এ বছর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইস্যু নির্বাচন

রোহিঙ্গা সংকট, গুম-খুন অথবা দ্রব্যমূল্য, এই বিষয়গুলিই বেশ কিছুদিন ধরে ছিল বাংলাদেশের মূল আলোচ্য বিষয়। কিন্তু এতদিন যে ইস্যুই বাংলাদেশের গতি প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করুক না কেন- ২০১৮ সালে সবকিছুকেই সম্ভবত ছাপিয়ে যাবে নির্বাচন।

খেটে খাওয়া মানুষ, ব্যবসায়ী বা রাজনীতির বিশ্লেষক- সবাই যেন নির্বাচনকে ঘিরে একটা গরম রাজনীতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জাতীয় রাজনীতি ও নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ মানুষজনের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক প্রত্যাশা। খবর বিবিসির।

ঢাকার কাওরান বাজারের একজন মাছের আড়তদার বলেন, বিএনপি আর আওয়ামী লীগ সমঝোতা করুক। নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হয়- সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। ঢাকার রাস্তায় কথা হচ্ছিলো এমন অনেকের সাথে।

গত নির্বাচন বর্জনকারী প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসা নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানালেন একজন কেমিস্ট মোঃ সাইদুল ইসলাম।

তিনি বলছেন, বিএনপিকে অবশ্যই নির্বাচনে আসতে হবে। বিরোধী দল বলতে আমরা মূলত বিএনপিকেই বুঝি। দুই দল যদি যদি একত্রে বসে সেটা দেশের জন্যেই ভালো। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক অগ্রসর হচ্ছে। এখন যদি আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয় তাহলে আমরাই ভুক্তভোগী হবো

কিন্তু নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে হলে, তার পরিবেশ তৈরিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেরই দায়িত্ব বেশি- বলছিলেন সাইদুল ইসলাম।

তিনি বলছেন, এটা আওয়ামী লীগকেই করতে হবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে রয়েছে নানা রকম চ্যালেঞ্জ। সেটি সাধারণ মানুষের জীবনে ঠিক কি বয়ে আনবে সেটা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে মানুষের মনে। নির্বাচন আয়োজনের জন্য সময় এখন এক বছরেরও কম। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই এখনো বিপরীত অবস্থানে প্রধান এ দুই রাজনৈতিক দল। দু’দলকে এখনো পর্যন্ত আলোচনার জন্য এক টেবিলে আনা যায়নি।

নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলছেন, আমাদের দুটি দলের মতৈক্য হয়েছে তা এখনো বলা যাবে না। দু দলের মধ্যে হিংসা-প্রতিহিংসা কিন্তু রয়েই গেছে। নির্বাচন কিভাবে হবে – সে নিয়ে যে বিতর্ক তাদের মধ্যে, সেগুলিও কিন্তু রয়েই গেছে। আরো দশ-এগারো মাস আছে। এর মধ্যে কিছু না হলে বলতে হবে আমরা তো পুরনো দিনেই রয়ে গেলাম।

তা থেকে সামনের দিকে এগুতে দুটি দলেরই এখন অনেক দায়িত্ব – বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ। তিনি বলছেন, বিএনপি আগেরবার নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করতে চেয়েছিল। তাতে তাদেরও লাভ হয়নি, দেশেরও লাভ হয়নি।

অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, তারা যেন সেই প্রতিহত করার পথে না যায় – সেটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এবং আমার মনে হয় বিএনপিও সেই ভুল বুঝতে পেরেছে।

তিনি বলেন, কিন্তু আরেকটা নতুন বিপদ তৈরি হয়েছে সেটা হল আওয়ামী লীগের মধ্যেই পরস্পর বিরোধী ক্যান্ডিডেট তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে সহিংসতার উদাহরণ রয়েছে। সেই আশঙ্কাটা যেন না হয়। জনগণ চাইবে আওয়ামী লীগ যাতে নিজেদের মধ্যে মারামারি না করে এবং বিএনপি আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বটাও যাতে বন্ধ হয়।

সব মিলিয়ে সারা বছর জুড়ে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতির মাঠ গরম হয়ে উঠবে সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই।

আর গত কিছুদিন ধরে যা কিছু বাংলাদেশের গতি নির্ধারণ করেছে- যেমন রোহিঙ্গা সংকট, গুম-খুন অথবা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো বিষয়- সেগুলো দিয়ে উল্টো নির্বাচনী রাজনীতি হবে তেমন ধারণাই পাওয়া গেলো বিশ্লেষকদের কাছ থেকে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin