধ্যম আছে। কিছু গতানুগতিক মাধ্যম যেমন-মিছিল, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবো। অবশ্য সরকার তো এগুলো করতে দিচ্ছে না। অতএব সরকারের সঙ্গেও লড়াইটা করতে হবে। একই সঙ্গে আবার বিকল্প চেষ্টাও করবো।’

‘ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করবো। যদিও ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়ার জন্যও সরকার অনেক চেষ্টা করেছে। ৫৭ ধারা নিয়ে কত কথা হচ্ছে! তবু বিকল্প কিছু নিয়ে জনগণের কাছে যাব,’ যোগ করেন মান্না।

নতুন জোট গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার একটা ধারণা নিয়ে জোট শুরু করেছি। মানুষ দুই জোটের বাইরে নতুন একটা কিছু চায়। কিন্তু তা পাচ্ছে না। কিছুদিন আগ পর্যন্ত এমন পরিবেশ ছিল এই দুই জোটের বাইরে কিছু নেই।’

‘কিন্তু এখন মানুষ বিকল্প চায়। আমরা সেটাকে দৃশ্যমান করবো। বলবো দুই জোটের বাইরে আমরা আছি। তবে আমরা মনে করি যদি মুক্তভাবে পরিমাণ মতো আমরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারলে জনগণ আমাদের পক্ষে আসবে,’ বলেন নাগরিক ঐক্যের এই নেতা।

‘সেই সামর্থ কী আপনাদের জোটের আছে’ – এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ‘এখন নেই। তবে পরিস্থিতি বুঝে গড়ে তুলা যাবে।’
সদ্য ঘোষিত নতুন জোটে চার দলের বাইরে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল আছে কীনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আছে তো অনেকেই। তবে এখনও তারা আমাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানিকভাবে নেই।’

শুরুতে আপনারা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ জোট গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, কিন্তু জোট গঠনের সময় কেন উনি ছিলেন না’ এ প্রসঙ্গে মান্না বলেন, ‘উনি( ড. কামাল হোসেন) এই ফর্মেশনে রাজি নন। আমরা উনাকে জোটের মধ্যে পাইনি। কিন্তু উনাকে ভিন্ন পক্ষের মনে করছি না। উনি আছেন, যখন উনি মনে করবেন তখন তিনি আমাদের জোটে যোগ দেবেন। আমরা তাকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করবো।’

জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সম্পর্কে মান্না বলেন, ‘আমাদের বেশ কিছু কাজ বাকি আছে, একটা এর মধ্যে একটা ঘোষণা ড্রাফটিং হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত হয়নি। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যেই তো চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এটাকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবো। হতে পারে সংবাদ সম্মেলন বা বড় জনসভা অথবা কর্মীসভার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি।’

চলমান রাজনীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে আবারও অশনি সংকেত দেখি। বিএনপি -আওয়ামী লীগ দুই পক্ষই খুব ভালো করে বলছে তারা (বিএনপি) নির্বাচনে আসবে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া বলছে, জোর দিয়ে বলছেন তিনি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবেন না।’

মান্না বলেন, ‘উনি যদি নির্বাচন বয়কট করেন তাহলে আগামীতে নির্বাচন হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে এজন্য আমি তাকে (খালেদা জিয়া) দায়ী করছি না। এ পরিস্থিতির জন্য সরকার দায়ী। আমরা মনে করছি একটা গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দেয়া যাবে না। তবে এর বিকল্প কি হবে বুঝতে পারছি না। এটা নিয়েও এখন আমরা আলোচনা করিনি। কারণ এরা-আমরা আছি এবং সংবিধান অনুযায়ী আমরা থাকবোই। মানে সরকার যারা ভোটই করেনি, ১৫৩ জন বিনা ভোটে জিতেছে এটা আবার কিসের সরকার। এরাই আবার সংবিধান দেখাচ্ছেন। একটা মুখোমুখি অবস্থা।’

আগামী নির্বাচনে ‘যুক্তফ্রন্ট’ যাচ্ছে কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ‘আমরা যেহেতু একটি জোট করেছি। আমরা জোটগতভাবেই নির্বাচন করার কথা ভাবছি।’

বিএনপি নির্বাচনে না গেলে আপনারা যাবেন কী না-এ প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ‘পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবো। এটার উপরই এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির পলিসি নির্ভর করছে। সরকার এটাকে টোপ মনে করছে। তারা ভাবছে গতবার সবাই নির্বাচন বয়কট করছে। এবার যদি একটা অংশকে নিয়ে আসতে পারি তাহলে তো বিএনপি একলা পড়ে যাবে। আমরা কাউকে একলা ফেলার রাজনীতি করছি না। আবার কাউকে দরজা খুলে দেওয়ার রাজনীতিও করছি না। আমরা আমাদেরটা বুঝে সিদ্ধান্ত নিবো।’

৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারবেন কি না জবাবে তিনি বলেন, ‘পারবো তো বটেই। টার্গেটও আছে। কিন্তু আমরা এই মূহূর্তে মনে করছি না; আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম আর লোকজন আমাদের সঙ্গে হুড়হুড় করে আসতে থাকবে, জোয়ার তৈরি হয়ে যাবে। বরং আমরা প্রার্থী নিয়ে মানুষের কাছে যাবো; বলবো এটা বেটার কি না?’

আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন চান নতুন জোটের এই উদ্যোক্তা। নতুন জোটের নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের সফলতার অংশটা আমরা ফলো করবো।’

যুক্তফ্রন্টে থাকা দলগুলো হলো- সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে এই জোটের চেয়ারম্যান করা হয়েছে।

পরিবর্তন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin