khaleda_zia

করোনা শেষ হলেই বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান

বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেই বিএনপি চাঙ্গা হবে- এমন আশঙ্কা যারা করেছিলেন তাঁরা অচিরেই হতাশ হয়েছেন। বিএনপি চাঙ্গা হওয়া তো দূরের কথা, আরো গর্তে ঢুঁকে গেছে খালেদা জিয়ার মুক্তির পর। বেগম খালেদা জিয়া নিজেই হোম কোয়ারেন্টাইনের নামে দলের সব নেতা-কর্মীদের সাথে যোগযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। কেবল মাত্র তাঁর পরিবারের লোকজন এবং কয়েকজন চিকিৎসক ছাড়া কেউই তাঁর বাসায় যেতে পারছে না। 

এই অবস্থায় বিএনপি নেতারা জানেন না যে তাঁরা কি করবেন। বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যখন জেলে ছিলেন, তখন তাঁরা জানতেন যে তাদের একটি দায়িত্ব আছে, তাঁদের কিছু করতে হবে।

কিন্তু এখন যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত আছে, তাই তার অনুমতি ছাড়া কিছুই করতে পারছে না। তাই ঘরে বসে থাকা ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের এখন কিছু করার নেই। করোনার সঙ্কট শুরুর দিকে বিএনপি নেতারা কিছু ত্রাণ তৎপরতা চালু করেছিলেন এবং কিছু সচেতনতা মূলক লিফলেট-ও বিতরণ করেছিলেন।

সেই কার্যক্রমও এখন বিএনপি বন্ধ করে দিয়েছে এবং ৩/৪ দিনে বিএনপির কোন নেতৃবৃন্দকেই জনসম্মুখে আসতে দেখা যায়নি, কোন ভিডিও বার্তা/অডিও বার্তা কিংবা ঘরে বসে কোন বাণীও বিএনপি নেতারা শোনাননি।

বিএনপির নেতারা বলছেন যে, তাঁরা কি করবেন এই ব্যাপারে তাঁদের কোন নির্দেশনা নেই। তারেক জিয়া লণ্ডনে পলাতক রয়েছে এবং বেগম খালেদা জিয়া জেল থেকে বের হবার পর তারেক জিয়ার ভূমিকা কি হবে বা তারেকের কথা শুনলে নেতাকর্মীদের পরিণতি কি হবে তা নিয়েও তাঁরা একটি দ্বিধান্বিত অবস্থায় আছেন।

কারণ তাঁদের কাছে স্পষ্ট নয় যে, বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তারেক জিয়ার সম্পর্ক কোন পর্যায়ে আছে, কিরকম আছে। যদিও বিএনপি তৃণমূলের নেতৃত্ব তারেকের হাতে। তবে বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছে যে, বেগম খালেদা জিয়া যে ২৫ মাস জেলে ছিলেন, সেই ২৫ মাস বিএনপি নেতারা যারা আওয়ামী লীগ বা সরকারের সাথে নানা রকম আপোস রফা করেছে, অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন এবং যারা বেগম খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন জেলে রাখার ফন্দিফিকির করেছে তাঁদের একটি তালিকা বেগম জিয়া করেছেন। 

তবে কিছু বিএনপি নেতারা বলছেন বেগম খালেদা জিয়া নয়, বরং শামীম এস্কান্দার এই তালিকা করেছেন। শামীম এস্কান্দার তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তিনি বিএনপি নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, বিএনপি নেতৃবৃন্দ যেন সরকারের সাথে একটি দর কষাকষি করে, একটি আপোষ রফায় যায় সেজন্য অনেক অনুনয়-বিনয় করেছেন কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি।

বিশেষ করে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে যখন বিএনপি সরকারের সাথে দর কষাকষি শুরু করে তখন বিএনপি নেতৃবৃন্দকে শামীম এস্কান্দার এবং তাঁর বোন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি নেতৃবৃন্দ কোন রকম শর্ত  ছাড়াই নির্বাচনে গিয়েছিলেন। এই ব্যাপারে শামীম এস্কান্দার বেগম খালেদা জিয়ার কাছে অনেক তথ্য দিয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বেগম খালেদা জিয়ার কাছে শামীম এস্কান্দার এরকম তথ্য দিয়েছেন যে কারা কারা সরকারের সাথে হাত মিলয়েছিলেন বেগম জিয়াকে দীর্ঘদিন কারাবন্দি রাখার জন্য। এর পেছনে তাঁদের যুক্তি হলো, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে তাঁদের জন্য সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ফায়দা নেয়া সুবিধার হয়। 

উল্লেখ্য, বিএনপি নেতৃবৃন্দ যখন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের সাথে আপোষের মাধ্যমে মুক্তির জন্য অপারগতা জানায়, তখন শামীম এস্কান্দার নিজেই সরকারের সাথে যোগাযোগ করেন। যোগাযোগের পর্যায়ে শামীম এস্কান্দার জানতে পারেন যে, কারা সরকারের সাথে আঁতাত করেছেন এবং কারা সরকারের কাছ থেকে কি ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন।

এবং এর পূর্ণাংগ বিবরণ শামীম এস্কান্দার বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দিয়েছেন। যে কারণে বেগম খালেদা জিয়া এখন বিএনপির সব নেতাদেরকেই মোটামুটিভাবে চেনেন এবং বেগম খালেদা জিয়া যে সব নেতাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছেন তাঁর বড় কারণ এটা। 

করোনার কারণে দেশের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়, এজন্য এই মুহুর্তে বেগম খালেদা জিয়া কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের একজন সদস্য। তাঁরা বলেছেন যে, করোনা পরিস্থিতি স্বভাবিক হলেই বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির কর্তিত্ব নিবেন এবং বিএনপিতে একটি বড় ধরণের শুদ্ধি অভিযান করবেন।

বিশেষ করে যারা বিভিন্ন সময়ে সরকারের সাথে আঁতাত করে বেগম খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন, তাঁদেরকে চিহ্নিত করা হবে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এই ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া নিতে পারবেন কিনা সেই ব্যাপারেও সন্দেহ রয়েছে। কারণ বেগম খালেদা জিয়া চাইলেই বিএনপিতে সবকিছু হবে, সেই বাস্তবতা এখন নেই বলে মনে করেন বিএনপির অনেক নেতারা।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin