‘আজকে সরকার এই দেশে বিভাজন সৃষ্টি করছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও বিপক্ষের শক্তি বলে। এটা দলটির ঔপনিবেশিক চিন্তাধারা ফসল।’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির প্রবীণ নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের ২১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ ও শহীদ জিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মঈন খান বলেন, আজকে দুঃখের বিষয় একটি স্বাধীন দেশের সরকার তারা, তাদের কার্যক্রম দিয়ে প্রমাণ করেছে তারা ওই ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতিনিধি। তারা (সরকার) তাদের ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার জন্য সেই ডিভাইড এন্ড রুল অনুসরণ করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, তারা কেন এটা করছে? কারণ হচ্ছে,‘বিশ্বে যখন ঔপনিবেশিকতা বিস্তার করেছিল কয়েক শতাব্দী ধরে ঔপনিবেশিক শক্তিরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে মানুষদের উপর খবরদারি করতো, তখন তারা একটি অস্ত্র ব্যবহার করতো, সে অস্ত্রের নাম ডিভাইড এন্ড রুল। অর্থাৎ এই বিভাজন। তারা সেখানকার জনগণকে দুটি – তিনটি ভাগে ভাগ করে দুর্বল করে দিত, যাতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঔপনিবেশিক শক্তিকে প্রতিহত করে স্বাধীনতা অর্জন না করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, যে দলটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জন্মই হয়নি সে দলটি কিভাবে স্বাধীনতার বিরোধী হয়? যে দলের প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান, সে দলকে তারা (আওয়ামী লীগ) কিভাবে বলে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি? সেদিন বিএনপি নামে কেউ তো ছিল না।
ড. আব্দুল মঈন খান আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ঘটনার সেই সাইকোলজিতে কেনো তারা বিএনপিকে শত্রু হিসেবে ভাবে? এর কারণ হল আওয়ামী লীগের একটি সমস্যা হয়েছে, সে সমস্যাটির নাম হীনমন্যতাবোধ।
মঈন খান বলেন, যারা প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্ত যারা পলায়নপর, ভীত, রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সীমারেখা পার হয়ে, লাফ দিয়ে অন্য একটি দেশে গিয়ে পড়েছিল কাপুরুষের মত তারা কি মুক্তিযোদ্ধা ছিল?
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগের) এই হীনমন্যতাবোধের কারণ হল, রাতের গভীরে যখন চিন্তা করে যে, তারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বীরের মতো সামনে না গিয়ে কাপুরুষের মত পালিয়ে গিয়েছিল। এটাই হচ্ছে তাদের হীনমন্যতাবোধ। সে কারণেই তারা বিএনপিকে সহ্য করতে পারে না।’
সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঈশপের এক গল্পের উদাহরণ দিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে তিন বাটপাড়ের নির্বাচন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন হলো এক বাটপাড়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হলো আরেক বাটপার, আর প্রধানমন্ত্রীর আওয়ামী লীগ হলো তিন নম্বর বাটপার। তাই এদের কাছে ভালো কোনো নির্বাচন আশা করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।
সভায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘আমাদেরকে হয়তো আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। যেই মুক্তিযুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক দেবেন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সেই আন্দোলনে আমরা সবাই যেন শরিক হয়ে খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে পারি।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটর সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের প্রচার সম্পাদক লায়ন সাইফুল ইসলাম সেকলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবদীন প্রমুখ।