‘আল্লার কসম আমি দালাল না’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির রোববারের বৈঠক পুরোটাই ছিলো সন্দেহ আর আবিশ্বাসে ঠাসা।বৈঠকে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রায় অর্ধেক সময় দলের ভাঙ্গনে বিশ্বাঘাতকতার পরিণাম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বললেন। বৈঠক শেষে, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একজন আরেক জনের দিকে অবিশ্বাস আর সন্দেহের দিকে তাকাচ্ছিলেন।

কিন্তু ধৈর্যের বাধ কার কতক্ষণ থাকে? স্থায়ী কমিটির সদস্য ডঃ খন্দকার মোশারফ হোসেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দিকে প্রথমে ইশারা করলেন। এরপর তার হাত ধরে খুব জোরে সেক করলেন।

তখনও মির্জা ফখ্রুল বুঝতে পারেননি ডঃ মোশাররফ কি বলছেন। এরপর ডঃ মোশাররফ মির্জা ফখ্রুলের কানের কাছে গিয়ে বললেন, ‘তোমার বিএনপির চেয়ারপারসন কে?’ এতোক্ষণে বুঝতে পারলেন মির্জা ফখরুল। হাত সরিয়ে নিয়ে বললেন, ‘আল্লার কসম আমি দালাল না,আমি বেঈমানী করবো না’।

বাংলা ইনসাইডার

সিলেটে সার্কিট হাউসে খালেদা জিয়া, বাহিরে অপেক্ষমান লক্ষাধিক নেতাকর্মী

হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সিলেটে পৌছেঁছেন। বিকেল ৪টার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর সিলেট শহরে পৌঁছায়। এরপর চন্ডিপুল দক্ষিণ সুরমা এলাকা থেকে শতাধিক মোটর সাইকেলের একটি বহর এসে খালেদা জিয়ার গাড়িকে নিয়ে যায় সিলেট সার্কিট হাউসে।

সিলেটে সার্কিট হাউসে খালেদা জিয়া পৌছানোর পর মুহূর্তের মধ্যে বাহিরের দৃশ্য বদলে যায়। সিলেটে সার্কিট হাউসকে কেন্দ্র করে বিএনপির লক্ষাধিক নেতাকর্মী অবস্থান নিয়েছে। বিশাল বিশাল মিছিল সার্কিট হাউস অভিমুখে আসছে। অপেক্ষমান রয়েছে লক্ষাধিক নেতাকর্মী।

গাড়িবহরে থাকা বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে সার্কিট হাউসে নেয়া হয়েছে। সেখান বিশ্রাম শেষে তিনি মাজার জিয়ারত করতে যাবেন। বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করার কথা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের। পরে হযরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে তিনি সিলেট সার্কিট হাউজে ফিরে যাবেন।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সিলেট সফরকে কেন্দ্র করে সিলেটের প্রবেশ মুখেই বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।

সোমবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে শাহেস্তাগঞ্জে পৌঁছালে রাস্তার দুপাশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। এসময় হাজার হাজার নেতাকর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে পড়ে চায়ের নগরী। সেখানে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বিএনপি, যুবদল, সেচ্ছাসেবকদল, ছাত্রদলসহ দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের অভিবাদন জানান।

এর আগে সোমবার সকাল ৯টায় ১৬ মিনিটে গুলশানের বাসভবন (ফিরোজা) থেকে রওনা হন খালেদা জিয়া। সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপি চেয়ারপারসন ঢাকা ত্যাগ করেন। গুলশান-১ হয়ে তেজগাঁও, কাকরাইল, নয়াপল্টন, মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ী হয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর।

সিলেট যাত্রাকালে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে ধাওয়া করেন। আবার কয়েকটি স্থানে লাঠিচার্জ করতেও দেখা গেছে। এছাড়া খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনসহ ২২ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।অবশ্য ২ ঘন্টা পর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়াকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সিলেটে যাত্রা পথে বিএনপি নেতাকর্মীরা যেখানেই জড়ো হয়েছেন সেখানেই পুলিশ ধাওয়া দিচ্ছে, ধরপাকড় করছে বলে অভিযোগ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এদিকে, খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দুই পাশে জড়ো হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ চড়াও হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত যাত্রা পথে অন্তত শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এরপর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা, নরসিংদীর শিবপুর এবং ভৈরবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ।

এ সময় আটককৃতদের মধ্যে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নরসিংদী জেলা বিএনপির সহসভাপতি সুলতান উদ্দিন মোল্লা, শহর বিএনপির সভাপতি গোলাম কবির কামাল, আড়াইহাজার উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জুয়েল, উপজেলা ছাত্রদল নেতা রাজীব আহমেদ প্রমুখ রয়েছেন।

আমাদের নরসিংদী প্রতিনিধি বলেন, খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে আজ সকাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মহাসড়কের ভেলানগর এলাকায় অবস্থান নেয়। অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতিহত করতে মাঠে ছিল ছাত্রলীগ-যুবলীগ। এ সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নৌকার পক্ষে মহাসড়কে মিছিল করে। এতে মুখোমুখি অবস্থান নেয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ দুই দলের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। আইনজীবীরা খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে মহাসড়কের পাশে দাঁড়াতে চাইলে পুলিশ তাদের ব্যানার ও ফেস্টুন কেড়ে নেয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নরসিংদী অতিক্রম করে। তখন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান।

খালেদা জিয়ার গাড়িবহর যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা জুতা হাতে অবস্থান নেন। সরকারের পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে তারা ঢিল ছুড়ে মারেন বলেও অভিযোগ করেছেন গাড়ি বহরের সাথে থাকা বিএনপির একাধিক নেতা।

অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সূত্র বলছে, এ সময় সেখান থেকে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। আর ঢিল ছুড়ে মারার বিষয়ে কিছু জানে না পুলিশ।

এ দিকে বিএনপি অভিযোগ করেছে, শিবপুরের কামারটেক সবুজ পাহাড় কলেজ এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের পুলিশ লাঠিপেটা করে।

আমাদের নারায়নগঞ্জ প্রতিনিধি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য নারায়ণগঞ্জে সড়কে দাঁড়ানোর চেষ্টার সময় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান ও সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদসহ বিএনপির ৫ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাদের আটক করা হয় বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার ময়নুল হক।

প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নেতাকরর্মীদের নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি নেতা সাখাওয়াত। এ সময় পুলিশ সেখান থেকে সাখাওয়াতসহ ৪ জনকে আটক করে।

অন্যদিকে নজরুল ও নেতাকর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ নজরুলকে আটক করেছে বলে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

খালেদা জিয়া যে সড়ক দিয়ে সিলেট যাওয়ার কথা রয়েছে নিরাপত্তায় জন্য সেখানে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের মোতয়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা ময়নুল।

অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সিলেট আগমনের আগে জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের ৩৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

রোববার সকাল থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলা পুলিশের বিভিন্ন থানা এলাকা হতে ২৮জন এবং মহানগর পুলিশের ৬ থানা এলাকায় ৯জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।

সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল ইসলাম সরদার এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বিশ্বনাথ ও কানাইঘাট উপজেলায় চারজন করে আটজন, গোলাপগঞ্জে ৫ জন, ওসমানীনগর, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, বালাগঞ্জে তিন জন করে ১২জন, বিয়ানীবাজারে ২ জন ও ফেঞ্চুগঞ্জে একজনকে আটক করা হয়েছে।

আটককৃতরা বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মী। এছাড়া মহানগরীর ৬ থানা এলাকায় রাতভর অভিযান চালিয়ে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৯ জনকে আটক করা হয়েছে।

এদের মধ্যে কয়েকজনের নামে পৃথক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুহম্মদ আব্দুল ওয়াহাব।

প্রসঙ্গত, সোমবার সিলেটে রাত্রিযাপন শেষে পরের দিন মঙ্গলবার সড়কপথেই ঢাকায় ফিরবেন খালেদা জিয়া।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে সামনে রেখে সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরাণের (র.) মাজার শরীফ জিয়ারত করতে আসেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

মামলার রায়কে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশেই বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় ও বাসায় বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin