risvi

কাদের তৎপরতায় নিখোঁজ ব্যক্তিরা গুম হয়েছিল? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন রিজভীর

‘আমরা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, পারভেজ, সুমন, খালেদ হোসেন সোহেল, কাজী ফরহাদ, মোঃ জহির, সুজন, সেলিম রেজা পিন্টু, ছাত্রনেতা জাকিরসহ গুম হওয়া কমপক্ষে ৭৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে পেতে অপেক্ষা করবো? বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের প্রতি প্রশ্ন করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গুমের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন-আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় নিখোঁজরা ফিরতে শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রশ্ন-তাহলে কাদের তৎপরতায় নিখোঁজ ব্যক্তিরা গুম হয়েছিল?

পাঁচ দিনের ব্যবধানে সাংবাদিক, অধ্যাপক, রাজনীতিবিদসহ ‘নিখোঁজ’ তিনজন ফিরে আসায় বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, তারাও দলের নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর ফেরার আশায় বুক বাঁধবেন কি না?

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘চলমান সব গুমের জন্য দায়ী বর্তমান জবাবদিহিহীন সরকার। বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুমের কর্মসূচি হচ্ছে অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার গ্যারান্টি। তাই এই সন্ত্রাসী পথ থেকে সরকার সরে আসতে পারবে না নিজেদের স্বার্থেই। সে জন্যই বাংলাদেশকে লাশের দেশে পরিণত করা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে আবারও বিচারবহির্ভূত হত্যার মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আজ শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘নিখোঁজ কয়েকজনকে ফেরত দেওয়ায় গুম থাকা ব্যক্তিদের পরিবারগুলো কি তাহলে তাদের ফিরিয়ে পেতে আশায় বুক বাঁধবে?’

সিজার ও উৎপলের ফেরা নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনার মধ্যেই শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চার মাস ধরে ‘নিখোঁজ’ বাংলাদেশের কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা আছে। গ্রেপ্তার এড়াতে দীর্ঘ চার মাস আত্মগোপনে ছিলেন। গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

মঙ্গলবার রাতে দুই মাস ১০ দিন ‘নিখোঁজ’ থাকার পর ফিরে আসেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডিডটকমের প্রতিবেদক উৎপল দাস।তারপর গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর নিজ বাসায় ফিরে আসেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোবাশ্বার হাসান সিজার। উৎপল দাস এবং সিজারের ফেরার প্রক্রিয়া প্রায় একই ধরনের। উভয়কেই কে বা কারা গাড়ি থেকে রাজপথে নামিয়ে দিয়ে যায়। পরে তারা পরিবারের কাছে ফেরেন।

এর আগে গত ১৮ নভেম্বর আড়াই মাস নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি ফিরে আসেন রাজধানীর ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়। গত ২৭ আগস্ট বিকেলে ঢাকার গুলশানের ১ নম্বর সেকশনের ইউনিয়ন ব্যাংকের সামনে থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়। অনিরুদ্ধ একসময় বেলারুশের ‘অনারারি কনসাল’ ছিলেন। কানাডার নাগরিকও তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২১ ডিসেম্বর এক টুইটে গত ১০ বছরে ৭৫০ জনকে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ১৯ বিএনপি কর্মীকে গুম করা হয়েছিল, আজও তারা ফেরেননি। গত ১০ বছরে কমপক্ষে প্রায় ৭৫০ জন গণতন্ত্রকামী কর্মীকে গুম করেছে সরকারি বাহিনী। গুমের শিকার মানুষের সন্তান, পিতা-মাতা, স্ত্রীর কান্নার রোল থামছে না। এর অবসান চাই।’ এখন পর্যন্ত নিখোঁজ সবাইকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ‘গভীর রাতে’ ১৯৬ কর্মকর্তার যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা ‘রহস্যজনক’ বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এসএসবির ফিটলিস্ট অনুযায়ী অনেক যোগ্য ও উপযুক্ত কর্মকর্তাকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এবারও শত শত যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে।’

এছাড়া গতকাল বরিশালের গৌরনদী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গাজী আবু বকর এর ওপর একদল সশস্ত্র আওয়ামী দুস্কৃতিকারি হামলা চালিয়ে ভয়ানকভাবে আহত করেছে। হামলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার ডান চোখটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি মূমুর্ষ অবস্থায় বর্তমানে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমি সরকারী বর্বর দলের কাপুরুষোচিত এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি।

গত ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা শেষে ফেরার পথে তার গাড়িবহরের সাথে থাকা বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় ও বেধড়ক লাঠিচার্জ করে অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করে। ঢাকা মহানগরীর দারুস সালাম থানা বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির এবং দক্ষিণখান থানা বিএনপি নেতা আলী আকবর রাজু গুরুতর আহত হয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাহবাগ থানা বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন নওয়াব, রফিকুল ইসলাম স্বপন, আবু সুফিয়ান, মোর্শেদ আলম, সাইফুল ইসলাম, কদমতলী থানা বিএনপি নেতা সাদ্দাম হোসেন, সালাহউদ্দিন গুরুতর আহত হয়েছেন। পুলিশ শুধু লাঠিচার্জ করেই ক্ষান্ত হয়নি অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারও করে।

গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন-ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ওয়ারী থানা বিএনপি নেতা রাহাত এবং সুত্রাপুর থানা বিএনপি নেতা সোনা মিয়া, রমনা থানা বিএনপি নেতা আবদুল মোতালেব, রুবেল, সোহেল, মহিউদ্দিন, রুবেল সারোয়ার, ইব্রাহিম, ইসমাইল হোসেন, আল আমিন, মিজানুর, আবদুর রশীদসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি।

rtnn

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin