খালেদা জিয়ার মুক্তির মাধ্যমে যে চমক সৃষ্টি হয়েছে, সেই চমকই শেষ নয় বলে মনে করছেন একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এরপরেও নতুন চমক আসতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কোনো কথা নেই।
আর রাজনীতিতে যে শেষ কথা বলে কিছু নেই, সেটি প্রমাণিত হলো বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ঘটনার মধ্য দিয়ে। কারণ খালেদা জিয়ার মুক্তির ২৪ ঘণ্টা আগেও বিএনপি তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগেরও কোনো নেতা জানতেন না যে খালেদার এমন নাটকীয়ভাবে মুক্তি হবে।
এদিকে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, খালেদার এই মুক্তির পর তার পরিবার বিশেষ করে তারেক জিয়ার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানসহ অনেকেই আশাবাদী যে এখন হয়ত তারেকের দেশে ফেরার পথও সমঝোতার মাধ্যমে উন্মোচিত হতে পারে।
উল্লেখ্য, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া ২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। লন্ডনে বসে তিনি নানারকম অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তাকে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এছাড়াও বিদেশে অর্থপাচারের মামলাতেও তিনি দণ্ডিত হয়েছেন।
এ অবস্থায় তারেক জিয়াকে বার বার দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলা হলেও তারেক লন্ডনে রাজনৈতিক আম্রয় নিয়েছেন নাকি নাগরিকত্ব পেয়েছেন তা নিয়ে ধূম্রজাল রয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ একাধিকবার যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে দণ্ডিত ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত ব্রিটেন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।
কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে তারেক জিয়ার ব্যাপারেও সমঝোতা হবে কিনা, সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এর প্রধান এবং প্রথম কারণ হলো, গত চারমাসে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বা আওয়ামী লীগের কোনো নেতৃবৃন্দ তারেক জিয়ার বিষয়ে কোনো কটূক্তি বা কোনো সমালোচনামূলক বক্তব্য দেননি। বরং রাজনীতিতে তারেক জিয়া একটি উপেক্ষিত নাম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অথচ সকলে জানেই যে বিএনপির মূল চালিকাশক্তিই হলো তারেক জিয়া। তাহলে তারেক জিয়া সম্পর্কে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই নীরবতা কেন?
দ্বিতীয় যে বিষয়টি লক্ষণীয় যে, বিএনপির কোনো নেতৃবৃন্দও গত তিন-চারমাসে তারেক জিয়াকে নিয়ে কোনো আলোচনা সমালোচনা করেননি। তাকে সামনে নিয়ে আসার কোনো প্রচেষ্টাও বিএনপির পক্ষ থেকে নেই।
তৃতীয়ত, এই সময়ে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও এক ধরনের নীরবতা পালন করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কোনো ধরনের কথাবার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখা যায়নি। তাহলে প্রশ্ন হলো, এই যে তিনটি ঘটনা, এই তিন ঘটনার কি পারস্পরিক কোনো যোগসূত্র রয়েছে? একটির সঙ্গে কি আরেকটি সম্পর্কযুক্ত?
এই প্রশ্নের কারণ হলো, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে যেমন তার পরিবারের লোকজন বেগম জিয়ার পক্ষে ক্ষমা চেয়েছেন এবং কিছু শর্ত দিয়ে বেগম জিয়াকে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে, সেই সমঝোতায় কি এমন কোনো শর্ত রয়েছে যে তারেক জিয়া দেশে আসবেন এবং আইনী লড়াই করবেন?
কোনো কোনো নেতা মনে করছেন যে এটা অসম্ভব। তারেক জিয়ার দেশে ফেরার তেমন কোনো ইচ্ছে বা আগ্রহ নেই। বরং লন্ডনেই তিনি আরাম আয়েশের জীবনযাপন করে বেশ ভালো আছেন। কিন্তু তারেক জিয়ার অনেক ঘনিষ্ঠরাই বলছেন যে তারেক জিয়া অবশ্যই দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরার একটি পটভূমি তিনি তৈরি করছেন। সেই পটভূমিটি ঠিক কি, কীভাবে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে, সে ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
তবে জানা যায় যে, ডা. জোবাইদা রহমানের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মহলের যোগাযোগ রয়েছে এবং এই কয়দিনে সেই যোগাযোগ আরও বেড়েছে। তবে এই যোগাযোগের সঠিক কারণ কি, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তার শ্বাশুডি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি হয়ত যোগাযোগ করছেন। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নয়, বরং তারেক জিয়ার দেশে ফেরার ব্যাপারে একটি সমঝোতার বীজ অঙ্কুরিত হচ্ছে।
কারণ বাংলাদেশের রাজনীতির একটি বাতাবরণের মধ্যে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল পরস্পর প্রতিপক্ষ হয়ে কাজ করলে কেবলমাত্র একটি অগণতান্ত্রিক তৃতীয় শক্তির উত্থান রোধ করা যায়। সেই চিন্তার রাজনৈতিক প্রয়োগ হিসেবেই কি খালেদা জিয়ার মুক্তি? সেই রাজনৈতিক কৌশলের বাস্তবায়নের জন্যই কি তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি আপোষ সমঝোতা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে? এই প্রশ্নটিই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে উঠেছে বেশ জোরেসোরেই।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার