আওয়ামী লীগ সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এরা যে এত ছোট মনের আজকে তারা দ্বিতীয় দিনের মতো প্রমাণ করে দিয়েছে। এত ছোট মন নিয়ে রাজনীতি করা যায় না। এরা মানুষকে ভয় পায় । এজন্য ৭ নভেম্বর আমাদের জনসভা করতে দেয়নি । আজকে অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু জনগণ যেন আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। বাইরের জেলার মানুষ যেন না আসতে পারে। রাজধানীর হোটেলগুলোতে অভিযান চালিয়েছে। অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, এমনকি আমিও যেন সমাবেশে আসতে না পারি সেই ব্যবস্থাও করেছে। আমি বাসা থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তায় খালি বাস রেখে দিয়েছে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশে খালেদা জিয়া এসক কথা বলেন। রোববার বেলা সোয়া ৩টার দিকে তিনি সভামঞ্চে ওঠেন। এর আগে দুপুর পৌনে দু’টার দিকে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়।
এদিকে সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দলে দলে নেতাকর্মী এসেছেন। দীর্ঘদিন পর রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি পেয়ে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন। আশপাশের পুরো এলাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। ফলে শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন পর্যন্ত যানবাহনের ধীরগতি দেখা গেছে।
‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এ সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে দুপুর ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দীমুখী নেতাকর্মীদের ঢল শুরু হয়।
সমাবেশ মঞ্চের আশপাশের ল্যাম্পপোস্ট, বিভিন্ন গাছে, নেতাকর্মীদের হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন।
‘ঢাকাতে কি শুধু বিএনপির লোক থাকে?’ – বিএনপি আর বিএনপি
সালাউদ্দিন রনি। রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অফিস মগবাজার। থাকেন কমলাপুরে। প্রতিদিন অফিসে আসেন বলাকা বা আয়াত পরিবহনে। এ জন্য তাকে ৫ টাকা ভাড়া দিতে হয়।প্রতিদিনের মতো রোববার বাসা থেকে বের হয়ে রনি কমলাপুরে বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। ২০ মিনিটেও কোনও গাড়ির দেখা নেই। অনেকেই রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশায় গন্তব্যে যাচ্ছেন। কিছুই বুঝতে পারছিলেন না রনি। পাশ থেকে একজন বললেন, আজ বিএনপি সমাবেশ। ‘তার মানে রাজধানীতে সরকারি হরতাল?’ প্রশ্ন রনির। রনি দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকার কারণে এ অভিজ্ঞতাটুকু তার হয়েছে। এবার নিরূপায় হয়ে পায়ে হেটেই অফিসের পথে রওয়ানা হলেন রনি।
মতিঝিল আবাসিক এলাকায় সাবলেটে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন ঝুমুর। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তিনি। রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডিতে তার ক্যাম্পাসে ক্লাসে যাওয়ার জন্য বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর যখন জানলেন সোহরাওয়ার্দীতে বিএনপির সমাবেশ থাকায় রাজধানীতে অঘোষিত হরতাল চলছে, তখন বিরক্ত হয়ে রিকশা ভাড়া করে ক্লাসে যাওয়ার জন্য রওনা হলেন।তবে দিনাজপুর থেকে ট্রেনে এসে কমলাপুর নেমে মিরপুরে যাওয়ার জন্য গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন সালেহা বেগম (৪৫)। কিন্তু তিনি যখন জানলেন বিএনপির সমাবেশ থাকায় রাজধানীতে আজ গণপরিবহন খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। তখন ক্ষোভ প্রকাশ করে সবার কাছে প্রশ্ন রাখলেন- `ঢাকায় কি শুধু বিএনপির লোকজনই থাকে? সরকার গাড়ি বন্ধ করে দিলো, আমরা কি বিএনপি করি? আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে কেন?’
শুধু রনি, ঝুমুর আর সালেহাই ভোগান্তির শিকার হননি। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে রোববার রাজধানীতে লাখও মানুষ গণপরিবহনের অভাবে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।রাজধানীর মতিঝিল, কমলাপুর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, বংলামটর, শাহবাগ ও ফার্মগেট এলাকা ঘুরে এমন তথ্য মিলেছে।
সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় গণপরিবহন একেবারেই কম। ২০-৩০ মিনিট পর দু’একটি গণপরিবহন চোখে পড়লেও তাতে যাত্রীদের উঠা অসম্ভব ছিল। কারণ প্রত্যেক স্টেশনে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে যাত্রীবোঝাই একটি বাস আসলেও তাতে নতুন যাত্রীদের ওঠা সম্ভব হয়নি। এমন ভোগান্তির জন্য অনেকেই চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
শীর্ষনিউজ২৪