বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং সন্ত্রাস-দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে দেশপ্রেমিক জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের মতো এত বড় ব্যর্থ সরকার অতীতে কখনো দেখিনি।
সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া হবে বলে মিয়ানমারের সঙ্গে সরকারের যে চুক্তি হয়েছে তাতে কত দিনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়া হবে তা লেখা নেই। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ জনদলের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সংগঠনের চেয়ারম্যান ডা. এস এম শাহজাহানের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া প্রমুখ। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিনা বিচারে মানুষকে জীবন দিতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত গুম-খুন হচ্ছে, অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুম হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, মাঝে-মধ্যে মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে।
গুম হচ্ছে কি না সেটি জানি না। তিনি বলেন, ইচ্ছামতো সংবিধান পরিবর্তন করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে বর্তমান সরকারের মতো সংবিধান-প্রেমিক দেশে আর নেই। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, আপনারা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনেও ধান খেয়ে যাবেন সেটি হবে না।
ভাষণের স্বীকৃতি উদযাপনে এত ঢাকঢোল কেন: ফখরুল
একাত্তরের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেই ভাষণকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে এই ভাষণ ইউনোস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে যেভাবে উদযাপন করা হয়েছে এর সমালোচনা করেছেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘৭ মার্চের যে ভাষণ নিঃসন্দেহে তা ঐতিহাসিক। ইউনেস্কোর একটা তালিকায় এই ভাষণ যুক্ত হয়েছে। খুব ভালো কথা। অস্বীকার কে করেছে? আপনারা এতো বছর পরে হঠাৎ ঢাকঢোল পিটিয়ে নামছেন, তখন কিন্তু দেশের মানুষ কষ্টে আছে। আবারো চালের দাম ৬০ টাকা হয়েছে। বলেছিলেন বিনামূল্যে সার দেবেন, এখন সেই সার তিন গুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।’
শনিবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। গুলশানে হোটেল লেকসোরে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইউনিভার্সিটি টিচার্স (এগ্রিকালচারাল সায়েন্স) এর উদ্যোগে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিবস উপলক্ষে ‘তারেক রহমানের রাজনীতি এবং কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক যে ভাষণ দিয়েছিলেন ৪৬ বছর পর সেই ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো। শনিবার সারাদেশে সরকারিভাবে উদযাপন করা হয়েছে সেই স্বীকৃতি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে এই স্বীকৃতি উদযাপন করেছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের প্রতি ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ‘বড় গলায় বড় বড় অনুষ্ঠান করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকদের সরকারি চিঠি পাঠায় হাজির হতে হবে। না হলে সরকারি অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে, চাকরি চলে যাবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিঠি দেয় হাজির না হলে ৫/৬ দিনের বেতন কাটা যাবে। লেক তৈরি করা হয়েছে। সেই লেকের পাশে স্টেজ নির্মাণ করে বুলেট প্রুফ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতায় বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।’
দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে তা শুধু ক্ষমতাসীনদের পকেটে যাচ্ছে এমন দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘ডেভেলপমেন্ট কার হচ্ছে? ডেভেলমেন্ট আপনাদের হচ্ছে। উন্নয়ন হচ্ছে আপনাদের উন্নয়ন, গুটি কতক মানুষের উন্নয়ন। যারা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে একদিকে বিদ্যুৎখাত থেকে লুটছে, অন্যদিকে মেগা প্রকল্প, ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেস ওয়ে ইত্যাদি করে লুটপাট করেছে।’
ফখরুল বলেন, ‘এই উন্নয়নের কথা বলে তারা (ক্ষমতাসীন) তাদের পকেটের উন্নয়ন করছে। তারা নিজেদের বিত্ত তৈরি করছে, সেই বিত্ত তৈরি ছাড়া আর কিছু হচ্ছে না। কিছুদিন আগেও পত্র-পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে বাংলাদেশে কিছুসংখ্যক মানুষ অনেক উন্নত হচ্ছে, তাদের বিত্ত বাড়ছে আর কিছুসংখ্যক মানুষ দারিদ্র সীমার আরও নিচে চলে যাচ্ছে।’
জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিক সংবাদের দিকে ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ‘প্রশাসন শেষ হয়ে গেছে। এখানে তাদের পছন্দ মতো লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে এবং দলীয়করণ করা হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। বিচার বিভাগ শেষ করে ফেলেছে। প্রধান বিচারপতিকে মতের মিল না হওয়ায় তাকে প্রথমে এক মাসের ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং পরে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। স্থায়ীভাবে চলে যেতে হয়েছে এবং তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।’
‘সংসদ নেই। যে সংসদ এটাকে সংসদ বলা যায় না। ১৫৪ জন অনির্বাচিত এবং শতকরা ৫ ভাগ ভোটে সংসদ দাঁড়িয়ে আছে। এই সংসদে একটা বিরোধী দল আছে তারা সরকারে আছে। তাহলে রাষ্ট্রের পিলারগুলো কোথায়?”- বলেন বিএনপি মহাসচিব।
টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাসটেইনেবল ইকোনমিক ডেভেলমেন্ট হতে হলে সাসটেইনেবল ডেমোক্রেসি দরকার। সেজন্য সবার আগে দরকার একটা নির্বাচন হতে হবে। সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। সেই নির্বাচনে অবশ্যই জনগণ অংশ নেবে এবং তারা রায় দিয়ে জনগণের সরকার তৈরি করবে।’
onlinenewsportal