আলোচিত ‘হাওয়া ভবনে’র মালিক এখন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ট্রেজারার

৯৬ সালের ২৩ জুন থেকে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় প্রধান বিরোধী দলে ছিল বিএনপি। ফলে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের নির্বাচনী কৌশল এবং প্রচার প্রচারণার পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য একটি পৃথক অফিস নেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

সেই লক্ষ্যেই ১৯৯৯ সালে বনানীতে ১৩ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়িটি ভাড়া নেয়া হয়। ভাড়া নিয়ে এই বাড়িটি ব্যবহৃত হচ্ছিলো বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে। বিএনপি‘র দলীয় প্রধান কার্যালয় রাজধানীর নয়া পল্টনে। যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অধিকাংশ গনতান্ত্রিক দেশে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি দলের প্রধানের জন্য কিংবা দলের অনেক নীতিনির্ধারনী বিষয়ে কাজ করার জন্য পৃথক কার্যালয় থাকে।

একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপিও তাই এমন একটি পৃথক কার্যালয় ভাড়া নেয়। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় “হাওয়া ভবনে“ বসেই বিএনপির তরুণ ও জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমান ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করেছিলেন। তারেক রহমানের সুদক্ষ পরিকল্পনায় ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অভুতপূর্ব সাফল্য পায় বিএনপি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরিচালিত নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৯৩টি আসনে জয়লাভ করে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ পায় মাত্র ৬২টি আসন। ফলে প্রমাণিত হয়, দলের স্বার্থে গবেষণা ও পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য এ ধরণের একটি আলাদা অফিস নিয়ে কিছু কৌশলগত কার্যক্রম প্রণয়ন ও পরিচালনা ছিল দলের তরুণ নেতা তারেক রহমানের দূরদর্শী রাজনৈতিক চিন্তারই বহি:প্রকাশ।

তাঁর এই দূরদর্শী রাজনৈতিক চিন্তা বাধাগ্রস্থ করতেই শেখ হাসিনা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা তারেক রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের পথ বেঁচে নিয়েছেন। সেই অপপ্রচারের সঙ্গে সুর মেলায় দেশের সকল আওয়ামীপন্থী সব গনমাধ্যম। সেইসব অপপ্রচার এখনো অব্যাহত রয়েছে। অথচ ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন সরকারের দুই বছর এবং শেখ হাসিনার ক্ষমতা দখলের নয় বছর মোট এগারো বছরেও “তারেক রহমান“ কিংবা “হাওয়া ভবনের“ বিরুদ্ধে একটি দূর্নীতিরও বিশ্বাসযোগ্য ও সুনির্দ্দিষ্ট প্রমান ক্ষমতাসীন মঈন কিংবা শেখ হাসিনা প্রমান করতে পারেনি।

২০০৭ সালে মঈন-ফখরুদ্দিন চক্র তারেক রহমানকে অকারণ গ্রেফতারের পর বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। তারেক রহমানকে ফাঁসানোর জন্য হাওয়া ভবনে সেনা র‌্যাব পুলিশ যৌথ তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তারা পায় , শত শত ডকুমেন্টস, ফাইল এবং সিডি যার সবই ছিল বাংলাদেশের সকল জেলা, উপজেলা এবং গ্রামভিত্তিক প্রণয়ন করা তারেক রহমানের উন্নয়ন পরিকল্পনা।

আরো ছিল, সারা বাংলাদেশে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের সুপারিশের আলোকে প্রণীত প্রতিটি এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন কার্যক্রমের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সুপারিশ। ফলে হাওয়া ভবনকে ব্যবহার করে তারেক রহমানকে ফাঁসানোর জন্য মঈন ক্যু আহমেদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। তবে ‘হাওয়া ভবন’ থেকে নেয়া সেইসব ডকুমেন্টস এবং ফাইলগুলো তারা এখনো ফেরত দেয়নি।

বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক দলগুলোর আদলে একটি দল পরিচালনার পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়নে যেভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হয়, ১৯৯৯ সালে আলাদাভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয় নিয়ে সেভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন তারেক রহমান। বিএনপি এর সুফল পেতে শুরু করেছিল। সারাদেশের তৃণমূল জনগোষ্ঠীর কাছে তারেক রহমান তাদের নির্ভরতার প্রতীককে পরিণত হয়েছেন।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ছিল “টেকসই গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন তৃণমূল জনগণের ক্ষমতায়ন” । তারেক রহমান মনে করেন, তৃণমূল জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও পলিসিতে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর ‘স্বার্থ ও চিন্তা’র প্রতিপলন অত্যাবশ্যক। এ লক্ষ্যেই তারেক রহমান সারাদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন, তৃণমূলের জনগণের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের ভাবনা চিন্তার আলোকে বিএনপির আগামীদিনের রাজনীতির পরিকল্পনা সাজিয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনে দলের ভবিষ্যৎ পলিসি ও পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়নে কাজ হতো। জনগণকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য স্বেচ্ছাশ্রম ও স্ব-উদ্যোগে কাজ করার জন্য উদ্দীপনামূলক প্রকল্প নেয়া হতো। এইসব উদ্দীপনামূলক কাজের শ্লোগান ছিল “একটি উদ্যোগ একটু চেষ্টা এনে দেবে স্বচ্ছলতা, আনবে দেশে স্বনির্ভরতা” । গবেষণার নামে “হাওয়া ভবন” আওয়ামী দলীয় গবেষণা কেন্দ্র ‘সিআইএ’র মতো সরকারের সঙ্গে কোনো ব্যবসা প্রকল্প গ্রহণ করেনি।

[পাদটীকা : বনানীতে আলোচিত হাওয়া ভবনের মালিক হলেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশেক আহমদ আসুক। তিনি তার স্ত্রী হাওয়ারুন বিবির নামে এই ভবনের নামকরণ করেছিলেন “হাওয়া ভবন”। শেখ হাসিনা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা তারেক রহমান এবং হাওয়া ভবনের কার্যক্রম নিয়ে বছরের পর বছর ধরে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তবে ভাগ্যবান হাওয়া ভবনের মালিক আশেক আহমদ আসুক। তিনি রয়েছেন শেখ হাসিনার পছন্দের তালিকায়। ২০১০ সালের জানুয়ারী মাসে শেখ হাসিনা লন্ডন সফরকালে ২৯ জানুয়ারী তিনি নিজেই যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন। ওইদিন সংগঠনের কাউন্সিল শেষে সন্ধ্যায় কমিটির সভাপতি, সহ সভাপতি,সাধারণ সম্পাদক, সহ সাধারণ সম্পাদক এবং ট্রেজারারসহ গুরুত্বপূর্ণ ৮/৯টি পদে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নাম শেখ হাসিনা নিজ হাতে একটি কাগজে লিখে দেন ।

ওই কমিটিতে ট্রেজারার পদে হাওয়া ভবনের মালিক আশেক আহমেদ আশুকে’র নাম শেখ হাসিনা নিজেই লিখেন। সেই কমিটিই এখনো দায়িত্ব পালন করছে এবং আশেক আহমেদ আসুক এখনো যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ট্রেজারার]।

ডেইলিবিডিটাইমস

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin