এমপি ১০ কোটি, মন্ত্রী ১০০ কোটি

এখনো বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা তার ঠিক নেই, কিন্ত বিএনপিতে মনোনয়ন বাণিজ্য শুরু হয়ে গেছে। অন্তত ২৫০ টি আসনে মনোনয়ন পাবার জন্য নূন্যতম ধার্যমূল্য ১০ কোটি টাকা। এই টাকা দিতে হবে বিএনপির হাইকমান্ডকে।

এছাড়া মনোনয়ন বোর্ডের অন্য সদস্যদের কিছু দিতে হবে কিনা জানা যায়নি। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভবিষ্যতে মন্ত্রী হতে চাইলে ১০০ কোটি টাকার তহবিল থাকতে হবে। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক ব্যাক্তির সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

কুমিল্লার একটি আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন ব্যবসায়ী। তাঁর সামাজিক পরিচিতিও কম না। এলাকাতেও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত তিনি। আগামী নির্বাচনে এমপি হওয়ার আগ্রহ হয়েছে তাঁর। জীবনভরই আওয়ামী বিরোধিতা করেছেন। সেজন্য যোগাযোগ করলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে।

ওই নেতা কুমিল্লার রাজনীতির অন্যতম নিতিনির্ধারক কিন্তু ওই নেতা তাঁকে কোনো আশ্বাস দিতে পারলেন না। তাঁকে পরামর্শ দিলেন ‘ম্যাডাম’ এর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। ম্যাডাম তাঁকে আচ্ছা দেখবো বলেই ছেড়ে দিলেন। ব্যবসায়ীও নাছোড়াবন্দা। অনেক কসরৎ করে বেগম জিয়ার একান্ত ব্যক্তিগত কর্মচারীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুললেন।

ওই কর্মচারী তাঁকে লন্ডনে যাবার পরামর্শ দিলেন এবং তারেক জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পথও বাতলে দিলেন। এবার ব্যবসায়ী গেলেন লন্ডন এবং তারেক জিয়ারও সাক্ষাৎ পেলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ সময় ছিল সাত মিনিট। সাক্ষাতের জন্য পাঁচ হাজার পাউন্ড খরচ করেন ওই ব্যবসায়ী। তারেক তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন ১০ কোটি টাকা তাঁর (তারেক জিয়ার) ব্যক্তিগত তহবিলে জমা দিলেই কেবল মনোনয়ন পাওয়া যাবে।

ভদ্রলোক আশা নিয়েই ফিরে আসেন। টাকা দিতেও তিনি রাজি। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছেন না, বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে কিনা। বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে তিনি এ নিয়ে কথা বলছেন।

শুধু কুমিল্লার এই ব্যবসায়ী না, সারাদেশেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যারাই বেগম জিয়া পর্যন্ত গেছেন, তারা সেখানে মনোনয়নের কোনো নিশ্চয়তা পাননি। অথচ যারা নির্দিষ্ট চ্যানেল ধরে তারেক জিয়া পর্যন্ত পৌছুতে পেরেছেন, তাঁদের ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত নিজস্ব তহবিলে জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, অনেকে নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেও পড়েছে। আবার একই এলাকায় একাধিক ব্যক্তিকেও এমন সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, ‘এবার শেষ পর্যন্ত বিএনপি যদি নির্বাচন করে, তাহলে মনোনয়নের একক ক্ষমতা থাকবে তারেক জিয়ার হাতে।

এমনকি বেগম জিয়ারও মনোনয়ন নিয়ে কথা বলার কোনো এখতিয়ার থাকবে না।’ ওই নেতার ভাষ্যমতে, লন্ডন থেকেই তারেক সব কিছু মনিটরিং করছেন।’ এ কারণেই বেগম জিয়া মনোনয়ন নিয়ে কোনো কথা বলছেন না।’ এ নিয়ে বিএনপিতে অসন্তোষও দিন দিন প্রকট হচ্ছে।

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন’ টাকা দিয়েই যদি মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে মনোনয়ন বোর্ডের দরকার কি, দল করারও দরকার কি? কিছু ভাড়াটে লোক দিয়ে নির্বাচন করলেই তো হয়।’ কেউ কেউ অভিযোগ করেছে, যঁরা ইতিমধ্যে টাকা দিয়েছে, বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায় তখন তারা কী করবে?’

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, ৫০ টি আসন বিএনপির নেতা ও পরীক্ষিতি ব্যক্তিদের জন্য রাখা হচ্ছে, শরীকদের জন্য ২০ টি আসন ছাড়া বাকি সব আসনে বিএনপিতে মনোনয়ন বাণিজ্য এখন জমে উঠেছে।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin