ঐক্যচেষ্টা কেন জনবিচ্ছিন্নদের সঙ্গে, বিএনপিকে শরিক দলের প্রশ্ন

যুক্তফ্রন্টসহ বিএনপি যাদের সঙ্গে ঐক্য করতে মরিয়া, তাদেরকে জনবিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে বিএনপিকে সতর্ক করেছে ২০ দলের একটি শরিক দল। বলেছে, এই ঐক্যে কোনো লাভ হবে না।

পাশাপাশি জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে শরিকদের মূল্যায়ন না করলে বিএনপিকে মাশুল দিতে হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

শনিবার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপিতে যোগদান অনুষ্ঠানে দলটির চেয়ারম্যান অলি আহমেদসহ শীর্ষ নেতারা বিএনপিকে এই হুঁশিয়ারি দেন।

যুক্তফ্রন্টের নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে অলি আহমেদ বলেন,‘জনসমর্থনহীন,জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে আগালে কোনো কাজ হবে না। বিএনপিকে আরো কৌশলী হবে। যাদের সাপোর্টার নাই তাদের নিয়ে ঐক্য করে কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করেন।’

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টায় বিএনপি। ২০টি দল নিয়ে গড়া মোর্চার পাশাপাশি তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা দিয়ে কাজ করা যুক্তফ্রন্ট আর গণফোরাম নেতা কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্যের চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি যাকে দলটি ‘জাতীয় ঐক্য’ বলছে।

যেসব দলের সঙ্গে বিএনপি আলোচনা চালাচ্ছে তাদের নেতারা গণমাধ্যমে নানা সময় জায়গা করে দিলেও জনগণের মনে তাদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন আছে।

যুক্তফ্রন্টের তিন শরিকের মধ্যে বিকল্প ধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এক সময় বিএনপির ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জিতে তাকে রাষ্ট্রপতিও করে বিএনপি। তবে অসম্মানজনকভাবে তার বিদায় হয়। আর ওই সরকারের আমলেই বিএনপি ভেঙে তিনি গঠন করেন বিকল্প ধারা।

আরেক শরিক জেএসডির আ স ম আবদুর রব ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের আলোচিত নেতা ছিলেন। পরে ছাত্রলীগ ভেঙে গঠন করা জাসদে যোগ দেন তিনি। পাকিস্তান আমলে আন্দোলনে ভূমিকা থাকলেও ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আমলে ‘গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা’ হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলেও পরে আর জিততে পারেননি।

আরেক শরিক নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ‘বহু ঘাটের জল খেয়ে’ শেষে আওয়ামী লীগে যোগ দেন ৯০ এর দশকে। দুইবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন বগুড়া-২ আসনে। কিন্তু বিএনপির প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো ভোট পাননি। এর আগে অন্য একটি দলের হয়ে ভোট করে জামানত হারান।

যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেয়া কামাল হোসেনও ভোটের ময়দানে বরাবর পরাজিত একজন নেতা। ৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও ৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আর ৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে হেরেছেন বড় ব্যবধানে। আর এরপর আওয়ামী লীগ ছেড়ে গঠন করেন গণফোরাম। আর এই দলের হয়ে ৯৬ সালের নির্বাচনে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর আসন থেকে নগণ্য সংখ্যক ভোট পেয়ে জামানত হারান।

তবে বিএনপি এদের সঙ্গে জোট করতে কতটা উদগ্রীব, সেটা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমহীর স্পষ্ট করেছেন আজ। বলেছেন, ‘ভালোর’ জন্য ঐক্য গড়তে ছাড় দেবেন তারা।

বিএনপি কী ছাড় দেয় সেটা ভবিষ্যতের বিষয়। তবে যুক্তফ্রন্ট তাদের কাছে তিনশ আসনের মধ্যে ১৫০টি চেয়ে বসে আছে। আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে দুই বছর দেশ তারা চালাবেন, এমন শর্ত দেয়ার অপেক্ষায় তারা।

আর কামাল হোসেন বিএনপিকে দেড় যুগের মিত্র জামায়াতকে পরিত্যাগের শর্ত দিয়েছেন।

এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘প্রায় ছয় বছর ধরে আমরা সব ধরনের লোভ লালসাকে উপেক্ষা করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলে আছি। কিন্তু এখানে দেখছি হঠাৎ করে কেউ নিজেকে প্রধানমন্ত্রী, কেউ রাষ্ট্রপতি দাবি করে বসে আছেন। এমন নাটক চললেও বিএনপির পক্ষ থেকে জোরাল কোনো বক্তব্য পাচ্ছি না।’

‘কেউ একশ আসন, কেউ আবার দেড়শ আসন দাবি করছেন। কিন্তু এলডিপির মত দলের এখানে কোনো কথা থাকবে না, এটা হতে পারে না।’

বিএনপির যাদের সঙ্গে ঐক্য করতে যাচ্ছে তাদের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলেন এলডিপির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল গনি। বলেন, ‘বিএনপিকে বড় দল হিসেবে সমীহ করে যাব; আর তারা যখন খুশি তখন লাথি মেরে বের করে দেবে তা মেনে নেয়া হবে না।’

এলডিপির মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে এখানে অবশ্যই জোটের সব শরিকদের মধ্যে একটা ঐক্যমত থাকতে হবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।’

সরকারের সঙ্গে এলডিপির গোপন আঁতাতের গুঞ্জন নিয়েও কথা বলেন রেদোয়ান। বলেন, ‘পত্র পত্রিকাতে অনেক কিছু লেখা হচ্ছে আমাদের নিয়ে। আমরা জোটে আছি। বর্তমানে ৮০ভাগ লোক সরকারের বিপক্ষে। আর যেখানে আমাদের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময় হামলা, মামলার শিকার হয়েছে সেখানে সরকারের সঙ্গে আমাদের যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।’

‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আমাদের নানা ধরনের প্রলোভন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে আমরা বৃহত্তর স্বার্থে জোটে আছি। জোটে আমাদের অবস্থান আরো কীভাবে সুদৃঢ় করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। সরকার গঠন করলে আমাদের দলের প্রধানের অবস্থান কী হবে সেটা বিএনপিকে পরিষ্কার করতে হবে।’

‘কিন্তু কেউ একজন উড়ে এসে জুড়ে বসবেন তা হতে দেয়া হবে না। জোটে সেই সুযোগ নেই। আমরা তাতে একাত্মতা প্রকাশ করব না।’

ঢাকাটাইমস

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin